ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের ৭২ হাজার ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে রাখে। ফলে ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা এক প্রকার জিম্মি হয়ে থাকে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হাতে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার জনগণের তথ্য ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ফেসবুকের বিকল্প দেশীয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘যোগাযোগ’ চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
‘যোগাযোগ’ চালু এবং এমন উদ্যোগের সার্বিক বিষয় নিয়ে গত শনিবার নিউজবাংলাকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এতে ‘বিকল্প ফেসবুকের’ পাশাপাশি ‘পিপীলিকা’র মতো দেশি সার্চ ইঞ্জিন কেন সফল হয়নি এবং কী কারণে টিকা নিবন্ধনের পরও মিলছে না তারিখ- এসব বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন মন্ত্রী।
তরুণ রাজনীতিবিদ জুনাইদ আহমেদ পলক ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোরের সিংড়া উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দেশের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ।
২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ডাক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তরুণ এই রাজনীতিবিদ।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজবাংলার নিজস্ব প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন: হঠাৎ কেন নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘যোগাযোগ’ চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে?
জুনাইদ আহমেদ পলক: অনলাইন জগতে আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে ফেসবুক, ইউটিউব এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো বিকল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আমাদের লক্ষ্য, নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরি করা। ফেসবুকের বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলা হবে ‘যোগাযোগ’কে। তখন আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না।
ফেসবুক আমাদের ৭২ হাজার ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তাদের ডেটাবেজে রেকর্ড করে রেখেছে। ফলে আমাদের নাগরিক, রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। সে জন্য আমরা বলছি, আমাদের নিজস্ব সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থাকলে আমাদের তথ্যগুলো নিজ দেশে নিরাপদ থাকবে।
আর এমন উদ্যোগ নেয়ার বাণিজ্যিক কারণ হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন। আমাদের দেশের মধ্যেই ইউজারের কাছে পণ্য পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ফেসবুক। এতে বিদেশে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আমাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থাকলে সেখানে বিজ্ঞাপন দিলে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে, বিজ্ঞাপনের টাকা দেশের মধ্যেই রাখতে পারব। বিদেশে অর্থ চলে যাবে না।
প্রশ্ন: এর আগে ‘পিপীলিকা’ নামে একটি দেশি সার্চ ইঞ্জিন চালু হলেও সেটি হালে পানি পায়নি। তাহলে নতুন উদ্যোগ কি সফল হবে?
জুনাইদ আহমেদ পলক: ‘পিপীলিকা’ ছিল একটা ইনোভেশন প্রোডাক্ট। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব ছিল। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তর থেকে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের (এটুআই) মাধ্যমে ফান্ড দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তারা চেষ্টা করেছে, ডেভেলপ করেছে। ভবিষ্যতে আরও অনেকেই এমন চেষ্টা করতে পারে।
একসময় পৃথিবীতে ‘ইয়াহু’, ‘বিং’ নামকরা ও জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ছিল। কিন্তু এখনকার প্রজন্মের অনেকে এসবের নামই জানে না। প্রযুক্তির দুনিয়ায় এমন অসংখ্য ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট আসবে, হারিয়ে যাবে, নতুন আসবে। আমাদের কাজ হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে যেকোনো উদ্যোগে সহযোগিতা করা। কারণ সিলিকন ভ্যালির যে সংস্কৃতি, তাতে দেখা যায়, গত ৬০-৭০ বছরে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৯০ শতাংশ প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রোডাক্ট ফেইল করে, ১০ শতাংশ কেবল সাকসেস (সফল) হয়। কিন্তু ১০ শতাংশের যে সফলতা, তা ব্যর্থ হওয়া ৯০ শতাংশের ক্ষতির পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায়।
আমাদের কেবল তো ১২ বছরের ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচলা। আমাদের যে ইনোভেশান কালচার বা স্টার্ট-আপ কালচার, তা তো মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের। আশা করছি, আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে একটা ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে উঠবে, কালচার গড়ে উঠবে। হাজারো ‘পিপীলিকা’ হয়তো আসবে, তার মধ্যে ১০টা বা ২০টা উদ্যোগ বাকিগুলোর ব্যর্থতার যে ক্ষতি তা অনেক গুণ পুষিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
প্রশ্ন: কী কারণে টিকা নিবন্ধনের পরও মিলছে না তারিখ?
জুনাইদ আহমেদ পলক: সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধনের পার্টটা আমাদের। তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আমাদের। এসএমএস পাঠানোর দায়িত্ব সারা দেশের ৬৭৬টি টিকাকেন্দ্রের এবং কেন্দ্রে যারা চিকিৎসক রয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের। তারা পর্যালোচনা করেন কোন কেন্দ্রের নামে কত হাজার লোক নিবন্ধন করেছে এবং কাদের টিকা দেয়ার জন্য এসএমএস পাঠানো হবে। সেই অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে তালিকা ঠিক করে এসএমএস পাঠানো হয়।
প্রশ্ন: টিকা নিবন্ধনের বয়সসীমা ১৮ বছরে নামিয়ে আনা হবে কবে?
জুনাইদ আহমেদ পলক: আমাদের টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি অনুসারে এটা আগামী ৮ আগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি বলে এটা ৭ তারিখ বা ৬ তারিখ, তাহলে আমরা ৬ তারিখের মধ্যে চালু করতে পারব।