বিরোধের জেরে ব্যক্তিগত আক্রোশে ফেসবুকে অবমাননাকর স্ট্যাটাস দেন তামান্না বেগম নামে এক নারী। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ঠুকে দেন বরগুনা সদর উপজেলার লতাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ডলি আক্তার।
এই মামলায় স্ট্যাটাসদানকারী তামান্না বেগম ও তার স্বামী গ্রামীণ ব্যাংকের বরগুনার আমতলী শাখার কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করেন তারা। ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে পাল্টা স্ট্যাটাস দেয়ার শর্তে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন দেয়।
এ সময় আদালত বলেছে, ‘ফেসবুকে অবমাননাকর পোস্ট দেয়া জঘন্য অপরাধ। ফেসবুকে যেটা লিখেছেন, সেটা একজন মানুষকে গুলি করে খুন করার চেয়ে বড় অপরাধ।’
আসামিদের দুটি ছোট সন্তান আছে- এই বিবেচনায় আদালত জামিন দেয়।
আদালতে জামিন আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিয়ন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
তুষার কান্তি রায় নিউজবাংলাকে জানান, আসামিরা মুক্তি পেলে বাদীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে পৃথক স্ট্যাটাস দেবেন বলে আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ থাকবে যে, আগের স্ট্যাটাসটি ছিল মিথ্যা। সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যই আগে মিথ্যা স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছিল। এ জন্য তারা ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আর এরকম কোনো অপরাধ করবেন না।
মামলার শুনানিতে আসামিপক্ষে আইনজীবী সগীর হোসেন লিয়ন বলেন, ‘এক নম্বর আসামি অনুতপ্ত। ভুল করে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ফেলেছে। জামিন চাচ্ছি।’
এ সময় বিচারক বলেন, ‘ফেসবুকে যেটা লিখেছেন, সেটা একজন মানুষকে গুলি করে খুন করার চেয়ে বড় অপরাধ। একজন মানুষকে সামাজিকভাবে হেয় করা কি যেনতেন কথা!’
আইনজীবী বলেন, যার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জামিন আবেদনকারীরা।
বিচারক বলেন, ‘আপনি এখন এসে বলছেন যে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এখন ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাইলে হবে? আপনি তো সারা দুনিয়ার মানুষের সামনে তাদের হেয় করলেন। আপনি যার সম্পর্কে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তার সন্তানের সামনে তারা মুখ দেখাবেন কী করে?’
আদালত আরও বলে, ‘মানুষের সামনে কোনো একজন ব্যক্তিকে রাস্তায় লাথি মারলেন, এরপর গোপনে এসে তার পা ধরে মাফ চাইলে কি হবে? এ ঘটনাও তেমনি। আপনি মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে যেমন তাদের সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে হেয় করেছেন, তেমনি আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানাবেন যে, আপনি মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।’
আদালত আসামিপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘লিখিতভাবে আদেশে দিচ্ছি না। তবে আপনি পৃথক স্ট্যাটাস দেয়াটা নিশ্চিত করবেন।’
জবাবে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘মুক্তির পর ক্ষমা চেয়ে পৃথক স্ট্যাটাস দেব।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, মামলার বাদীর স্বামী ও আসামি আকতারুজ্জামান উভয়েই গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা। দুজনই বরগুনা সদরের রায়তা শাখায় কর্মরত ছিলেন। আসামি আখতারুজ্জামান সেখান থেকে বদলি হয়ে এখন আমতলী শাখায় দায়িত্বরত। মো. আকতারুজ্জামানের সহকর্মীর স্ত্রী (মামলার বাদী) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। উভয় পরিবারের বিরোধের জের ধরে মো. আকতারুজ্জামানের স্ত্রী তামান্না বেগম স্কুলশিক্ষিকার বিরুদ্ধে গত ১৩ মে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকা বাদী হয়ে আকতারুজ্জামান ও তার স্ত্রী তামান্না বেগমকে আসামি করে গত ৪ জুন বরগুনা সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এ মামলার পর ওই দিনই পুলিশ আকতারুজ্জামান ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে তারা কারাবন্দি। এ অবস্থায় ওই দম্পতি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।