করোনাভাইরাস মহামারিতে বন্ধ স্কুল। তবে অনলাইনে হচ্ছে ক্লাস। একটা স্মার্টফোন না থাকায় সেই ক্লাসও করতে পারছিল না ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের জামশেদপুরের ১১ বছরের শিশু তুলসী কুমারী। তার স্বপ্নই ছিল একটি স্মার্টফোন কেনার।
তুলশি কুমারী স্মার্টফোন কেনার যুদ্ধে রাস্তার পাশে আম বিক্রির জন্য দাঁড়ায়। সেটিও খুব বেশি না, মাত্র এক ডজন আম।
ঘটনাটি জানার পর স্থানীয় এক সাংবাদিক তুলসীর ছবি ও তার স্মার্টফোনের চাহিদার বিষয়টি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্মার্টফোন কিনতে তুলসীর এই সংগ্রামের কথা জানতে পারেন মুম্বাইয়ের ব্যবসায়ী আমেয়া হেতে। তিনি তুলসীর কাছ থেকে আম কেনার কথা জানান এবং ১২টি আম প্রতিটি ১০ হাজার রুপিতে কিনে নেন।
তুলসী কুমারী সংবাদমাধ্যম এএনআইকে বলে, করোনা রোধে চলা লকডাউনে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। তার পরিবারের সামর্থ্য ছিল না একটি স্মার্টফোন কিনে তাকে অনলাইনে ক্লাস করতে দিতে।
তুলসী বলে, ‘আমি একটি স্মার্টফোন কিনতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু আমাদের যা আয় হয় তা রেশন কিনতেই শেষ হয়ে যায়। তারপর একজন ‘স্যার’ আমার কাছ থেকে ১২টি আম কিনেছেন প্রতিটি ১০ হাজার রুপিতে। তিনি এর পাশাপাশি একটি ফোনও কিনে দিয়েছেন।’
এমন ঘটনার পর তুলসীর মা পদ্মিনী দেবী বলেন, তার মেয়ে তুলসী পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তার অনলাইনে ক্লাসের জন্য একটি স্মার্টফোন দরকার ছিল।
পদ্মিনী বলেন, ‘তার স্মার্টফোনের প্রয়োজন ছিল। এ জন্য লকডাউনের মধ্যে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আম বিক্রি করছিল। মুম্বাইয়ের এক ব্যবসায়ী তার সম্পর্কে জানতে পারেন, এরপর তিনি তুলসীর স্বপ্নপূরণে ও জীবনে যেন সে কিছু করতে পারে এ জন্য আম কিনে নেন।’
ব্যবসায়ী হেতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তুলসীর মা বলেন, ‘আমরা তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। প্রতিটি আম ১০ হাজার রুপিতে কিনে নিয়েছেন। সেই অর্থ দিয়ে আমরা তুলসীর জন্য স্মার্টফোন ও পড়াশোনার অন্য জিনিসপত্র কিনেছি।’
ব্যবসায়ী হেতে বলেন, ‘আমি যখন তুলসীর গল্পটি শুনলাম আমার খুব খারাপ লাগে। এমন শিশু যে কিনা জন্মের পর থেকেই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে পড়াশোনার জন্য। আমাকে যেটা অবাক করেছে তা হলো, তুলসী তার সংগ্রাম থেকে সরে না গিয়ে স্বপ্নপূরণে কাজ করছিল।’