অপপ্রচার, বিজ্ঞাপনের অর্থ লেনদেনসহ নানা বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ইউটিউব ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগযোগমাধ্যমগুলোকে নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে আইনের আওতায় আনতে চায় সরকার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলার বাধ্যবাধকতাও আরোপ করা হচ্ছে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘গুগল এবং অ্যামাজন ইতিমধ্যে তারা ভ্যাটের আওতায় এসেছে। রেজিস্ট্রেশন করেছে। আমরা চাই, অন্য যারা করেনি সেগুলো আইনের আওতায় রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসুক।’
‘আমরা চাই, ফেসবুক, ইউটিউব নিবন্ধনের আওতায় আসুক। যাতে আমরা তাদের ধরতে পারি। কে কোথা থেকে কী করে, তার কিছুই পাওয়া যায় না। একজনের কারণে পাঁচজন সমালোচিত হয়, পাঁচজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
সরকার সবার জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে যেমন অনেকেই ভালো কাজ করছেন, অল্পসংখ্যক আবার এমন সব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে মিথ্যাচার করেন, যা সকলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্যই হুমকিস্বরূপ।
‘এ জন্য আমরা বলেছি সবাই যেন রেজিস্ট্রেশন করে। আইনের আওতায় আসুক। তারা তাদের স্বাধীনমতো কাজ করুক। সংবাদ আদান-প্রদানে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপই সরকার করবে না।’
তবে অপরাধ করলে কাউকে ছাড় নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যিনি অপরাধ করবেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদের সাফারিংস থাকবে না। সেই হিসেবে আমরা বলেছি, আমাদের বিটিআরসির চেয়ারম্যান সাহেবকে নির্দেশনা দিয়েছি।
‘একইভাবে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককেও নির্দেশনা দিয়েছি, (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) যারা বিজ্ঞাপন দেয়, তারা টাকাটা কীভাবে দেয়। বাংলাদেশে যারা আছে, তাদের হিসাবটা পাওয়া যাবে। কিন্তু বিদেশে যারা বিজ্ঞাপন দেয়, যাদের রেজিস্ট্রেশন নাই… আর বিনা পয়সায় তো কেউ বিজ্ঞাপন প্রচার করে না। করলে তো সবারটা করত। তারা কারা যেসব কোম্পানি বিজ্ঞাপন দেয়, ওনারা কীভাবে দেয়- সেই তথ্য আগামী সভায় উপস্থাপন করতে হবে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা কীভাবে অর্থ পরিশোধ করে সেই তথ্যও খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যাদের বিজ্ঞাপন যায়, কীভাবে যায় এবং বিজ্ঞাপনের টাকা সেই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে পেমেন্ট করে; সেটা কি লিগ্যালি করে, নাকি ইলিগ্যালি করে, ব্যাংকের মাধ্যমে যায়, নাকি হুন্ডির মাধ্যমে যায়- সেটা আমরা জানতে চেয়েছি। পরবর্তী সভায় সেই তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংককে সেই নির্দেশনা দিয়েছি।’
দেশে এসব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের একটা অফিস থাকাও দরকার বলে মনে করছে সরকার।
এ ব্যাপারে আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘ইউটিউব, গুগল এসবের অফিস আমাদের এখানে না থাকার কারণে আমার মনে হয় অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। আমাদের দেশে এত বেশি কাস্টমার, এগুলোর ব্যবহারকারী ফলে এখানে অফিস থাকা খুবই লাভজনক হবে। তারা যদি এই কথা না শোনে, তাহলে পরবর্তীতে আমরা ভেবে দেখব কী ব্যবস্থা নেয়া যায়। তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ অব্যাহত থাকবে। ভারতে তাদের অফিস আছে। অনুরূপভাবে বাংলাদেশেও যাতে তাদের অফিস থাকে। যাতে কোনো অন্যায় হলে আমরা বলতে পারি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই সবাই আইনের মধ্যে থাকুক। কারও ওপর আইনের অপপ্রয়োগ আমরা চাই না। আমরাও কারও দ্বারা আইনের অপপ্রয়োগের শিকার হতে চাই না।’
বিদেশে পণ্য পাঠাতে প্রেরকের এনআইডি লাগবে
বিদেশে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রেরকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংযুক্ত থাকতে হবে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘কারণ অনেক ক্ষেত্রে কে পার্সেল পাঠাল তাকে আর পাওয়া যায় না। সেটার মধ্যে কোনো অবৈধ জিনিস থাকতে পারে। পার্সেল বিমানবন্দরে স্ক্যানিং হবে এবং কে পাঠাল তার পূর্ণ ঠিকানা থাকতে হবে।’
যারা পণ্য পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই যেখান থেকে পার্সেল পাঠানো হবে, পোস্ট অফিস হলে এনআইডির ছবি নিশ্চিত করে পার্সেল অ্যাকসেপ্ট করবেন। যাতে করে কোনো অবৈধ জিনিস থাকলে স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ে। যাতে তাকে আমরা আইনের আওতায় আনতে পারি। পরে দেখা যাবে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’