বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিএনপিতে ভাঙনের আতঙ্ক

  •    
  • ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ২১:১৬

সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মতো দল ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে বলে সন্দেহ শীর্ষ নেতাদের। দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়ার পাশাপাশি নেতা-কর্মীদেরকে শরিক দলের কয়েক নেতার বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপিতে যে ভাঙন ধরেছিল, আবারও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত দলের শীর্ষ নেতারা৷ বেশ কয়েকদিন ধরেই দলটির কিছু নেতাকর্মীর উপর নজরদারি চলছে। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশ কয়েকজনের গতিবিধিকেও সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি।

এরই মধ্যে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে দুই জ্যেষ্ঠ নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাই-কমান্ডের সন্দেহ, দলে কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছেন। দল ভাঙার চেষ্টা করছেন। আলটিমেটলি দলকে বিপদে ফেলতে চাচ্ছেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘হাফিজ উদ্দিন আর শওকত মাহমুদের আচরণে দল অস্বস্তিতে আছে। তাই তাদের শোকজ করার মাধ্যমে অন্যদেরও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে৷’তিনি বলেন, ‘এখন তারা যদি পজেটিভ আচরণ করে ভালো। নয়ত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলকে বিব্রত করলে সেই বিষয় নিয়ে হাইকমান্ড অলঅয়েজ কঠোর ভূমিকায় থাকবে।’

এই দুই নেতার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের বাইরে গিয়ে কোনো আচরণ বরদাস্ত করা যাবে না। সেটা করলে সেভাবেই হ্যান্ডেল করা হবে।

আরও পড়ুন: ঐক্যফ্রন্ট কি ভেঙে গেছে

‘তবে দুই এক জনের ছন্নছাড়া আচরণে দলে কোনো প্রভাব পড়বে না।’ গত সোমবার বিএনপির কেন্দ্রের অনুমতি না গিয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় হঠাৎ করেই সরকার পতনের ডাক দিয়ে বিক্ষোভ হয়। সেখানে বিএনপির পাশাপাশি শরিক জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের একাংশের নেতা-কর্মীরা ছিলেন।

গত সোমবার রাজধানীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় সরকার পতনের ডাক দিয়ে বিক্ষোভ হয় বিএনপির নামে। তবে দলের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত ছিল না।

ওই বিক্ষোভে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে ছিলেন সহসভাপতি শওকত মাহমুদ ও বিএনপি জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম।সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ছিলেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়া। বিক্ষোভে না থাকলেও অদূরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ছিলেন বিএনপির সহসভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, যিনি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপির ‘সংস্কারপন্থি’ অংশের নেতা ছিলেন। তখন তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে এগিয়ে নেয়ার পক্ষে ছিলেন। সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর দলের মূল ধারায় আবার ফেরেন হাফিজ।এই মুহূর্তে বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। অথচ কেন এবং কারা এই ধরনের বিক্ষোভের আয়োজন করেছেন, তা জানতে চাইছে দল।

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের বিশেষ বিবেচনায় এখন জেলের বাইরে। এই সময়ে আন্দোলনে নেমে সরকারের বিরাগভাজন হতে চাইছে না বিএনপি।তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির করা জোট ঐক্যফ্রন্টের নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বারবার বিএনপিকে আন্দোলনে নামার তাগাদা দিচ্ছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিও তুলেছেন। যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাধিকবার জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তারা তুলছেন না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গঠন করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো কোনো নেতাকে নিয়ে বিএনপি এখন সন্দিহান

ওই বিক্ষোভে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের অনেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাফরুল্লার অংশগ্রহণে একটি আলোচনা সভাতে ছিলেন। এই সভা শেষে তারা যুক্ত হন বিক্ষোভে।সভায় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাও ছিলেন। তিনিও ইদানীং সরকার পতনের আন্দোলনের ওপর জোর দিচ্ছেন।বিএনপি নেতারা আশঙ্কা করছেন, তাদের জোটের কেউ কেউ বিএনপির শক্তি ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছেন। জোটের নেতাদের বিষয়েও নেতা-কর্মীদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিএনপির একাধিক নেতা নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন, ওই বিক্ষোভের কথা জানতে পেরে, সঙ্গে সঙ্গে সেখানে লোক পাঠিয়ে সবাইকে সরে যেতে বলা হয়েছে। এমনকি লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও উদ্বিগ্ন হয়েছেন। কারা এসব করছেন, সেটা খতিয়ে দেখতে বলেছেন।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো কর্মসূচি দেইনি৷ জানিও না আমরা। দল থেকে এমন কোনো ইঙ্গিতও আসেনি। যারা সেখানে গেছেন, তারা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে গেছেন। তারা যদি বিএনপির নাম ব্যবহার করে দলকে বিব্রত করতে চায়, নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। সেটা অন্য আলাপ।’কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া বিএনপির সহসভাপতি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটু আগে চিঠি পেয়েছি। চিঠির জবার দিয়ে তখন মিডিয়াকে বলব। এর আগে বলছি না।’

বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে গত ১৪ ডিসেম্বর দুই নেতা হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছে

দলে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারা আপনাকে ঘিরে সন্দেহ করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি বলছি যে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জবাব দেব৷ এখন ব্যাখ্যা দেব না।’ দল থেকে পদত্যাগের কথা ভাবছেন কি না- এমন প্রশ্নে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘তিন/চারদিন পর সংবাদ সম্মেলন করে জানাব সব।’কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া আরেক নেতা শওকত মাহমুদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি৷

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে সে সময়ের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া দলে আলাদা কমিটি গঠনের চেষ্টায় ছিলেন। তারা পরিচিত হয়ে উঠেন সংস্কারপন্থি অংশ হিসেবে। তবে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে দুই বছরেও সফল হননি তারা। বরং মান্নান ভুঁইয়াসহ তার সহযোগীরা দল থেকে ছিটকে যান। যদিও ওই ঘটনা দলে স্থানীয় বিভেদ রেখা তৈরি করে দিয়েছে।

মান্নান ভুঁইয়ার অনুসারীদের বড় অংশই এক পর্যায়ে বিএনপিতে ফিরে এলেও দলে তাদের অবস্থান দুর্বল।

এ বিভাগের আরো খবর