বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জবি’র জায়গা দখল করে চলছে স্থাপনা নির্মাণ

  • প্রতিনিধি, জবি   
  • ১৩ জুলাই, ২০২৩ ১৯:১২

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে থাকা হলগুলোর মধ্যে বাংলাবাজারের ১ ঈশ্বর দাস লেনে ৩৫/৩৬ প্যারিদাস রোডে অবস্থিত বাণী ভবন একটি। এখানে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে বাণী ভবনের একপাশের জায়গা দখল করে দেয়াল তুলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বহুতল ভবণ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মালিকানাধীন বাণী ভবনের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দখলকৃত জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, এই দখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের মদদ দিচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্থানীয় কাউন্সিলর।

বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী বিলুপ্ত কলেজের সব স্থাবর-অবস্থার সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ এবং সম্পদের পরিসংখ্যান পত্র তৈরি করা হয়। পরিসংখ্যান পত্রে বিলুপ্ত জগন্নাথ কলেজের অধীনে ১২টি হল ও এর জায়গা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয়দের সঙ্গে আবাসিক হলগুলোতে অবস্থানরত ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর হলগুলোর অধিকাংশই বেদখল হয়ে যায়।

বেদখলকৃত সম্পত্তি উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণের পর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে তিনটি হল ও হলের জায়গা রয়েছে। এছাড়া ধুপখোলা মাঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ২০২১ সালে তা দখল করে নিয়ে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে থাকা হলগুলোর মধ্যে বাংলাবাজারের ১ ঈশ্বর দাস লেনে ৩৫/৩৬ প্যারিদাস রোডে অবস্থিত বাণী ভবন রয়েছে। বাণী ভবনে দীর্ঘদিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে বাণী ভবনের একপাশের জায়গা দখল করে দেয়াল তুলেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সেখানে এখন বহুতল ভবণ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাণী ভবনের সামনের অংশে টিনের বেড়া দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের তোড়জোর চলছে। এই ভবনের দেয়াল ঘেঁষে তোলা হচ্ছে নতুন বাউন্ডারি ওয়াল। দুই স্তরবিশিষ্ট বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলে জায়গা দখলে নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিং-এর কাজ চলছে। সেখানে শ্রমিকরা কাজ করছে। ফলে বাণী ভবনের দেয়াল ও ভবনের কিছু অংশ হেলে পড়েছে। কোথাও কোথাও দেবে গেছে, এমনকি ভেঙেও গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে প্রত্যক্ষভাবেই মদদ দিচ্ছেন ডিএসসিসির ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর এই দখলিদারিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তারও ইন্ধন রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে বাণী ভবনে বসবাসরত বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী জানান, অবৈধ দখলের এই কার্যক্রম চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। ৪-৫ বছর আগে ভবন ঘেঁষে দেয়াল তুলে সামনের জায়গা দখল করে নেয়া হয়। দখল করে নেয়া জায়গার সামনের অংশে একটি বেসরকারি কোম্পানির কাগজের দোকান ছিলো। তবে তা দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে ছিলো।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন জায়গা দখল করে এভাবে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হলেও টুঁ শব্দ নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। মৌজা ও খতিয়ানে পুরো জায়গাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি রক্ষায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন নীরব ভূমিকায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

নাহিদ হাসান নামে স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেসব সংরক্ষণ বা উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাণী ভবনের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুত বন্ধ করে জায়গা বুঝে নিতে হবে। আর সে উদ্যোগটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।’

স্নাতকে অধ্যয়নরত রতন মোল্লা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন-প্রভাবশালী ব্যক্তি সবারই নজর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির দিকে। আমাদের হল, খেলার মাঠ সব দখল হয়ে গেছে। এখন বাণী ভবনের জায়গাটাও দখল হয়ে যাচ্ছে।

‘অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও নির্বিকার। এই জায়গা উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সব দখলদারকে রুখে দিতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল হোসেন বলেন, ‘জায়গাটি আমি এর আগেও বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি আমি উপাচার্য মহোদয়কে অবহিত করেছি।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদারকির নির্দেশ দিয়েছি। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর