বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রুশ বিবৃতিতে তাদের বোধোদয় হবে: যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে তথ্যমন্ত্রী

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৭:১৮

‘সেসব দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়, তারাই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরেছে রুশ দূতাবাস। আমরা সবসময় এমন বিবৃতি দেখি না, তবে যারা ভিয়েনা কনভেনশন অমান্য করেন, তাদের বোধোদয় হওয়ার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।’

বাংলাদেশ নিয়ে রাশিয়ার অবস্থানের প্রশংসা করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ঢাকায় রুশ দূতাবাসের বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে, তাতে অনেকগুলো ভালো কথা রয়েছে।

বিশেষ করে অন্যের দেশে হস্তক্ষেপ না করতে বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে, তাতে বেশি খুশি হয়েছেন মন্ত্রী। বলেছেন, ভিয়েনা কনভেনশন অমান্য করে যারা অন্যের দেশে হস্তক্ষেপ করে, তাদের বোধোদয় হবে এখন।

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এসব কথা বলেন হাছান।

বাংলাদেশের বিষয়ে রুশ দূতাবাসের বিবৃতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি কূটনীতিকদের ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলা উচিত। রুশ দূতাবাস থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে, সেখানে অনেকগুলো কথা বলা হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত কিছু কিছু দেশ যখন সরকারকে চাপে রাখতে চেষ্টা করে, তখন তারা মানবাধিকারের ধুয়া তোলে। অর্থাৎ সরকারকে চাপে রাখতে মানবাধিকারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। রুশ বিবৃতিতে সেই কথাও এসেছে।’

হাছান বলেন, ‘সেসব দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়, তারাই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরেছে রুশ দূতাবাস। আমরা সবসময় এমন বিবৃতি দেখি না, তবে যারা ভিয়েনা কনভেনশন অমান্য করেন, তাদের বোধোদয় হওয়ার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।’

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু মন্তব্য ও পদক্ষেপে সম্প্রতি অসন্তোষ জানিয়েছে সরকার।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে। সেদিন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ৯ বছর আগে নিখোঁজ বিএনপি এক নেতার বাসায় যান।

সাজেদুল ইসলাম সুমন নামে সেই বিএনপি নেতা নিখোঁজ হন ২০১৩ সালের সহিংস আন্দোলনের সময়। তার বোন গড়ে তুলেছেন মায়ের ডাক নামে একটি সংগঠন। গত কয়েক বছর ধরে যাদের খোঁজ মিলছে না, তাদের স্বজনদের একত্র করে নানা কর্মসূচি পালন করছে এই সংগঠনটি।

পিটার হাস সুমনের বাসায় যাওয়ার পর সেখানে হাজির হয় ‘মায়ের কান্না’ নামে অন্য একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিএনপির প্রতিষ্ঠানা জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনের সময় ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীতে অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ঘটনার বিচার দাবি করছে এই সংগঠনটি।

মায়ের কান্নার সদস্যরা সেদিন পিটার হাসের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান, যাতে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়।

বিএনপির নিখোঁজ নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের শাহীনবাগের বাসায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তার সেখানে যাওয়া নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। ছবি: সংগৃহীত

তবে পিটার হাস সেই স্মারকলিপি নেননি এবং সেখানে অবস্থান সংক্ষিপ্ত করে তিনি যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান।

স্পষ্টত সরকার পিটার হাসের সেদিনের কর্মকাণ্ড পছন্দ করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের একাধিক বক্তব্যে সরকারের এই মনোভাব উঠে আসে।

তবে এই ঘটনায় ওয়াশিংটনে ঢাকার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে ডেকে কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বক্তব্যে বলা হয়েছে, তাদের পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রে থাকে মানবাধিকার।

সরকার সমর্থক পেশাজীবীরাও এরপর বিবৃতিতে অভিযোগ করে, মানবাধিকারের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতিতে পক্ষপাত দেখাচ্ছে।

এর মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকার রুশ দূতাবাস তাদের ফেসবুক পোস্টের এক বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘রাশিয়া অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের মতো যে দেশগুলো বিদেশি শক্তির নেতৃত্ব অনুসরণ না করে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতি গ্রহণ করে, সে দেশগুলোর প্রতি রাশিয়া পুরোপুরি সমর্থন জানায়।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ভিন্ন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা সম্পর্কিত ১৯৬৫ সালের জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসারে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক নীতির বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই। দুর্ভাগ্যবশত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে হস্তক্ষেপ না করার নীতি লঙ্ঘনের সমস্যাটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ অনেক দেশ বিশ্বাস করে, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে ওই নীতি লঙ্ঘন করতে পারে।

এই বিবৃতি কূটনৈতিক মহলে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন বৈদেশিক ঋণ প্রত্যাখ্যান করি। বাংলাদেশ এক সময় পরমুখাপেক্ষী ছিল। বাজেট প্রণয়নের জন্য বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। আমাদের অর্থমন্ত্রীকে প্যারিস কনসোর্টিয়ামের বৈঠকে ছুটে যেতে হতো। আমাদের বাজেটের বেশিরভাগ অংশ আসত অনুদান ও ঋণ থেকে। এখন পরিস্থিতি উল্টে গেছে। আমাদের ৯০ শতাংশ আমরা নিজেরা যোগান দিই। বাংলাদেশ এখন নিজের পায়ের দাঁড়িয়ে।

‘কাজেই যখন বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করেন, তখন তা আমাদের স্বাধীনতার স্বকীয়তার জন্য হস্তক্ষেপ হয়ে দাঁড়ায়। তবে যারা এই নাক গলান, তাদেরই দোষ দিচ্ছি না, বরং যারা ক্ষণে ক্ষণে বিদেশিদের কাছে ছুটে গিয়ে তাদের পদলেহন করেন, তারাও দায়ী। কেবল পদলেহনই না, তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। যারা এমনটা করেন, তারাই সত্যিকারের দোষী।’

এ বিভাগের আরো খবর