বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেটে বন্যায় ইটনা-মিঠামইন সড়কের দায় কতটুকু

  •    
  • ১৮ জুন, ২০২২ ২১:৩০

দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘যে রাস্তার কথা বলছেন, সেখানে কিন্তু বড় বড় কয়েকটি সেতু আছে পানি সরে যাওয়ার জন্য। ওই অঞ্চলে এখনও পানিই আসেনি। পানি সরে যাওয়ার তাই প্রশ্নও আসে না। সেখানে দুটি বড় নদীও আছে, সেদিক দিয়েও পানি সরে যেতে পারে।’

গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলের বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা। সরকারের হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশের ১০ জেলার ৬৪ উপজেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ২১টি জেলার নদীগুলোর পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বন্যায় তলিয়ে যেতে পারে দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চল।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কিশোরগঞ্জের হাওরে ইটনা-মিঠামইন সড়ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশের দাবি, এ সড়কটির কারণেই বন্যার পানি নেমে যেতে পারছে না। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা কেন?

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত তিন দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২ হাজার ৪৫৮ মিলিমিটার, যা সিলেটের সুরমা নদী হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরো বাংলাদেশে এক বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার। অর্থাৎ এ বছর এই অঞ্চলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা পুরো মৌসুমের বৃষ্টিপাতকে এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভারত থেকে ঢল আকারে নেমে আসা এই বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির পানি এবারের বন্যার মূল কারণ বলে মনে করছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

পূর্বাভাস কেন্দ্র বলেছে, এ মুহূর্তে দেশের ১১টি নদীর পানি ১৭টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে।

পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান বন্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে পরপর তিন দিনে প্রায় ২ হাজার ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যা উজানে নামছে, যেখানে আমাদের দেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার।

‘এত বেশি পানি বাংলাদেশের ভেতরে এসে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এবারের বন্যার এটাই মূল কারণ। এত অল্প সময়ে এত বৃষ্টি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টি বেশি হয়। বেশি বৃষ্টিপাতের মাস জুলাই এবং আগস্ট। মূল মাসের আগেই বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া পূর্বাভাস আছে, দেশের ভেতর ও বাইরে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার। যেহেতু জুলাই মাস আসন্ন, তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে।

‘মূল মৌসুম শুরুর আগেই আমরা এবার বন্যা দেখেছি। মে মাসে একটা বন্যা হয়েছে। এবারকার বন্যা তৃতীয়বারের মতো বন্যা। এত বড় বন্যার আঘাত আসলে সেটা সহ্য করা কঠিন। এ কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হচ্ছে।’

দেশের উত্তরাঞ্চলে যে বন্যা, তাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন এই কর্মকর্তা। আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘উত্তর অঞ্চলের বন্যা মৌসুমের স্বাভাবিক বন্যা। এখানে বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে না। উত্তর অঞ্চলের বন্যা সর্বোচ্চ অবস্থানে ওঠার পর পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে নেমে যাবে।

‘সর্বোচ্চ অবস্থানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করতে থাকবে। আগামী তিন-চার দিনে উত্তর অঞ্চলে পানি সর্বোচ্চ অবস্থানে যাবে। এরপর পানি নেমে যাবে। উত্তর অঞ্চলের বন্যায় টাঙ্গাইল পর্যন্ত প্লাবিত হবে।’

সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ইটনা, মিঠামইন সড়কের দায় আছে কি না জানতে চাইলে তা উড়িয়ে দেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে রাস্তার কথা বলছেন, সেখানে কিন্তু বড় বড় কয়েকটি সেতু আছে পানি সরে যাওয়ার জন্য। ওই অঞ্চলে এখনও পানিই আসেনি। পানি সরে যাওয়ার তাই প্রশ্নও আসে না। সেখানে দুটি বড় নদীও আছে, সেদিক দিয়েও পানি সরে যেতে পারে।

‘পানিটা এসেছে সিলেটের সুরমা নদীতে, কুশিয়ারাতেও এখনও পানি আসেনি। চেরাপুঞ্জি থেকে যে পানিটা আসে সেটা সাধারণত ফ্ল্যাশ ফ্লাড হয়। গত মাসের ১৬-১৭ তারিখে পানিটা বেড়েছিল, সেটি কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্য কমে এসেছিল। এবারও সেটি আশা করি কমে যাবে। এই পানি মেঘনা দিয়ে চলে যাবে।’

বন্যা নিয়ন্ত্রণে কী করছে সরকার?

দেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি জানান, ‘প্রতি মনসুনে উজান থেকে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন টন পলি ওপর থেকে নিচে নেমে আসে। এই যে পলি আসছে, এতে আমাদের নদীর নাব্য ঠিক থাকে না। তলদেশ উঁচু হয়ে যায়। এতে পানির ধারণক্ষমতা কমে যায়।

‘ফলে বর্ষায় যখন প্রচুর পানি আসে, তখন সেটি বিভিন্ন দিকে ছুটে বের হয়ে যায়। এর ফলে নদীর পাড় আর ধরে রাখতে পারে না। আমাদের পক্ষে তো পুরো দেশের নদীর পাড় ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরি সম্ভব না। এটা অনেক ব্যয়বহুল। স্থানভেদে প্রতি মিটারের জন্য লাগবে ১০ লাখ টাকা। অনেক টাকার বিষয়। এত ব্যয় সরকারের পক্ষে করা সম্ভব হয় না।’

মাটির বাঁধ তৈরি করা হলেও তা স্থানীয়দের অবহেলায় পানি রোধ করতে পারে না বলেও জানান তিনি। জাহিদ ফারুক বলেন, ‘মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করে ঘাস লাগিয়ে বনায়ন করলে ভাঙনের পরিমাণটা কমে আসে। আমরা গাছ লাগালেও দেখা যায়, এসব এলাকায় যেহেতু গ্যাস নেই, কৃষকরা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা এই গাছ কেটেই তাদের রান্নাবান্না করে। তারপর ইটের ভাটায় কাঠটা এখান থেকে নিয়ে যায়।

‘আমাদের একটি ধারণা আছে যে সব দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে সব সামলে রাখা সম্ভব নয়। এখানে যদি সাধারণ মানুষ সহযোগিতা না করে, তাহলে কিন্তু এটা প্রতিরোধ সম্ভব হবে না।’

নদীর নাব্যতা ফেরাতে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর আওতায় খাল ও নদী খননের কাজ করা হচ্ছে বলে জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা ৬৪ জেলায় খাল খনন করছি। প্রথম পর্যায়ে ৬২৮টি ছোট নদী-খাল আমরা খনন করছি ড্রেজিং করে। এর ৭০ শতাংশ কাজ আমরা শেষ করতে পেরেছি।

‘দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ হাজার ৩৪টি ছোট নদী-খাল আমরা নিচ্ছি। উজান থেকে ১ হাজার ১২০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি আসে বর্ষা মৌসুমে। আর শুষ্ক মৌসুমে আসে ১৪৭ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। পলি মাটি ড্রেজিং করতে হয়। এটা অনেক ব্যয়বহুল প্রজেক্ট। এটা যদি আমরা মেইনটেইন করে রাখতে পারি, তাহলে পানি ওভারফ্লো হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো বড় যে নদীগুলো আছে, প্রস্থে ১০-১২ বা ১৫ কিলোমিটার, সেগুলোকে আমরা মেইনটেইন করতে পারি না। বেশির ভাগেই এখন চর পড়ে গেছে। আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি বড় নদীগুলোকে সাত-আট কিলোমিটারের মধ্যে নিয়ে আসব ম্যাক্সিমাম। এটাকে আমরা ড্রেজিং করব।

‘এই ড্রেজিং ম্যাটেরিয়ালটা দিয়ে বাকি যে জায়গাটা আছে দুপারে সেটা আমরা জমি রিক্লেইম করব। উঁচু করব। এটা ফসলের জন্য ব্যবহার করব। কিছু জায়গায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন করব। এর মধ্যে কিছু জায়গা থাকবে ফ্ল্যাড প্লেইন হিসেবে।’

এ বিভাগের আরো খবর