সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময়কে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সদ্য বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আকিবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনার ডুমুরিয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আকিব তালা সদরের মাঝিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ঘটনার পর তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তালা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অভিযান চালিয়ে আকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার বাকি চার আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তারের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রের বাবা আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল যেহেতু সরকার দলীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সেহেতু ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার আমি বিচার পাবো না। থানায় মামলা দিতে গেলে থানার মধ্যে সন্ত্রাসী আকিবের বাবা দালাল ইদ্রিস ও শাহপুর গ্রামের শাহিনুর রহমান আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল। বলছিল, উল্টো মামলা দিয়ে ফাঁসাবে, এতে আমি আতঙ্কিত ছিলাম।
‘ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সংবাদকর্মী ও প্রশাসন আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিয়ে বিচারের আশ্বাস দিয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে, বাকি আসামিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। যেন কোনো বাবাকে আর এমন দৃশ্য দেখতে না হয়।’
ঘটনার প্রেক্ষাপট
এর আগে জানা গিয়েছিল, ছাত্রলীগের নেতা আকিবের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি সেই সম্পর্কটি ভেঙে যায়। নতুন করে সম্পর্ক গড়ে ওঠে কলেজছাত্র তন্ময়ের সঙ্গে।
এ ঘটনায় তন্ময়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে তাকে ডেকে এনে মারপিট ও মাথা টাক করে দেন আকিব।
গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে তালা সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল তালা থানায় মামলা হয়।
নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় তালা সদরের জাতপুর গ্রামের শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। চলতি বছর তিনি জাতপুর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ আকিব, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের সৌমিত্র চক্রবর্তী, তালা গার্লস স্কুল এলাকার বাসিন্দা ছাত্রলীগকর্মী জে আর সুমন, তালার মহান্দি গ্রামের ছাত্রলীগকর্মী মো. জয় ও তালা সদরের ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ হাসান উৎস।
আরও পড়ুন : ছাত্রকে পিটিয়ে মাথা ন্যাড়া করা ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
তন্ময় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ হাসান উৎস আমার পূর্বপরিচিত। তালা বাজারে যাতায়াত সুবাদে তার সঙ্গে পরিচয়। রোববার দুপুরে আমাকে ফোন করে তালা কলেজ এলাকায় ডেকে নেয় উৎস। এরপর কলেজের পশ্চিম পাশের একটি রুমে নিয়ে যায়।
‘সেখানে টানা ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালায় আকিব, সৌমিত্র, সুমনসহ অন্যরা। হাত-পায়ে নির্মমভাবে মারপিট করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এরপর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। তারপর বাড়িতে ফোন করে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা।’
তন্ময়কে মারধরের কথা স্বীকার করেছিলেন ছাত্রলীগকর্মী জয়। তিনি বলেন, ‘তন্ময়কে ডেকে এনে মারপিটের কিছু ঘটনা ঘটেছে। পরে এ ঘটনা মিটমাটও হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, ছাত্রলীগের নেতা আকিবের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। নতুন করে মেয়েটির সম্পর্ক গড়ে ওঠে তন্ময়ের সঙ্গে। তন্ময়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে আকিব তাকে ডেকে এনে মারপিট করে ও মাথা টাক করে দেয়।