বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যাদের বিদেশি ঋণ বেশি, তারা বিপদে, বাংলাদেশ নয়: অর্থমন্ত্রী

  •    
  • ৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৬:৩৯

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বা পরিমাণ ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মাথাপিছু ঋণ দাঁড়ায় ২৯২ দশমিক ১১ ডলার। অন্যদিকে ২ কোটি মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কার বিদেশি ঋণের মোট পরিমাণ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬৫০ ডলার।

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কার কোনো কারণ থাকতে পারে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেন, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ তুলনামূলক কম। যাদের এই ঋণ বেশি, তাদের দুশ্চিন্তার কারণ থাকতে পারে।

বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী জানান, যেসব দেশের জিডিপির তুলনায় ঋণের হার বেশি তারা বিপদে আছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ঋণের হার জিডিপির তুলনায় সহনীয় অবস্থানে। কাজেই, আমরা বিপদে নেই বরং নিরাপদেই আছি।’

বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বা পরিমাণ ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ (৪৯.৪৫ বিলিয়ন) ডলার। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৩ লাখ। এই হিসাবে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হয় ২৯২ দশমিক ১১ ডলার।

অন্যদিকে ২ কোটি মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কার বিদেশি ঋণের মোট পরিমাণ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এই হিসাবে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬৫০ ডলার।

অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় শ্রীলঙ্কার জনগণের মাথাপিছু ঋণ সাড়ে পাঁচ গুণেরও বেশি। ২০১৪ সাল থেকেই ঋণের বোঝা বাড়তে শুরু করে কলম্বোর। ২০১৯ সালে বিদেশি ঋণ পৌঁছে যায় জিডিপির ৪২ দশমিক ৮ শতাংশে, বাংলাদেশে এটা ১৩ শতাংশেরও নিচে।

শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা হচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো আলোচনা করেনি। আলোচনা যে কেউ করতে পারে। তবে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের ঘটনা আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।‘

সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক এর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যন্স বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে। ফলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমি মনে করি, বাংলাদেশ নিরাপদেই আছে।’

পাঁচ দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কা টানা দ্বিতীয়বার অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তাদের বিদেশে ঋণ পরিশোধ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হচ্ছে, এমনকি কাগজের অভাবে স্কুলে পরীক্ষা বাতিল হয়েছে।

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সব মন্ত্রী।

দেশটির এই দশার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিরও একই পরিণতি হয় কি না, এ নিয়ে বলাবলি হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।

যদিও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনটি হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, শ্রীলঙ্কা যেসব ভুল করেছে বা তাদের অর্থনীতি যেসব ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সেসব ভুল নেই। এখানকার অর্থনীতির ভিত্তিও ভিন্ন।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবিও তাদের মূল্যায়ন প্রকাশ করে বলেছে যে, বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার পরিণতি হওয়ার কোনো কারণই নেই।

শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে করোনার কারণে পর্যটন খাত মুখ থুবড়ে পড়া। দেশটির জিডিপির ১০ শতাংশের বেশি আয় হতো এই খাত থেকেই। দুই বছর ধরেই প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে তা। এ ছাড়া করোনার সময় রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স কমে গেছে। অর্গানিক কৃষি চালু করতে গিয়ে উৎপাদন কমে গেছে।

এর মধ্যেও নানা মেগা প্রকল্পের জন্য নেয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে ভীষণ চাপে পড়েছে রিজার্ভ। এটি নেমে এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারে। চলতি বছর যে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, সে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও নেই দেশটির।

অন্যদিকে করোনায় বাংলাদেশের রিজার্ভ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানির গতি ঊর্ধ্বমুখী। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। পর্যটননির্ভরতা নেই বাংলাদেশের, অন্যদিকে বাংলাদেশের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না, এমন কোনো বক্তব্য অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা কখনও বলেননি।

বুধবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গ্রিনটিংও বলেন, বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। এ ছাড়া জিডিপির তুলনায় ঋণ-অনুপাত সহনীয় অবস্থানে আছে। সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই। শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশ তাই সংকটে পড়বে না।’

এ বিভাগের আরো খবর