বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পঞ্চগড় ও নবীনগরে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৬ জুলাই, ২০২৫ ২৩:৫৪

এক সময় গ্রাম বাংলার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল মৃৎশিল্প। প্রতিটি ঘরের দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হত মাটির তৈরি থালা-বাসন, হাঁড়ি-পাতিল, কলসি। বিভিন্ন উৎসবে, পার্বণে শোভা পেত নানা ধরনের মৃৎশিল্পের কারুকার্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিক উপাদানের সহজলভ্যতা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে বিলুপ্তির পথে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত;

মিজানুর রহমান, পঞ্চগড় থেকে জানান: পঞ্চগড়ের মালিপাড়া, কুমারপাড়া একসময় কর্মব্যস্ত থাকত। মাটি খুঁড়ে আনা, তা দিয়ে নানা আকার দেওয়া, রোদে শুকানো এবং আগুনে পোড়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকত পুরো গ্রাম। তৈরি হতো নানা ধরনের তৈজসপত্র, যা শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, যেত দূর-দূরান্তের মেলায়ও। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টেইনলেস স্টিলের পণ্যের দাপটে মাটির তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে গেছে।

মৃৎশিল্পী শ্রী পানেস্বর পাল জানান, মাটি সংগ্রহ করা এখন আগের মতো সহজ নয়। প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়েছে, কিন্তু আমাদের তৈরি পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। ফলে, অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য জীবিকা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। নতুন প্রজন্মও এই কঠিন পেশায় আসতে আগ্রহী নয়।

মালিপাড়ার আরেক বিক্রয়কর্মী বলেন, আগে প্রতিদিন ৭,০০০/৮,০০০ টাকার মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতাম। যা দিয়ে নিজেরা চলতাম পরিবার চালাতাম সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ চলতো, কিন্তু এখন ২,০০০/৩,০০০ টাকার ও কম বিক্রি হয়। যা দিয়ে চলা একেবারেই মুশকিল হয়ে পরেছে।

তিনি আরো বলেন, আগে আমাদের তৈরি মাটির হাঁড়ি-পাতিল, সানকি, কলসির খুব চাহিদা ছিল। এখন আর তেমন বিক্রি হয় না। মানুষ এখন প্লাস্টিকের জিনিস বেশি ব্যবহার করে। আমাদের যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃৎশিল্প শুধু একটি শিল্প নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা মৃৎশিল্পীদের প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা এবং তাদের তৈরি পণ্যের বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে পারে। ডিজাইনের আধুনিকীকরণ এবং নতুন প্রজন্মের আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমেও এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। আর যদি সময় মতো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে হয়তো খুব শিগগিরিই গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প কেবলই স্মৃতি হয়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জামাল হোসেন পান্না, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় এককালে মূৎশিল্পের সুনাম ছিল কিন্ত নানা প্রতিকূলতার বর্তমানে নবীনগরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিপন্ন হতে চলেছে।এ এ উপজেলার ভোলাচং, নারায়ণপুর, ভেলানগর, ইব্রাহিমপুর, শ্রীরামপুর, বিটঘর প্রভৃতি গ্রাম এক সময় মৃৎশিল্পের প্রাণ কেন্দ্র ছিল। এ সব গ্রামে ন্যূনতম তিন হাজার মুৎশিল্পী রাত দিন কাজ করত। তারা সুনিপুণ ভাবে হাড়ি, পাতিল, বাসন, ডাকনা, কলকে ও কলস, হরিণ, হাতি, গরু, জলকাদা, মটকা, মুক্তি, বসার- পিড়ি, ঘোড়া, বাঘ, ফুলদানী, টব, ব্যাংক, প্রভৃতি তৈরি করত। তাদের তৈরি পুতুল শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নয় কুমিল্লা, নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় সরবরাহ হতো, কিন্তু বর্তমানে নানা প্রতিকূলতার নবীনগরের মুৎশিল্পীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এখন মাত্র শ'খানেক মৃৎশিল্পী তাদের পেশা কোনো মতে আঁকড়ে ধরে আছে। তাদের পেশার দৈন্য দশায় সংসার জীবনে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে।

মৃৎশিল্পী জয় পাল জানান- ‘মৃৎশিল্প তৈরির উপকরণের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। ফলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পে আমাদের ঋণের বোঝা ভারী হয়ে গেছে’। নানা প্রতিকূলতায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই নবীনগর উপজেলার মৃৎশিল্প বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে ১ বৈশাখ উপলক্ষে কয়েক জন মৃৎশিল্পী ব্যস্ত সময় পার করছেন। কয়েক বছর আগে নবীনগর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ও স্থানীয় এনজিও হোপ এর সহযোগিতায় অত্র এলাকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্থানীয় কারিগরদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যদিও এর প্রতিফলন খুব একটা চোখে পড়েনি। ভবিষ্যতে যদি সরকারিভাবে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ করানো ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয় তাহলে হয়তো এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

এ বিভাগের আরো খবর