বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আলামত নেই মেডিক্যাল পরীক্ষায়

  •    
  • ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৫:৩৬

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিকটিম সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন, তবে এ ক্ষেত্রে শরীরে যে ধরনের আঘাত বা ক্ষতের চিহ্ন থাকে, সে ধরনের কিছু পাওয়া যায়নি। জোরপূর্বক বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ফলে শরীর ও যৌনাঙ্গে যে পরিস্থিতি থাকার কথা তা পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারীর মেডিক্যাল পরীক্ষায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি চিকিৎসকেরা।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকেরা ওই নারীর মেডিক্যাল পরীক্ষার পর গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহফুজুর রহমানের সই করা ওই প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিকটিম সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন, তবে এ ক্ষেত্রে শরীরে যে ধরনের আঘাত বা ক্ষতের চিহ্ন থাকে, সে ধরনের কিছু পাওয়া যায়নি। জোরপূর্বক বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ফলে শরীর ও যৌনাঙ্গে যে পরিস্থিতি থাকার কথা তা পাওয়া যায়নি। তার মানসিক অবস্থাও স্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

জিয়া গেস্ট ইনে র‍্যাবের সঙ্গে কথা বলেন অভিযোগ তোলা নারী।

কক্সবাজারে স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর। প্রাথমিকভাবে ওই নারীর ভাষ্য ছিল, স্বামী-সন্তান নিয়ে ওই দিন সকালে তারা কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর শহরের হলিডে মোড়ের সি ল্যান্ড হোটেলের ২০১ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন। বিকেলে সৈকতে গেলে সাড়ে ৫টার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে এক যুবকের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

এর জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার কিছু পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। আর তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় জোর করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

চায়ের দোকানের পেছনের এসব কক্ষের একটিতে ওই নারীকে প্রথম দফা ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে

ওই নারীর অভিযোগ, তাকে শহরের একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে প্রথমে তিনজন ধর্ষণ করেন। তারপর নেয়া হয় হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে। সেখানে আবারও তাকে ধর্ষণ করেন একজন।

আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ‘ধর্ষণের’ ঘটনা প্রকাশ হলো যেভাবে

এ ঘটনায় পরদিন ওই নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখ ও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলায় নাম উল্লেখ করা চার আসামি হলেন কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফি ওরফে ইসরাফিল হুদা জয় ওরফে জয়া, মেহেদী হাসান বাবু ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।

আরও পড়ুন: এমপি-ছাত্রলীগ নেতার ‘প্রশ্রয়ে’ কক্সবাজারের আশিক গ্যাং

মামলার পর ওই নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে পুলিশ।

ওই নারীর মেডিক্যাল পরীক্ষার প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কবে কী রিপোর্ট দিয়েছি সেটি প্রতিবেদনেই উল্লেখ আছে। এর চেয়ে বেশি আমরা বলতে পারব না।’

বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহীন আব্দুর রহমানও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আশিক গ্রেপ্তার হন র‌্যাবের হাতে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসামিদের বয়ান ও সাক্ষীদের বক্তব্য নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। এ মামলায় যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগপত্র দেয়ার চেষ্টা চলছে।’

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারীর স্বামী প্রথম দিকে নিজেদের ‘পর্যটক’ হিসেবে দাবি করলেও পরে বেরিয়ে আসে তারা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আশিকসহ কয়েকজন তাদের পূর্ব পরিচিত।

আরও পড়ুন: ‘কক্সবাজারে ধর্ষণে অভিযুক্তরা নারীর পরিচিত’

‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগ তোলা নারী কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তানজীনের আদালতে জবানবন্দিতে জানান, তার সন্তান জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। সন্তানের চিকিৎসার জন্য অন্তত চার লাখ টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করতেই তিন মাস আগে তারা কক্সবাজারে আসেন। কক্সবাজারে তিন মাস ধরে তারা বিভিন্ন হোটেলে কক্ষ ভাড়া করে থাকছিলেন।

জিয়া গেস্ট ইন হোটেল

আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’: আদালতে নারীর জবানবন্দি

তবে এর আগেও তারা কক্সবাজারে ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে জেলা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ওই নারী। সে সময় একটি মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে গেলেও কিছু দিনের মধ্যে তিনি জামিনে ছাড়া পান।

আরও পড়ুন: ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’: ওই নারী কক্সবাজারে গ্রেপ্তার হন জানুয়ারিতে

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারীর স্বামী কক্সবাজারে যৌনকর্মীদের একটি দল পরিচালনা করতেন। প্রায় এক বছর ধরে এটিই তার পেশা।

আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ‘ধর্ষণ’: যৌন ব্যবসার চক্র চালান ভুক্তভোগীর স্বামী

কক্সবাজারে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে ঢাকা থেকে গত বছরের জানুয়ারিতে প্রথম তিনি সেখানে যান। ধীরে ধীরে সখ্য গড়ে তোলেন কক্সবাজারের স্থানীয় দালাল ও হোটেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এই চক্রের কাছে চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে স্থানীয় সন্ত্রাসী আশিকুল ইসলাম আশিকের নামে চাঁদা দাবি করা হয়।

ওই নারীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ আগের দিন আশিকের সঙ্গে দেখাও হয় তার স্বামীর। তার দাবি, চাঁদা না দেয়ার কারণেই ২২ ডিসেম্বর স্ত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ করেন আশিকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা।

ঢাকায় ফিরে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেন ওই নারী ও তার স্বামী

এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি আশিকুল ইসলাম, ইসরাফিল হুদা জয়, মেহেদী হাসান বাবু ও হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এ ছাড়া পরে গ্রেপ্তার হন কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার রেজাউল করিম, একই এলাকার মেহেদী হাসান এবং চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবনিয়া গ্রামের মামুনুর রশীদ। তাদের বিরুদ্ধে ঘটনায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর