দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তবে বলেছেন, পদ না থাকলেও তিনি সব সময় আওয়ামী লীগকে ধারণ করেছিলেন, এখনও তা ধারণ করেন।
ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধুকে ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের রেকর্ড ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনায় গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের একজনকে আওয়ামী লীগ ছেঁটে ফেলার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয় শুক্রবার কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে।
গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসার পরপর মেয়রবিরোধীদের উল্লাস শুরু হয় রাজধানী লাগোয়া জনপদটিতে। বিপরীত দিকে মেয়র শিবিরে সুনসান নীরবতা।
দলীয় সিদ্ধান্ত আসার পরপর মেয়রের প্রতিক্রিয়া পাওয়াই যাচ্ছিল না। তবে রাত সাড়ে আটটার দিকে তার নাগাল পাওয়া যায় ফোনে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। দলীয় প্রধান ও দল যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেটা আমি মাথা পেতে নিয়েছি। আমার অস্থিমজ্জাজুড়েই আওয়ামী লীগ।’
মেয়র জাহাঙ্গীরের শাস্তির দাবিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকেই বিক্ষোভ করে আসছে আওয়ামী লীগের একাংশবঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীন করার আগ্রহের কারণ, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি ছাড়াও জাহাঙ্গীরের ফাঁস হওয়া রেকর্ডে গাজীপুরের নেতা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানসহ আরও অনেকের প্রসঙ্গ উঠে আসে।
- আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘কটূক্তি’, বেকায়দায় মেয়র জাহাঙ্গীর
- আরও পড়ুন: জটিল হচ্ছে গাজীপুর পরিস্থিতি, অবরোধে রেলেও বিচ্ছিন্ন ঢাকা
২২ সেপ্টেম্বর ৪ মিনিটের রেকর্ডটি ফাঁস হওয়ার পর যখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, সে সময় মেয়র দাবি করতে থাকেন, এসব বানোয়াট, এর কোনো ভিত্তি নেই। যারা এসব করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
কিন্তু তিন দিন পরে ৫০ মিনিটের পূর্ণাঙ্গ রেকর্ডটি যখন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন মেয়র মামলা করার প্রসঙ্গে আর এগোননি। তখন তিনি বলেন, কারা এসব করেছে, তাদের নাগালই পাচ্ছেন না।
এর মধ্যে ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগ যখন জাহাঙ্গীরকে ১৫ দিনের মধ্যে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করে, তখনই বোঝা যাচ্ছিল তার দল বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি।
জাহাঙ্গীর যদিও বিষয়টিকে বানোয়াট, এডিট করা বলে লিখিত ব্যাখ্যা দেন, তা বিশ্বাস করেনি আওয়ামী লীগ। সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় কঠোর ব্যবস্থাই নেয়া হলো মেয়রের বিরুদ্ধে।
- আরও পড়ুন: ‘শক্তি দেখালেন’ জাহাঙ্গীর, চক্রান্তকারীর মুখোশ খোলার ঘোষণা
- আরও পড়ুন: বাদী, বিবাদীই তো মিলাইতে পারতেছি না: মেয়র জাহাঙ্গীর
সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দুই মাস ধরে জাহাঙ্গীরের শাস্তির দাবি জানিয়ে আসা নেতা-কর্মীরা মেতে ওঠেন উল্লাসে।
মেয়র জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের খবরে দলের নেতা-কর্মীরা সন্ধ্যার পর উল্লাস করে গাজীপুরেএই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় মেয়র জাহাঙ্গীর আবার তুললেন চক্রান্তের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘মেয়র নির্বাচিত হয়ে গাজীপুর সিটিকে একটি আধুনিক নগর গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করি। আর তখনই একটি প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। আমি কোনো অন্যায় করিনি, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। যেহেতু পার্টি আমার গার্ডিয়ান, নেত্রী আমার গার্ডিয়ান, তারা যেটা ভালো মনে করেছেন, সেটা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগ করতে শুরু করি। যাপিত জীবনের পুরোটাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। আমার অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন। মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে তিনিই মনোনয়ন দিয়েছিলেন আমাকে। আমি আমার দায়িত্ব পালনে কোনো ফাঁকি দিইনি।‘