বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে।
একটি ঘরোয়া আয়োজনে এই কটূক্তির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
এই ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, মেয়র মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে মেয়রের দাবি, ভিডিও কারসাজি করা। যেসব কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলো সুপার এডিট করা। তিনি এখন দেশের বাইরে আছেন, ফিরেই মামলা করবেন।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া চার মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে তার সখ্য ও রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করছেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলছেন। বুধবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনও হয়েছে।
মেয়রের মন্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও পড়েছেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। তবে মেয়রের অনুসারীরা বলছেন, গত তিন বছরে গাজীপুরে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল মেয়রকে বিতর্কিত করতে এমন বক্তব্য প্রচার করছে।
ভিডিওতে যা দেখা যায়, যা শোনা যায়
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়র জাহাঙ্গীরকে নীল রঙের জামা পরে চেয়ারে বসে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়রকে দেখা গেলে বাকি অংশে শুধু অডিও বক্তব্য শোনা যায়। কিছু কিছু অংশ ছিল অস্পষ্ট।
ভিডিওটি কে বা কারা কবে ধারণ করেছেন, সেটি জানা যায়নি। কারাই বা সেটি ফেসবুকে ছেড়েছে, সেটিও অজানা।
ভিডিওটির শুরুতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শোনা যায়। তার দাবি, বঙ্গবন্ধু তার স্বার্থে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তান ভাঙার পেছনে রাষ্ট্রপতি হওয়ার বাসনা কাজ করেছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
তার ধারণা, বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি থাকত এখানকার মানুষ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের প্রসঙ্গে টেনে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি রাসেল সাহেবকে এইখানে নিয়া ফালাইছি। আমি চাইছি রাসেল সাহেব ভুল করুক। আমি ইচ্ছা করেই চাইছি হেও মিছিলটাতে এটেন্ড করুক।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজমত উল্লাহ আমারে জীবনে মারার লাইগা লোক কন্টাক্ট করছে, সব করছে। এখন সে আমার কর্মী হইছে। ...আমারে জিগায় কী করছ? আমারে কয়দিন জিগাইছে কী করো, কেমনে সম্ভব? হেও সব জানে না! আমি তো খেলা জিতছি।’
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি মন্ত্রীরে নিয়া মাথা ঘামাই না। জাহিদ আহসান রাসেল আছে না? তারে নিয়া আমি এক মিনিটও চিন্তা করি না। খালি জাস্ট শুইনা রাখো, বিশ্বাস করার দরকার নাই। আমি চিন্তা করলাম সে তো মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠই। দরকারটা কী আমার এখানে, পরিবর্তনে কী হইব? এখানে পরিবর্তনের লাভ টা কার?’
গত তিন বছরেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে। এ বিষয়ে ভিডিওটিতে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘প্যানেল মেয়র দেই না। দিলে কী হইব? আমারে কি কাউন্সিলররা মেয়র বানাইছে? আমার কি মেয়রগিরি যাইবগা? যেমন আমি এখানে প্যানেল মেয়র করি নাই। রাসেল এমপি অনেকরে মেয়র বানাইয়া দিতেছে, অনেকরে কাউন্সিলর বানাইয়া দিতেছে। প্রধানমন্ত্রী আরেকজনরে ভারপ্রাপ্ত দিব?’
বাংলাদেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাব্যক্তি তার নিকটাত্মীয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাতাসটা আমার কাছে বইলা যায়।’
বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এমনকি হেফাজতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার কথাও বলেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতের সাথে চলি না? বিএনপির সাথে চলি না? অন্য পার্টি আছে না সবার সাথেই তো কথা বলি। এই যে আমার সাথে ঘণ্টা তিনেক আগেও বাবুনগরী (হেফাজতের প্রয়াত আমির) প্রায় ৪৭ মিনিট কথা বলছে। সে আসতে চায়। আমি কথা বলছি না?
‘ধীরাশ্রম, ঝাঝর, চান্দরা আছে ৮/১০ বিঘা, দিঘিরচালা আছে ১৬ বিঘা, তেলিপাড়াও আছে। আমার এখানে সাড়ে তিন শ বিঘা জমি আছে। এই নির্বাচনের সময়েও দশ হাজার কোটি টাকা আনছি।’
নিউজবাংলাকে মেয়র যা বলেছেন
বিদেশে অবস্থানকারী মেয়রের সঙ্গে নিউজবাংলার কথা হয়েছে মোবাইল ফোনে। তিনি এই ভিডিও সম্পর্কে কিছু না জানার দাবি করেন।
বিষয়বস্তু জানানো হলে তিনি বলেন, ‘এগুলো সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ভিডিওটি কারা বানাইল, কারা ইডিট করল, কিছুই জানি না। আমার প্রত্যেকটি কথা জোড়া দেয়া। আমার কথা কেটে কেটে বিকৃতভাবে প্রকাশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি যখন ভাওয়াল কলেজের ভিপি নির্বাচন করেছি, তখন থেকেই একটা মহল আমার বিরোধিতা করেছে। সেই বিরোধীরা উপজেলা নির্বাচন, সিটি করপোরশেন নির্বাচনসহ আজও সক্রিয়। আমি দেশে ফিরে মামলা করব।’
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদ
মেয়র জাহাঙ্গীরের ভিডিওটি প্রকাশের পর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই।
বুধবার সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা নাহিদ মোড়লের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়। পরে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি দেয় বিক্ষোভকারীরা।
বিকেল সাড়ে ৫টায় টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী।
বিকেলে নগরীর গাছা থানাধীন বোর্ডবাজার এলাকায় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডলের নেতৃত্বে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মিছিল বের হয়। এ সময় ঝাড়ু হাতে নিয়ে মিছিলে যোগ দেন শতাধিক নারী।
রাতে টঙ্গীতে আরেকটি মিছিল থেকে জাহাঙ্গীরের কুশপুতুল পোড়ানো হয়।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অশালীন ও ক্ষমার অযোগ্য বক্তব্য রেখেছে সে। আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার এই বক্তব্য। একটা দায়িত্বশীল পদে থেকে ত্রিশ লক্ষ শহীদদের অবমাননা করে কথা বলা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করা, এটা নিশ্চয়ই কোনো মানবিক পর্যায়ে পড়ে না। এটা একটি নিন্দনীয় কাজ, তাই সাধারণ মানুষ ও নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ করছে।‘
তিনি বলেন, ‘সে সবাইকে নিয়েই এমন বাজে মন্তব্য করে। আমরা অনেক কিছুই আগে শুনেছি, কিছু বলিনি। কিন্তু আজকে রাষ্ট্র এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেটা বলেছে, এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। আওয়ামী লীগের চরম শত্রুও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন অসৌজন্যমূলক ও অপমানজনক মন্তব্য করেনি।
‘সে (জাহাঙ্গীর) দেশের বাইরে আছে। আমরা বসব এটা নিয়ে। তারপর দলগতভাবে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হব।’
বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে বলেও জানান আজমত উল্লাহ খান।
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়রকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সময়ও বেঁধে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
গাজীপুর মহানগর তাঁতী লীগের সভাপতি শাহ আলম মঙ্গলবার তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র বঙ্গবন্ধুকে স্বার্থপর সুবিধাবাদী বলায় আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মঞ্জুর বুধবার দুপুরে তার ফেসবুকে লেখেন, ‘ভয়েস ক্লিপ নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে মেয়র সাহেবের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিয়ে এটা সংযোজিত প্রমাণ করা, নয়তো উক্ত বক্তব্যের জন্য গাজীপুরবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার অনুরোধ জানাচ্ছি। নয়তো টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।’
টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ শামীম লেখেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তিকারীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে অবিলম্বে বহিষ্কার চাই।’
অন্যদিকে মেয়রের বক্তব্যকে সুপার এডিটিং দাবি করে মেয়র অনুসারীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন।
শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ গাজীপুর মহানগরের সভাপতি হেলাল উদ্দিন ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ভিডিওতে ছবি বসিয়ে সুপার ভয়েস এডিটিং করে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’
গত ২০ সেপ্টেম্বর তিনি ভারত সফরে যান। টিকিট পেলে আজ (বুধবার) রাতেই দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন মেয়র।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য