শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহক ভিত্তিতে ১৭২ জনকে নিয়োগের ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি মঙ্গলবার সরজমিনে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
বিশ্বজিৎ চন্দ নিজেই এ তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে গত ১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটি। আর ইউজিসির কমিটি গঠিত হয় গত ৮ নভেম্বর।
দেশের চতুর্থ এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা ২০১৮ সালে। এখনও শুরু হয়নি নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ। শুরু হয়নি নিজস্ব শিক্ষা কার্যক্রমও। এ অবস্থায় উপচার্যের বিশেষ ক্ষমতা বলে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৭২ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এই বিপুলসংখ্যক জনবলের বসার জায়গাও নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে। নেই তেমন কোনো কার্যক্রমও। অর্থের বিনিময়ে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে গত ২৫ অক্টোবর নিউজবাংলায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-শিক্ষার্থী কিছুই নেই, জনবল প্রায় ২০০’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর বিষয়টি তদন্তে কমিটি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি।
ইউজিসির কমিটি মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে উপাচার্য, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিস্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
তবে পরিদর্শন শেষে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কমিটির প্রধান অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ।
তিনি বলেন, ‘তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। নিয়োগের ব্যাপারে যে অভিযোগগুলো উঠেছে সেগুলো আমরা যাচাইবাছাই করে দেখছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।’
এই তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান ও কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মৌলি আজাদ।
ফেরদৌস জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ইউজিসি থেকে কয়েকটি পদ অনুমোদন দিয়েছি। তারা কতজনকে নিয়োগ এবং বেতন দিয়েছে এটা আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট মেডিক্যালের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মের কোনো ব্যাতয় ঘটেছে কি না তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
দেশের চতুর্থ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরুর পর সে বছরের ১৪ নভেম্বর ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ দেয়া হয়।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) নঈমুল হক চৌধুরী। এ দুজনের বিরুদ্ধেই নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে নগরীর চৌহাট্টায় অস্থায়ী কার্যালয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। দক্ষিণ সুরমায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণ হলেও সেখানে জমি ও অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি।
অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের কথা স্বীকার করে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী এর আগে নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘জরুরি প্রয়োজন মেটাতে অ্যাডহক ভিত্তিতে শখানেক লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বেশির ভাগই কর্মচারী পদে নিয়োগ পেয়েছেন। যথাযথ নিয়ম মেনেই তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’