জার্মানির স্বৈরশাসক অ্যাডলফ হিটলারের আত্মজীবনী ‘মাইন কাম্ফ’-এর নতুন অনূদিত সংস্করণ প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের প্রকাশনা সংস্থা ফারইয়াদ।
হিটলারের জাতিবিদ্বেষী, ইহুদিবিরোধী দীর্ঘ এ উপাখ্যান নিয়ে বিতর্কের জেরে কয়েক বছর আটকে ছিল বইটির প্রকাশ। তবে সব বিতর্ককে ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত বুধবার বইটির মোড়ক উন্মোচন করে ফারইয়াদ।
বইটি নিয়ে কাজ করা ইতিহাসবিদদের দাবি, এ বইয়ের মাধ্যমে নাৎসিদের আদর্শের বিশদ বর্ণনা পাবেন ফরাসি পাঠকরা। এর মাধ্যমে নাৎসিদের মানসিকতা বর্জনের শিক্ষাও দেয়া হবে।
ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কের জবাবে সংস্করণটির শিক্ষণীয় দিকের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ফারিয়াদ।
বইটির প্রচ্ছদে হিটলারের নাম বা ছবি নেই। এমনকি হিটলারের আত্মজীবনীর মূল সংস্করণের নাম অনুসারে নতুন বইটির নাম ‘মাইন কাম্ফ’ও রাখা হয়নি।
‘মাইন কাম্ফ’-এর নতুন ফরাসি সংস্করণটির নাম দেয়া হয়েছে ‘হিস্তোরিসিজের ল্যু মাল, উনে এদিশ্যঁ ক্রিতিক দ্য মাইন কাম্ফ’। অর্থাৎ মাইন কাম্ফের একটি সমালোচনামূলক সংস্করণ এটি।
প্যারিসের সোরবন ইউনিভার্সিটির জার্মান ইতিহাসের অধ্যাপক হেলেন মিয়ার্দ বলেন, ‘বইটিতে মূলত হিটলারের লেখা নিয়ে ইতিহাসবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
‘ইতিহাস নিয়ে এক দশকের গবেষণার ফল এই বই। এর দুই-তৃতীয়াংশে রয়েছে হাজারো পাদটীকার বিশদ ব্যাখ্যা আর সমালোচকদের মন্তব্য। কাজেই এই বইকে সরাসরি অনুবাদ বলার উপায় নেই।’
মাইন কাম্ফের প্রথম ফরাসি অনুবাদ প্রকাশ হয় ১৯৩৪ সালে। বইটিতে হিটলারের লেখার ধরনে পরিবর্তন আনা হলেও তার জাতিবিদ্বেষী ও ইহুদিবিরোধী আদর্শের পুরোটাই অক্ষুণ্ন রাখা হয়।
অধ্যাপক হেলেন মিয়ার্দ বলেন, ‘নতুন বইয়ে অনুবাদকরা শব্দে সাহিত্যগুণ যোগ করার চেষ্টা করেছেন। কারণ হিটলারের সাহিত্যগুণ বলতে কিছু ছিল না।’
মাইন কাম্ফের ফরাসি অনুবাদটি কোনো বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে না। কেবল অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমেই পাঠকরা বইটি পাবেন, যার দাম পড়বে ১০০ ইউরো।
ফারিয়াদ জানিয়েছে, বই বিক্রির লভ্যাংশ অশউইৎজ-বিয়ারকিনাউ ফাউন্ডেশনে দান করা হবে।
নাৎসি বাহিনীর সবচেয়ে বড় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ছিল হিটলারের দখলকৃত পোল্যান্ডের অশউইৎজে। সেখানকার ভয়াবহ স্মৃতি সংরক্ষণে তহবিল সংগ্রহ করার লক্ষ্যে কাজ করে অশউইৎজ-বিয়ারকিনাউ ফাউন্ডেশন।
মাইন কাম্ফের পটভূমি
হিটলার জার্মান চ্যান্সেলর হওয়ার প্রায় ১২ বছর আগে ১৯২৩ সালে মিউনিখে তার নেতৃত্বে নাৎসিদের একটি অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
‘বিয়ার হল পুচ’ হিসেবে পরিচিত ওই অভ্যুত্থানচেষ্টা করতে গিয়ে বন্দি হন হিটলার। এরপর কারাগারে বসে ১৯২৪ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ‘মাইন কাম্ফ’ লেখেন তিনি। জার্মান ভাষায় ‘মাইন কাম্ফ’-এর বাংলা অর্থ ‘আমার সংগ্রাম’।
বইটি লেখার প্রায় এক দশক পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হিটলারের নেতৃত্বে ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য গণহত্যা সংঘটন করে নাৎসি বাহিনী। ইউরোপের তৎকালীন জার্মান নিয়ন্ত্রিত অংশে হত্যা করা হয় ৬০ লাখ ইহুদিকে, যা সে সময় ইউরোপের মোট ইহুদি জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশ।
ওই গণহত্যার বিষয়ে হিটলারের নাৎসি মতবাদের প্রমাণ তার আত্মজীবনী। বইটিতে অস্ট্রিয়ায় নিজের শৈশব ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সেনা হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছেন তিনি।
ইংরেজি, জার্মান, তুর্কি, আরবি, পার্সি, উর্দু, বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে মাইন কাম্ফ।