এক দশকের বেশি সময় আগে আফগানিস্তানের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে গানের স্কুল খোলেন আহমেদ নাসের সারমাস্ত।
ওই শিশুদের একজন এখন দেশটির প্রথম নারী অর্কেস্ট্রা দলের কনডাক্টর।
তালেবান সম্প্রতি আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করায় অন্যান্য অনেক কিছুর মতো দেশটির সংগীতচর্চা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সারমাস্ত দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ সংগীত স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
‘তালেবান আমাদের সংগীত স্কুল চালাতে দেবে কি না, এ নিয়ে আমরা খুবই উৎকণ্ঠায় রয়েছি।’
আফগানিস্তান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মিউজিকের প্রতিষ্ঠাতা সারমাস্ত গত মাসে স্কুলের গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে কাবুল থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পরিবার নিয়ে যান।
আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারমাস্তের দেশে ফেরার কথা। তবে আফগানিস্তানের হঠাৎ পটপরিবর্তনে তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সারমাস্ত বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে তালেবানের শাসনামলে আফগানিস্তান নির্বাক জাতিতে পরিণত হয়।
‘ওই সময় জনগণের গান শোনা বা চর্চার অধিকার ছিল না। সংগীতের সৌন্দর্যের স্বাদ পাওয়ার অনুমতি ছিল না তাদের।’
তিনি বলেন, ‘আশা করি, এবার আমরা নব্বইয়ের দশকে ফিরে যাব না। আফগান জনগণের সাংস্কৃতিক অধিকারের মর্যাদা তালেবান দেবে বলে আমার ধারণা।’
২০১০ সালে আফগানিস্তান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মিউজিক প্রতিষ্ঠা করেন সারমাস্ত। এ স্কুলে এখন সাড়ে তিন শর মতো শিক্ষার্থী রয়েছে।
২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডে সংগীত পরিবেশন করে জোহরা। ছবি: রয়টার্স
সারমাস্ত বলেন, ‘স্কুলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যাই বেশি। সংগীত তাদের জীবন পাল্টে দিয়েছে।
‘কে কোন সম্প্রদায়ের, তাদের লিঙ্গ কী, সামাজিক বাস্তবতা কেমন- এসবের তোয়াক্কা না করেই স্কুলে সংগীতচর্চা হয়।
‘আমাদের স্কুল বরাবরই জেন্ডার সমতাকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। আমরা শুরুতে মাত্র একজন মেয়েশিক্ষার্থী নিয়ে স্কুল খুলেছিলাম। এখন স্কুলের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীই মেয়ে।’
শুধু আফগানিস্তান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মিউজিকই নয়, আফগান ইয়ুথ অর্কেস্ট্রা ও দেশটির প্রথম নারী অর্কেস্ট্রা দল জোহরাও প্রতিষ্ঠা করেন সারমাস্ত।
সারমাস্তের ভাষ্য, আফগান নারীদের ক্ষমতায়নের প্রতীক এসব সংগীত ভবন।
সারমাস্তের তত্ত্বাবধানে ২০১০ সাল থেকে পথচলা আফগানিস্তানের সংগীত স্কুলগুলো লন্ডনে ব্রিটিশ মিউজিয়াম ও রয়েল ফেস্টিভ্যাল হল, নিউ ইয়র্কে কার্নেগি হলসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা জায়গায় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
সারমাস্ত বলেন, ‘সংগীতের মাধ্যমে আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সেতুবন্ধের চেষ্টা করেছি।
‘সংগীতের কোমল শক্তির ওপর আমার অগাধ আস্থা রয়েছে। এটি কেবল বিনোদনই দেয় না।
‘সম্প্রদায় ও মানুষের জীবনের অর্থ পরিবর্তনে সংগীত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। সংগীত ছাড়া কোনো সমাজ আমি কল্পনা করতে পারি না।’