করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত কারণে খুলনা জেলায় ২৯৭ জন কর্মহীন শিল্পী, কলা-কুশলী ও কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুদান বিতরণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের একজন সহসভাপতি বলেছেন, অনুদান দেয়া হচ্ছে, এমন খবরে তিনি মিলনায়তনে গিয়ে কয়েকজনকে চিনেছেন। বাকিরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, এমন কোনো তথ্য তিনি জানেন না।
গত ২২ এপ্রিল দুপুরে মহানগরীর বয়রা সরকারি মহিলা কলেজ অডিটোরিয়ামে এ চেক বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে কর্মহীন শিল্পী, কলাকুশলীর মধ্যে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়।
সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতি করে নিজেদের লোকদের মধ্যে অনুদান বিতরণের অভিযোগ এনে ২৫ এপ্রিল থেকে আন্দোলনে নামে বঞ্চিত প্রকৃত শিল্পী, কবি-সাহিত্যিকসহ সংস্কৃতিকর্মীরা।
তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করেন।
সে সময় শিল্পী ও কলাকুশলীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অবস্থিত জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছেও এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন।
২৮ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে মহানগরীর মৌলভীপাড়ার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে খুলনা জেলা লেখক-শিল্পী ঐক্য পরিষদের একটি সভা হয়। সেখানে প্রকৃত শিল্পী, কবি-সাহিত্যিকসহ সংস্কৃতিসেবীদের অনুদান না দেয়ার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধনের কর্মসূচি গৃহীত হয়।
নগর নাট্যদলের নাট্য পরিচালক কামরুল কাজল বলেন, ‘মুখ চিনে অনুদান দেয়া হয়েছে। এখানে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। যারা প্রকৃত শিল্পী তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। যাদের অনুদান দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রেডিও, বেতার, নাটক, আবৃতি ও সঙ্গীত এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় জড়িতদের কেউ নেই। একইভাবে অনেকেই আছেন যারা আদৌ শিল্পীও নয়।’
তিনি দাবি করেন, একই পরিবারের দুইজন পেয়েছে এমন সংখ্যাও রয়েছে ১২ থেকে ১৪টি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলা কমিটির সহসভাপতি লুৎফুন্নাহার পলাশী বলেন, ‘আমি এই অনুদান সম্পর্কে টোটালি জানি না। ব্যাপারটা আরও ক্লিয়ার হওয়ার জন্যে নিজেই গত রোববার খুলনা শিল্পকলা একাডেমিতে যাই এবং জানতে পারি যে, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়ে এই ফর্মটি ছাড়া হয় অনলাইনে। তখন অনেকেই ফর্ম পূরণ করে।
‘এখন এই লিস্টে যারা আছে তাদের মধ্যে ২/৩ ছাড়া কাউকেই চিনি না। কারণ, এরা বেশিরভাগ খুলনার বাইরের।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে যারা সব সময় থাকে, তারাই এই ফর্মটি সম্পর্কে জানে না, আর অনলাইন সম্পর্কে যাদের ধারণা নাই তারা কীভাবে এই ফর্মটি সম্পর্কে জানল? একটা সম্প্রদায়ের বড় একটা অংশ এই লিস্টে রয়েছেন। পরে ওখান থেকে বলা হয়েছে, যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে তারাই এই ভাতার অন্তর্ভুক্ত।’
লুৎফুন্নাহার পলাশী বলেন, ‘আমি নিজেও বর্তমানে বেকার। তারপরেও বলব, সরকার যখন শিল্পীদের একটা সম্মানি দিচ্ছেন, এই অনুদান সব শিল্পীদেরই পাওয়া উচিত।’
এ প্রসঙ্গে খুলনা জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার সাহা বলেন, ‘গত বছর করোনার শুরুর প্রথম দিকেই আমরা তালিকা চেয়েছিলাম। যারা এখন আন্দোলন করছে তারা এসব তালিকায় নাম দেননি। আমরা সঠিকভাবে বণ্টনের চেষ্টা করেছি।
‘আন্দোলনকারী কবি-সাহিত্যিকরা আগে তো কখনও আসেননি। আমরা যখন তথ্য চেয়েছিলাম তারা তখন কোথায় ছিলেন? সেদিন তারা আমার অফিসে আসার পর আমি তাদের কাছে তালিকা চেয়েছিলাম তিন চার দিন হয়ে গেছে তারা এখনও তালিকা দেয়নি।’