বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হুমায়ুন আজাদের কবিতা ভাবনা

  •    
  • ২৮ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:৪২

তার কলম সব সময় শাণিত হয়েছে ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক, রাষ্টীয়সহ নানা অসংগতির বিরুদ্ধে। অন্যায্যতার বিরোধিতা করাই ছিল তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সমকালীন বাংলাদেশে সময়ের সাহসী উচ্চারণ ছিল তার লেখায়।

ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ বাংলা ভাষার প্রথা বিরোধী লেখক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। লেখালেখিতে আজীবন তিনি আঘাত হেনেছেন সমাজের কাঠামোয়।

তার কলম সব সময় শাণিত হয়েছে ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক, রাষ্টীয়সহ নানা অসংগতির বিরুদ্ধে। অন্যায্যতার বিরোধিতা করাই ছিল তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সমকালীন বাংলাদেশে সময়ের সাহসী উচ্চারণ ছিল তার লেখায়।

একাধারে ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, গদ্যকার, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, কিশোর সাহিত্যেক ও কবি, নানা পরিচয়ে পরিচিত হুমায়ুন আজাদ।

ভাষাবিজ্ঞানী ও গদ্যকার হিসেবে বেশি জনপ্রিয় হলেও হুমায়ুন আজাদ আমৃত্যু কাব্যচর্চা করেছেন।

তার কবিতায় উঠে এসেছে সমসাময়িক কালের পরিব্যাপ্ত হতাশা, দ্রোহ, প্রেম, প্রকৃতি আরও কত কী।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশ পায় হুমায়ুন আজাদের আলোচিত কাব্যগ্রন্থ ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’।

নাম ভূমিকার এই দীর্ঘ কবিতায় শুধু সমকালীন স্থলিত সমাজের কথা নয়, হয়তো বলতে চেয়েছিলেন পুঁজিবাদী বিজ্ঞাপনে ঢেকে যাওয়া ভবিষ্যত সমাজের চিত্রের কথা।

‘আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।

নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক

সব সংঘ-পরিষদ; চলে যাবে, অত্যন্ত উল্লাসে

চলে যাবে এই সমাজ-সভ্যতা-সমস্ত দলিল

নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে, যে-রকম রাষ্ট্র

আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চলে গেছে নষ্টদের

অধিকারে। চলে যাবে শহর বন্দর ধানক্ষেত

কালো মেঘ লাল শাড়ি শাদা চাঁদ পাখির পালক

মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ পবিত্র প্যাগোডা।

অস্ত্র আর গণতন্ত্র চলে গেছে, জনতাও যাবে;

চাষার সমস্ত স্বপ্ন আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে একদিন

সাধের সমাজতন্ত্রও নষ্টদের অধিকারে যাবে।’

এটি সেই দীর্ঘ কবিতার খণ্ডাংশ মাত্র। অনেকের কাছেই মনে হতে পারে ভীষণ নৈরাশ্যবাদ ফুটে উঠেছে এই কবিতায়। আবার অনেকেই ভাবতে পারেন এটি মাত্র সমাজের চিত্রিত রূপ।

তবে কবিতা নিয়ে তার ভাবনা কেমন ছিল তা জানতে তার শ্রেষ্ঠকবিতা গ্রন্থের ভূমিকা পড়লে অনেকটা পরিষ্কার হয়।

সেই ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্যের বিরামহীন বিস্তার, ইন্দ্রিয়ের অনন্ত আলোড়ন, জীবাশ্মের মতো নির্মোহ মহর্ষির প্রাজ্ঞতা, ধ্যানের অবিচল উৎসারণ, জীবনের আদিম উচ্ছল উৎসব, রূপক প্রতীক চিত্রকল্পের নির্বাণহীন অঙ্গার।’

তার ভাষা ধার নিয়েই বলা যায়, তাই হয়তো জীবনের আদিম উচ্ছল আর সৌন্দর্যের বিরামহীন বিস্তার আলোরিত না করলে হয়তো তিনি লিখতে পারতেন না-

‘ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো।

ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো।

ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা।

ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা।

ভালো থেকো।’

অন্যান্য লেখার মত তার কবিতাগুলোও যেমন চিন্তার খোরাক জোগায় তেমনই হৃদয়ে আলোড়ন তোলে। ১৯৭৩ সালে প্রকাশ পায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অলৌকিক ইস্টিমার’। তিনি ছিলেন ষাটের দশকের কবিদের সমপর্যায়ী আধুনিক কবি। রচনা করেছেন ১০টি কাব্যগ্রন্থ।

আজ বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে মুন্সীগঞ্জের রাঢ়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় তার আলোচিত গবেষণা মূলকগ্রন্থ ‘নারী’। এই গ্রন্থ প্রকাশের পর মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েন তিনি। পাঁচ বছর নিষিদ্ধ ছিল বইটি। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭০টির বেশি।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি হুমায়ুন আজাদের ওপর মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা হামলা করে। একই বছরের ১১ আগস্ট জার্মানির মিউনিখ শহরে মারা যান তিনি।

১৯৮৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম ও ভাষাবিজ্ঞানে অবদানের জন্য ২০১২ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর