আফগানিস্তান থেকে লুট হওয়া কয়েক হাজার বছর আগের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক ‘অমূল্য’ সম্পদ ফিরছে দেশটিতে।
চোরাকারবারিদের কাছ থেকে কিনে তা আবারও পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা নিউইয়র্কভিত্তিক কুখ্যাত এক আর্ট ডিলারের কাছ থেকে জব্দ করা হয় অন্তত ৩৩টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
এ সপ্তাহেই সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আফগানিস্তান সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত রয়া রাহমানি বুধবার সেগুলো হাতে পেয়ে বলেছেন, ‘এগুলোর তাৎপর্য অসীম। এর প্রতিটি টুকরা আমাদের ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সোমবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটান জেলা অ্যাটর্নি অফিস ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনের (এইচএসআই) কাছ থেকে বুঝে নেন রাহমানি।
বেশ কয়েকটি দেশ থেকে প্রত্নসম্পদ পাচারের বৃহত্তর তদন্তের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলো এসব নির্দশন উদ্ধার করে।
উদ্ধার প্রাচীন নিদর্শনগুলো ওয়াশিংটন ডিসিতে আফগানিস্তান দূতাবাসে প্রদর্শন করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে মাস্ক, ভাস্কর্য ও অন্যসব উপকরণ। এর কয়েকটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর।
নিদর্শনগুলোকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দেশটির জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হবে সেগুলো।
এটা সেই জাদুঘর যা ২০০১ সালে ধ্বংস করে দিয়েছিল তালেবান। মানবমূর্তি ইসলামে হারাম বলে তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
আফগানিস্তানে এখন ক্ষমতায় নেই তালেবান। কিন্তু কাবুলের বাইরে দেশের অনেক অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
আফগান সরকারের সঙ্গে একটি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে তালেবানের।
রাহমানি বলেন, এখন সরকার দেশের জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর দেশের ঐতিহ্য ও সম্পদ দেশে ফেরত যাচ্ছে। এগুলোর দেখভাল করা আমাদের সরকারের দায়িত্ব। কেননা এগুলো থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার শেকড় সম্পর্কে জানতে পারবে।
‘আমি মনে করি না যে, আবারও তালেবান ক্ষমতায় গিয়ে এগুলো ধ্বংস করার সাহস করবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকার তা ঘটতে দেবে না।’
উদ্ধার হওয়া প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধমূর্তি, মার্বেলের শিবমূর্তি ও গ্রিক মাস্ক।
আফগানিস্তানে পড়াশোনা করা প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফেলো ফ্রেডরিক হাইবার্ট মনে করেন, প্রত্নতত্ত্বগুলো আফগানিস্তানে সাংস্কৃতিক বহুত্বের নিদর্শন।
আফগানিস্তানে কমপক্ষে দুই হাজার ৬০০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন স্থান রয়েছে।
৩৩টি নিদর্শনের কয়েকটি পরীক্ষা করেছেন হাইবার্ট। এগুলোর বেশিরভাগই কয়েক হাজার বছরের আগের বলে জানান তিনি।
এ গবেষক বলেন, বিশ্বে যে কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ দেশ আছে, তার অন্যতম আফগানিস্তান। দেশটিতে মানবসভ্যতার বিকাশ হয় ৬ হাজার বছর ধরে।