বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বইমেলার কী এক বিষণ্ন বিদায়

  •    
  • ১২ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:৩৫

শেষ দিন সোমবারও ছিল না দীর্ঘ লাইন ধরে মেলায় ঢোকার পরিচিত দৃশ্য। ভেতরে ছিল না ক্রেতা, দর্শনার্থীর ছোটাছুটি বা স্টল কর্মীদের ব্যস্ততা। প্রকাশক-বিক্রেতাদের মুখে ছিল বিষণ্নতার ছায়া।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হলো নিষ্প্রাণভাবে। করোনার কারণে এবার দেড় মাস পিছিয়ে শুরু হয় বইমেলা, সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগেই পর্দা নামল মেলার।

শেষ দিন সোমবারও ছিল না দীর্ঘ লাইন ধরে মেলায় ঢোকার পরিচিত দৃশ্য। ভেতরে ছিল না ক্রেতা, দর্শনার্থীর ছোটাছুটি বা স্টল কর্মীদের ব্যস্ততা।

করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এবং লকডাউনের কারণে পরিবর্তন করা হয় মেলার সময়। ফলে জমে ওঠার সুযোগই পায়নি এবারের বইমেলা। তাই প্রকাশক-বিক্রেতাদের মুখে ছিল বিষণ্নতার ছায়া।

এমন প্রাণহীন বইমেলা কখনও দেখেননি বলে জানালেন ক্রেতা-দর্শনার্থী, লেখক ও প্রকাশকেরা। কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মেলাটা যা হওয়ার কথা ছিল, আমরা তা আসলে করতে পারি নাই। আমাদের ইচ্ছে ছিল ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা শুরু হবে, কিন্তু সেটা মার্চে হয়েছে। ভেবেছিলাম সুন্দরভাবে মেলাটা শেষ হবে, কিন্তু নানা জটিলতা মাঝখানে ঢুকে পড়েছে। সরকার লকডাউন দিয়েছিল, আবার লকডাউন প্রত্যাহারও করেছে।

‘এসব নিয়ে মানুষের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক ও দ্বিধা তৈরি হয়েছে। ফলে শুরুর দিকে মানুষকে স্বতস্ফূর্তভাবে বইমেলায় যেভাবে আসতে দেখেছি সেটায় পরে ভাটা পড়ে।’

লেখক-প্রকাশকের হতাশার মধ্যে শেষ হলো বইমেলা

তিনি বলেন, ‘এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট ছোট প্রকাশকেরা। আমি লেখক হিসেবে বইমেলায় ঘুরে ঘুরে দেখেছি। বড় বড় প্যাভিলিয়ন যাদের রয়েছে তারা হয়ত কোনোরকম খরচ তুলতে পারবে, কিন্তু ছোট প্রকাশকের অবস্থা খুবই খারাপ। এখন মনে হচ্ছে আসলেই সরকার যদি কোনো প্রণোদনা দিত তাহলে এই প্রকাশকরা বেঁচে যেত।’

আগামী বছর একটি ‘সুন্দর বইমেলা’ পাওয়ার আশা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লেখক-পাঠকের মধ্যে যে সম্মিলন হয় প্রতিবছর, সেটি এবার ঠিকঠাক মতো হয়নি। পাঠদের আমরা কাছে পাইনি কিংবা লেখদের সঙ্গে আমাদের যে আড্ডা হয় সেটা হয়নি। এক ধরনের বেদনা বোধ নিয়েই আজ মেলাটা শেষ হচ্ছে।’

কবি সাখাওয়াত টিপু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই সংকটের মধ্য দিয়ে বইমেলাটা যে হয়ে গেল, আমি মনে করি এটাই একটা পজিটিভ দিক। মানুষের যে আত্মিক খোরাক, মানুষের যে বুদ্ধিবৃত্তিক খোরাক ও সংস্কৃতির যে ভিত্তিটা সেটা নির্ভর করে বইমেলার উপর। তবে শুরু থেকে একটা অনিশ্চতার কারণে মানুষের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। সে কারণে সার্বিকভাবে ছোট-বড় সব প্রকাশক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ভালো লাগার ব্যাপার হলো এ রকম একটা সংকটের মধ্যে যে আমরা জাতি হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি তার প্রমাণ এই বইমেলা।’

প্রকাশনা সংস্থা ‘অন্যপ্রকাশ’-এর প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির রাজধানীর সভাপতি মাজহারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি মেলা শুরু করতে, কিন্তু আমাদের কথা শোনেনি বাংলা একাডেমি। পিছিয়ে নিয়ে এসে মেলাটার সর্বনাশ করে দিলো। এর মধ্যে আবার এক দুইদিন কালবৈশাখীর ঝড়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে।

‘আমরা প্রচণ্ডরকমের ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, তিনি যেন প্রকাশকদের এই ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করেন।’

সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘মেলা তো খুব খারাপ হলো এটা সবাই জানে। গত বছরের মেলায় যা হয়েছে এবার তার ১০ পার্সেন্ট, বড় জোর ১৫ পার্সেন্ট ব্যবসা হয়েছে। সুতরাং আমি ভীষণ পরিমাণ একটা ঘাটতির মধ্যে আছি।

‘এই ক্ষতি পূরণের জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় আগেও আবেদন জানিয়েছি এবং এখনও বিভিন্ন জায়গায় জানাচ্ছি।’

বইমেলা নিয়ে হতাশা জানালেন শব্দশিল্প প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী অনুশ্রী রুদ্র পূজা। তিনি বলেন, ‘বেচা-বিক্রির অবস্থা খুব খারাপ। শেষ তিন চার দিন আমাদের কোনো বিক্রি হয়নি। মেলায় হাতে গোনা মানুষ। বলতে গেলে শুরু থেকেই এই অবস্থা।’

শেষ দিনে মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন সেগুনবাগিচা এলাকার লুৎফা রহমান। তিনি বলেন, ‘জীবনে কখনও এত প্রাণহীন বইমেলা দেখিনি।’

বইমেলায় নিয়ে বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। লিখিত বক্তব্যে সমিতির সহ সভাপতি শ্যামল পাল প্রকাশকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ন্যূনতম ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানান। এছাড়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতাদের জন্য সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে এক হাজার কোটি টাকার ঋণের দাবি জানানো হয়।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হলেও করোনার কারণে এবার দেড় মাসেরও বেশি পিছিয়ে ১৮ মার্চ শুরু হয় মেলা। ১৪ এপ্রিল মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দুই দিন আগেই শেষ হয় আয়োজন।

এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় বসে বইমেলা। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ছিল ১০৭ প্রতিষ্ঠানের ১৫৪টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪০৩ প্রতিষ্ঠানের ৬৮০টি স্টল। এছাড়া ৩৩টি প্যাভিলিয়ন ছিল মেলায়।

এ বিভাগের আরো খবর