জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহানের জন্মদিন আজ। ভাসছেন ভক্ত, প্রকাশক আর প্রিয়জনদের শুভেচ্ছায়। দারুণ একটা সুখবর দিলেন সাতান্নতম জন্মদিনের বিকেলে। এই বরেণ্য কথাসাহিত্যিকের জীবন, কর্ম ও দর্শন নিয়ে নির্মিত হচ্ছে তথ্যচিত্র। সাইলেন্ট ড্রপস প্রোডাকশন্স নির্মাণ করছে এ তথ্যচিত্র, শিরোনাম নেয়া হয়েছে তার উপন্যাসের নাম থেকেই, চন্দ্রলেখার জাদুবিস্তার। এটি নির্মাণ করছেন চিত্রশিল্পী ও নির্মাতা হাবিব পাপ্পু।
তথ্যচিত্র 'চন্দ্রলেখার জাদুবিস্তার'-এর নির্মাতা চিত্রশিল্পী হাবিব পাপ্পু
মোবাইল ফোনে তিনি জানান, এরই মধ্যে এই তথ্যচিত্রের দৃশ্যধারণ শেষ হয়েছে। নাসরীন জাহানের আশৈশব বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহেই আড়াই দিন ধরে হয়েছে এই তথ্যচিত্রের দৃশ্যধারণ। এতে উঠে এসেছে নাসরীন জাহানের জীবনের নানা বাঁক ও বাঁকবদলের গল্প। বিখ্যাত সব লেখকদের নিয়েও অকথিত অনেক আলাপ উঠে আসবে এই তথ্যচিত্রে। উঠে আসবে গদ্য ও কবিতা নিয়ে তার দীর্ঘ ভ্রমণের গল্পও। জন্মদিনে মুঠোফোনে নাসরীন জাহান বলেন, ‘চিত্রশিল্পী ও নির্মাতা হাবিব পাপ্পু অনেক পরিশ্রম করে কাজটা করেছে, কেউ যে আমাকে এত ভালোবেসে কোনো প্রতিদানের আশা না করে এভাবে নিবেদিতভাবে কাজ করতে পারে, আমার জানা ছিল না, আমিও অধীর আগ্রহে তথ্যচিত্রটি দেখার অপেক্ষায় আছি’। নির্মাতা হাবিব পাপ্পু জানিয়েছেন, দ্রুতই পোস্টপ্রোডাকশন শেষে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উন্মুক্ত করা হবে ‘চন্দ্রলেখার জাদুবিস্তার’। করা হবে গণপ্রদর্শনীও। কথাসাহিত্যিক ও কবি নাসরীন জাহানের জন্ম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের দড়িনগুয়া গ্রামে, ৫ মার্চ, ১৯৬৪ সালে। বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির, মা উম্মে সালমা। তাঁর লেখালেখি শুরু আশির দশকে। নাসরীন জাহানের গদ্য ঝরঝরে, ঋজু, মেদহীন। তার পর্যবেক্ষণশক্তিও গভীরতাশ্রয়ী, তিনি যেকোনো ক্ষুদ্র বিষয়কে মেলাতে পারেন সামাজিক, অর্থনৈতিক সমস্যার মূল বিন্দুতে। এ কারণে দুই বাংলাতেই সমঝদার পাঠকরা তাকে গ্রহণ করেছেন সাদরে।
১৯৯৩ সালে প্রকাশিত উড়ুক্কু নাসরীন জাহানকে অভূতপূর্ব খ্যাতি এনে দেয়, প্রথমবারের মতো নিয়ে আসে পাদপ্রদীপের আলোয়। এই উপন্যাসের জন্য নাসরীন ১৯৯৪ সালে সে সময়ের মর্যাদাকর ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার পান। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতেই খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হয়ে ওঠেন নাসরীন জাহান। এ সময় অনেক সাহিত্য সমালোচক তাকে বাংলা সাহিত্যের রাজকুমারী অভিধাও দিয়েছেন। উড়ুক্কু'ই নয় শুধু, চন্দ্রলেখার জাদুবিস্তার, যখন চারপাশের বাতিগুলো নিভে আসছে. সোনালি মুখোশ, উড়ে যায় নিশিপক্ষী, মেঘের সোনালি চুল, নিকুন্তিলা, শঙ্খনর্তকী, দূর পৃথিবীর গন্ধে, মৃত্যুসখীগণ, ঈশ্বরের বামহাত, চিল পাখির নীল ঠোঁটে- কাব্যিক সব নামের উপন্যাস লিখে নাসরীন জাহান এই দেশের পশ্চাৎপদ নারীদের পিঠে স্বাধীনতা ও বোধের উড়বার ডানা লাগিয়ে চলছেন ক্রমাগত, গত কয়েক প্রজন্ম ধরে। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছেন, তবে কোনোটিই আপস করে নয়। এর মধ্যে সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৯৫ সালে পাওয়া আলাওল সাহিত্য পুরস্কার রয়েছে।