বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকা গেটকে বাঁচাবে কে?

  •    
  • ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০৮:৫৭

মেট্রোরেলের উন্নয়ন কাজের চাপে ইতোমধ্যে চোখের আড়াল হয়ে গেছে পুরার্কীতি ঢাকা গেটের মাঝের স্তম্ভ। বাকি দুটি স্তম্ভ রক্ষার দায় পরস্পরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দোয়েল চত্বর পেরিয়ে বাংলা একাডেমির দিকে এগোলেই দেখা যায় হলদে রঙের ভঙ্গুর এক তোরণ। এটির নাম ‘ঢাকা গেট’। অযত্ন অবহেলার এই গেটটি সম্পর্কে সাধারণের জানা শোনা কম থাকলেও, এটি বয়ে চলেছে সাড়ে তিনশ বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য।

তোরণটি নির্মাণের সময় তিনটি স্তম্ভ ছিল। রাস্তার দুপাশের দুটির স্তম্ভের একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্র আর অপরদিকে তিন নেতার মাজার। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হলে চোখের আড়াল হয়ে যায় মাঝের স্তম্ভটি। প্রকল্পের বিপুল কাঠামোর চাপে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে অন্য দুটি স্তম্ভও।

প্রাচীন এই স্মারক সংরক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কারোরই নেই ভ্রুক্ষেপ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পুরাকীর্তির তালিকায় নেই এই ঢাকা গেটের নাম।

অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক রাখী রায় বলেন, ‘ঢাকা গেটকে পুরাকীর্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি প্রস্তাবনা আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাব। সেই প্রস্তাবনাকে তারা বিবেচনা করে যদি মনে করে এটির পুরাকীর্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন, তখন সেটি তারা মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরসহ গেজেট আকারে প্রকাশ করবে।’

ঢাকা গেটের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ঠেলাঠেলি করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সাইফুল ইসলাম

মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী তোরণটি যে হারিয়ে যেতে বসেছে, সেটি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ আছে কি না, জানতে চাওয়া হয় রাখী রায়ের কাছে।

জবাবে পরিচালক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেট্রোরেলের কাজ শুরু করার আগে আমরা প্রকল্প কমিটির কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। যেখানে এই গেটটির সংরক্ষণ করে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সে চিঠির কোনো উত্তর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখনও পায়নি।’

নিজেদের ঘাড়ে দায়িত্ব নিতে নারাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত বটে। তবে তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের।’

গেটটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের মধ্যে নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন ঢাবি উপাচার্য।

তিনশ বছরের ইতিহাস বয়ে চলছে ঢাকা গেট। ছবি: সাইফুল ইসলাম

উপাচার্যের সঙ্গে একমত নয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। পরিচালক রাখী রায়ের দাবি, ‘এই গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভিতরে পড়ে। এটা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের। তারা কাজ শুরু করলে আমরা প্রয়োজনে সহায়তা করতে পারি। কিন্তু দায়দায়িত্ব একদমই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নয়।’

দুই কর্তৃপক্ষের এমন দায়সারা আচরণে হতাশা প্রকাশ করেন ঢাকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষায় সক্রিয় সংগঠন আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তৈমুর ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘ন্যূনতম একটা পরিবেশ তৈরি করে এই ঢাকা গেটকে রক্ষা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার এই স্থাপনাগুলো নিয়ে সবসময়ই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর একটি দায়সারা আচরণ করে। এতে এই স্থাপনাগুলো ভবিষ্যতে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনাগুলো রক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাখী রায় বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভিতরে কোনো স্থাপনা নিয়ে কিছু করে ফেলতে পারি না আমরা।’

ঐতিহ্যের ঢাকা গেট। ফাইল ছবি

এই গেটের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলের ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডয়লি মূল শহরের সঙ্গে রেসকোর্সকে সংযুক্ত করার জন্য ময়দানের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি সড়ক তৈরি করেন। এই সড়কের প্রবেশপথে তৈরি করা হয় দুটি স্তম্ভ। এরও বহু আগে ইসলাম খাঁর আমলে রমনা অঞ্চলে ছিল বাগে বাদশাহী নামে মোগল উদ্যান। বাগে বাদশাহীর প্রবেশপথে ছিল দুটি স্তম্ভ। পরে তা পুনর্নির্মাণ করে নামকরণ করা হয় ময়মনসিংহ গেট।’

আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তৈমুর ইসলাম বলেন, ‘মোগল আমলে তখন আওরঙ্গজেবের শাসন। আওরঙ্গজেব বাংলার সুবেদার করে পাঠান মীর জুমলাকে। বাংলার সুবেদার হওয়ার পরে তিনি এই গেট নির্মাণ করেন নগর নিরাপত্তা ব্যূহ হিসেবে।

হুমকির মুখে ইতিহাসের সাক্ষী ঢাকা গেট। ছবি: সাইফুল ইসলাম

‘তত্কালীন বাংলার রাজধানী ঢাকা প্রায়ই বহিরাগত দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হতো। ১৬৬৩ সালে মূলত মগ দস্যুদের থেকে ঢাকাকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ঢাকার উত্তর দিকে এই গেট নির্মাণ করেন।’

এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘ঢাকা কোষ’-এ বলা হয়েছে, মীর জুমলা ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে ও স্থলপথে শত্রুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এটি নির্মাণ করেছিলেন। মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর ঢাকার আগের জৌলুস হারাতে থাকে।

এ বিভাগের আরো খবর