সত্যেন সেনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তার দেখানো পথে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার, মৌলবাদমুক্ত, শোষণহীন, সাম্যবাদী সমাজ গঠনে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী-সংগ্রামী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-কৃষক নেতা সত্যেন সেনের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ অঙ্গীকার করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতারা।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত চলে এই অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সত্যেন সেনের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে এবং প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সীমিত পরিসরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য নিবাস দে।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম, সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, ইকবালুল হক খান ও কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিমল মজুমদার।
সভায় সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম বলেন, ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করা সত্যেন সেন আজীবন সত্য, সুন্দর, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই নানা ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ছিল তার সরব উপস্থিতি। এ ছাড়া কৃষক আন্দোলনেরও অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন সত্যেন সেন।
সভায় সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, অনেক বছরের লড়াই-সংগ্রাম ও ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ গণসাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উদীচী।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে যখন বাংলা ও এই ভূখণ্ডের আবহমান সংস্কৃতির ওপর নতুন করে আঘাত এসেছে, যখন ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে, যখন রাজনীতিতে আদর্শের কথা ভুলে গিয়ে নানামুখী আপস দেখা যাচ্ছে, তখন সত্যেন সেনের আদর্শ সঠিক পথ দেখাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যেন সেনের দেখানো পথে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ, মৌলবাদমুক্ত, সাম্যবাদী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আজীবন লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবে উদীচী।’
১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন সত্যেন সেন।
আলোচনা ছাড়াও অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।
তারা পরিবেশন করেন সত্যেন সেন রচিত ‘মানুষেরে ভালোবাসি এই কি মোর অপরাধ’, ‘দিনে যদি হোস রে কানা কী হবে আর রাত্রি হলে’ গান দুইটি। এ ছাড়াও পরিবেশন করেন গান ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’।
অনুষ্ঠানে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন মিজান সুমন।