ফুলেল শ্রদ্ধা আর সহকর্মী-সহযোদ্ধাদের চোখের পানিতে শেষ বিদায় নিলেন বরেণ্য নাট্যকার, নির্দেশক ও বাংলাদেশে পথ নাটকের পথিকৃৎ মান্নান হীরা।
রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে তার কফিনে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।
এরপর বেলা সাড়ে ১২টার মরদেহ নেয়া হয় সেগুনবাগিচা মসজিদে। সেখানে জানাজা শেষে দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করে মান্নান হীরার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স।
শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সহকর্মী ও সংস্কৃতিজনদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, নাটকের মাধ্যমে শোষণ মুক্তির বার্তা দিয়েছিলেন মান্নান হীরা, জারি রেখেছিলেন সমাজ প্রগতির লড়াই।
শ্রদ্ধা জানানোর পর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘এ রকম মানুষের চলে অপূরণীয় ক্ষতি, মেনে নেয়া কষ্টের। মান্নান হীরা প্রধানমন্ত্রীর খুব স্নেহের ছিলেন। তার চলে যাওয়াতে খুব ব্যথিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নাট্যকার মামুনুর রশিদ। বলেন, ‘মান্নান হীরা শুধু আমার সহযোদ্ধা নয়, আমার সন্তানের মতো, আমার বন্ধুর মতো।’
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রথম দিকে যে নাট্যকারেরা পথ দেখিয়েছেন তারা হলেন সৈয়দ শামসুল হক, আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশিদ, সেলিম আল দীন, এর পরের প্রজন্মের প্রধান নাট্যকার ছিলেন মান্নান হীরা।
‘মান্নান হীরা তার নাটকের মাধ্যমে অসাম্যের বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছেন। তিনি কোনো রকম আপস করেননি। সাহসের সঙ্গে সময়ের প্রয়োজনে যা বলার সেটা নাটকের মাধ্যমে শিল্পোত্তীর্ণভাবে বলে গেছেন।’
রাজধানীর কাকরাইলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান মান্নান হীরা।
তিনি মঞ্চনাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন। সরকারি অনুদানে নির্মাণ করেন ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’। ‘গরম ভাতের গল্প’ ও ‘৭১-এর রঙপেন্সিল’ নামে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও পরিচালনা করেছেন তিনি।
মান্নান হীরার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।