প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাকটিং অ্যান্ড ডিজাইনের ৩৮তম ব্যাচের সমাপনী প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চায়িত হলো গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিসের ‘আন্তিগোনে’।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটি মঞ্চায়িত হয়।
নাটকটির অনুবাদ করেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন নীল কামরুল।
নাকটটির গল্প এগিয়েছে আড়াই হাজার বছর আগে সত্যাগ্রহের পথ দেখানো ও ‘আইন অমান্য’র বিরুদ্ধে আন্দোলনের এক অনন্য মানবী আন্তিগোনেকে ঘিরে। ইডিপাসের কন্যা আন্তিগোনে। রাজশক্তির অন্যায় আদেশের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানো এক ‘অরাজনৈতিক’ শক্তির নাম আন্তিগোনে।
আন্তিগোনের ভাই পলিনিসেস। পলিনিসেসের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দায়ে মৃত্যুর পরে তার শেষকৃত্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্বেচ্ছাচারি রাজা ক্রেয়ন। পলিনিসেসের মৃতদেহ শেয়াল-শকুনের খাদ্য হোক; এই শাস্তি ধার্য করে রাজা ক্রেয়ন।
ভাইয়ের মৃতদেহের প্রতি এই অসম্মানকে প্রচণ্ড এক অন্যায় বলে মনে হয় আন্তিগোনের। তাই রাজ আদেশ অমান্য করে পলিনিসেসের মৃতদেহ সসম্মানে সমাধিস্থ করেন তিনি।
এই সংবাদ রাজার কানে পৌঁছালে আন্তিগোনেকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে রাজা ক্রেয়ন। ক্ষমাপ্রার্থনা করলে হয়তো প্রাণ-ভিক্ষা পেয়ে যেত আন্তিগোনে; কিন্তু না আন্তিগোনে তার আদর্শে অটল।
রাজা তাকে বন্দি রাখেন শহর থেকে দূরে এক নির্জন গুহায়। রাজপরিবারের সদস্যদের অনুরোধ এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপদেশে শেষ পর্যন্ত মত পরিবর্তন করেন রাজা ক্রেয়ন। কিন্তু ততক্ষণে কি অনেক দেরি হয়ে গেছে?
হল ভর্তি দর্শক, পিনপতন নীরবতা। আসলেই কী অনেক দেরি হয়ে গেছে! এ মুহুর্তে দর্শক সারিতেও সেই উৎকণ্ঠা। এভাবেই এগোতে থাকে ‘আন্তিগোনে’র কাহিনী।বেশিরভাগ দর্শকের মনে আবারও নাকটটির দ্বিতীয় কোনো প্রযোজনা দেখার ইচ্ছে নিয়ে শেষ হয় নাটক ‘আন্তিগোনে’।
নাটক দেখে হল থেকে বেরিয়েছেন একজন দর্শক জেসমিন আক্তার মৌলি। নাটকটি কেমন লাগলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ন্যায়ের পক্ষে আন্তিগোনে অসাধারণ এক প্রতিবাদী চরিত্র। নাটকটি দেখতে দেখতে আন্তিগোনের জন্য গলা ভার হয়ে উঠেছিল। এক কথায় নাটকটি অসাধারণ। সুযোগ পেলে এই নাটকটি আবারও দেখব।’
নির্দেশক নীল কামরুল বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকে ন্যায়প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত বলে মনে করা হয়। কিন্তু আইন নিজেই যদি অন্যায় হয়? ‘সার্বভৌমের আদেশ-ই আইন’ এটিই আইনের সবচেয়ে স্বীকৃত সংজ্ঞা। রাজনৈতিক পালাবদলে সার্বভৌম শক্তির পরিবর্তন হলে আইনও পরিবর্তন হয়।
কিন্তু ‘ন্যায়’তো রাজশক্তির মতো পরিবর্তনশীল নয়! ন্যায় এর সিংহাসন রাজ সিংহাসনের অনেক ওপরে! এই সহজ সত্যটাকে আন্তিগোনে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেছেন। আন্তিগোনে কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নয়। একজন সাধারণ নাগরিক হয়েও জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে এই বিশ্বাসকে অটল রাখেন আন্তিগোনে।
নির্দেশকের ভাষায়, মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহেরও আড়াই হাজার বছর আগে লেখা নাটকের একজন নারী চরিত্র ‘আইন অমান্য’র বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথ দেখিয়েছেন। একজন অরাজনৈতিক নারীর এই দৃপ্ত অবস্থান, তার সত্যনির্ভর সাহস তখনকার রাজশক্তি সহ্য করতে পারেনি।
প্রশ্ন রেখে নির্দেশক নীল কামরুল বলেন, আড়াই হাজার বছর পরে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও, কতটুকু বদলেছে আমাদের বাস্তবতা?
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন- শেগুফতা আহমেদ, নাজিফা আনজুম তুষি, মালিহা তানজিম পূর্ণি, সুপ্তি দাস চৈতি, সালমান আরাফাত, শাহানাজ পারভীন জোনাকি, লিহাজুল আহ্সান, মো. তুহিন, আলভী নোমান ও সাদমান অলীভ প্রমুখ।