বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আলালের ঘরের দুলাল’ রচয়িতার প্রয়াণ দিবস

  •    
  • ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ১৩:৫৯

ভাষাগত দিক থেকে ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সূচনা করে। এ উপন্যাসে প্রথমবারের মতো বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত গদ্যরীতি ভেঙে চলিত ভাষার প্রয়োগ করেন তিনি।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে পরিচিত ‘আলালের ঘরের দুলাল’-এ তিনি শুনিয়েছিলেন সমকালীন দেশীয় জীবনপটে মানুষের গল্প। সেখানে তিনি ধর্মের মানুষকে না খুঁজে চেয়েছেন মানুষের ধর্মকে খুঁজতে।

উপন্যাসের নায়ক মতিলালের আখ্যানে সমকালীন জীবনের বহুমাত্রিক সমস্যা আর মানবধর্ম থেকে বিচ্যুত হলে মানবজীবন যে বিপন্ন হয়, সে কথাই বলতে চেয়েছেন তিনি।

আজ সেই মানবতাবাদী ঔপন্যাসিক, লেখক ও সাংবাদিক প্যারীচাঁদ মিত্রের প্রয়াণ দিবস।

প্যারীচাঁদ মিত্রের জন্ম ১৮১৪ সালের ২২ জুলাই কলকাতায়। পারিবারিক পরিমণ্ডলে তার শিক্ষাজীবন শুরু। ১৮২৭ সালে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করেন।

কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে ১৮৩৬ সালে তার কর্মজীবন শুরু হয়।

সমাজ ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবে বাঙালির জাগরণে তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালি সমাজের হিতার্থে তিনি অনেক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।

প্যারীচাঁদ মিত্র বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এসবের মধ্যে রয়েছে জাস্টিস অফ পিস, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো, জেল ও কিশোর অপরাধীদের সংশোধন কেন্দ্রের পরিদর্শক, কলকাতা হাইকোর্টের গ্র্যান্ড জুরি, বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য প্রভৃতি।

তবে পরবর্তীকালে সাংবাদিকতা ও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্যই তিনি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন।

তিনি ‘দি ইংলিশম্যান’, ‘ইন্ডিয়ান ফিল্ড’, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া’ এবং ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’ পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন।

প্যারীচাঁদের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ‘আলালের ঘরের দুলাল’, ‘মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কি উপায়’, ‘রামারঞ্জিকা’, ‘কৃষিপাঠ’ ও ‘বামাতোষিণী’।

সাহিত্য অঙ্গনে প্যারীচাঁদের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব হিসেবে স্বীকৃত ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাসটি। ভাষাগত দিক থেকে এ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সূচনা করে। এ উপন্যাসে প্রথমবারের মতো বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত গদ্যরীতি ভেঙে চলিত ভাষার প্রয়োগ করেন তিনি।

সাধারণ মানুষের মুখে প্রচলিত ভাষাই উপন্যাসটির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সংস্কৃত সাহিত্য ও সংস্কৃত ভাষার শৃঙ্খল থেকে বাংলাকে মুক্ত করেছিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র।

বঙ্কিমচন্দ্র মন্তব্য করেছেন, সংস্কৃত সাহিত্য ও ভাষার শৃঙ্খল থেকে বাংলা সাহিত্যিক ভাষাকে প্রথম উদ্ধার করেন প্যারীচাঁদ মিত্র।

বঙ্কিম বলেন, “যে ভাষা সকল বাঙালির বোধগম্য এবং সকল বাঙালি কর্তৃক ব্যবহৃত, প্রথম তিনিই তাহা গ্রন্থ প্রণয়নে ব্যবহার করিলেন এবং তিনিই প্রথম ইংরেজি ও সংস্কৃতের ভান্ডারে পূর্বগামী লেখকদিগের উচ্ছিষ্টাবশেষের অনুসন্ধান করিয়া, স্বভাবের অনন্ত ভান্ডার হইতে আপনার রচনার উপাদান সংগ্রহ করিলেন। এক ‘আলালের ঘরের দুলাল’ নামক গ্রন্থে এই উভয় উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইল।”

“‘আলালের ঘরের দুলাল’ বাঙ্গালা ভাষায় চিরস্থায়ী ও চিরস্মরণীয় হইবে। উহার অপেক্ষা উৎকৃষ্ট গ্রন্থ তৎপরে কেহ প্রণীত করিয়া থাকিতে পারেন অথবা ভবিষ্যতে কেহ করিতে পারেন। কিন্তু ‘আলালের ঘরের দুলালে’র দ্বারা বাঙ্গালা সাহিত্যের যে উপকার হইয়াছে আর কোনো বাঙ্গালা গ্রন্থের দ্বারা সেরূপ হয় নাই এবং ভবিষ্যতে হইবে কি না সন্দেহ।”

১৮৮৩ সালেই ২৩ নভেম্বর মৃত্যু হয় লেখকের। মৃত্যুর এত বছর পরও বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে এখনো স্মরণীয় এক নাম প্যারীচাঁদ মিত্র।

এ বিভাগের আরো খবর