আত্মহত্যা করার আগে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বিশ্ব বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। তার এই বিকারগ্রস্ততার পেছনে ভূমিকা রেখেছিল মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।
গুরুত্বপূর্ণ নতুন এক গবেষণায় এই দাবি করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বাইপোলার ডিজর্ডারে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবনের শেষ তিন বছর ভ্যান গঘ সবচেয়ে বেশি সৃজনশীল ছিলেন। ওই সময়ে তিনি ৩০টির বেশি নিজের পোট্রেট আঁকেন। পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের সাতটি সিরিজ আঁকেন।
১৮৯০ সালের ২৯ জুলাই ৩৭ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন ডাচ এই চিত্রশিল্পী।
নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব খ্রোনিনখেনের ইমেরিটাস অধ্যাপক উইলেম নোলেন ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন।
তিনি বলেন, তরুণ বয়সেই ভ্যান গঘের মধ্যে বাইপোলার মুড ডিজর্ডার দেখা দেয়। এতে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তার মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস। সব মিলিয়ে পারসোনালিটি ডিজর্ডারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছান তিনি। তা ছাড়া অপুষ্টিতে ভুগছিলেন। তার মানসিক উদ্বেগ ক্রমেই বেড়ে চলেছিল। এর একপর্যায়ে তিনি নিজের একটি কান কেটে ফেলেন।
ওই কাটা কান এক যৌনকর্মীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ভ্যান গঘ। এরপর ১৮৮৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৮৮৯ সালের মে পর্যন্ত তাকে তিন দফা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। ১৮৮৯ সালের মে মাসেই আশ্রয় শিবিরে ওঠেন।
হাসপাতালের দিনগুলোতে নিজের মানসিক অবস্থার বিবরণ চিঠিতে লিখে গেছেন তিনি। তার ভাষায়, ‘অসহ্য হ্যালুসিনেশন’ হচ্ছিল, উদ্বেগ আর দুঃস্বপ্ন তাড়া করছিল তাকে। এই অবস্থাকে তিনি মানসিক অথবা স্নায়বিক জ্বর কিংবা উন্মাদগ্রস্ততা বলবেন নাকি অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করবেন ভেবে ঠিক করতে পারছিলেন না।
গবেষকেরা বলছেন, চিকিৎসা চলাকালে ভ্যান গঘকে মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হয়। ওই সময়েই তার মধ্যে মানসিক বিকারগ্রস্ততার লক্ষণ তীব্র আকার ধারণ করে। এর পরিণামে তিনি আত্মহত্যা করেন।
ভ্যান গঘ ৯০২টি চিঠি লিখেছিলেন। এর মধ্যে ৮২০টি চিঠি লিখেছিলেন তার ভাই থিও ও স্বজনদের।
গবেষকেরা বলছেন, অপুষ্টিতে ভোগা মানুষেরা যখন প্রচুর মদ্যপান করেন, তখন তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়; তাদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। মুশকিল হলো, মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হলে তাদের মধ্যে প্রলাপ বকাসহ নানা বিকারগ্রস্ততা দেখা দেয়।
আগের গবেষকদের কিছু দাবি উড়িয়ে দেয়া হয় নতুন গবেষণায়। ভ্যান গঘের স্মৃতিভ্রষ্টতায় আক্রান্ত হওয়া কিংবা সিফিলিসে ভোগা অথবা বাসার বাতি থেকে কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাসের কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল, এসব প্রচলিত দাবি উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে জীবনের শেষ দিনগুলোতে তার মৃগী রোগে আক্রান্ত হওয়ার যে প্রচলিত ধারণা আছে, তা অস্বীকার করেননি নেদারল্যান্ডসের গবেষকেরা।
নতুন গবেষণায় বলা হয়, এত অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও ভ্যান গঘ শুধু একজন মহান ও অত্যন্ত প্রভাবশালী চিত্রশিল্পীই ছিলেন না, মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন তুখোড় মেধাবী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সহনশীল ও অধ্যবসায়ী। তার ছিল অসীম ইচ্ছাশক্তি।