“হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেলে ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না।”
ছোটবেলায় ‘খিচুড়ি’ ছড়ার এ দুটি লাইন মুখে মুখে ছিল অনেকের। মজার এ ছড়াটির রচয়িতা ক্ষণজন্মা শিশুসাহিত্যিক ও ‘ননসেন্স ছড়া’র প্রবর্তক সুকুমার রায়।
১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে জন্ম সুকুমারের।
জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছেলে সুকুমার। এ ছড়াকারের ছেলে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বিএসসি করেন সুকুমার রায়। ১৯১১ সালে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন।
১৯১৩ সালে সুকুমার কলকাতায় ফিরে আসেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফ শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
সুকুমার ইংল্যান্ডে পড়াকালীন তার বাবা উপেন্দ্রকিশোর কলকাতায় উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন। সে সময়ে উপেন্দ্র ছোটদের জন্য ‘সন্দেশ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন।
সুকুমারের ইংল্যান্ড থেকে ফেরার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তার বাবার মৃত্যু হয়। এরপর ‘সন্দেশ’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সুকুমার। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়।
‘সন্দেশ’-এর সম্পাদক থাকাকালীন তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে।
সুকুমার রায়ের লেখা কবিতার বই ‘আবোল তাবোল’, গল্প ‘হ-য-ব-র-ল’, গল্প সংকলন ‘পাগলা দাশু’, এবং নাটক ‘চলচ্চিত্তচঞ্চরী’ বাংলায় সর্বযুগের সেরা ‘ননসেন্স’ ধরনের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ক্ষণজন্মা এই শিশুসাহিত্যিক।
মৃত্যুর এত বছর পরও সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিকদের একজন।