বদমেজাজী এক সম্পাদক একবার তরুণ হ্যারল্ড ইভানসকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘বাইসাইকেলে স্পোক কয়টা?’ উত্তরে জানা নেই বলেছিলেন ইভানস। সম্পাদক তখন ধমক দিয়ে বলেন, ‘গুনে বের কর! সাংবাদিকতায় কৌতূহল খুব জরুরি। কৌতূহল থাকা দরকার। প্রশ্ন করতে শেখো!’
এই ছিল প্রখ্যাত ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক ইভানসের প্রথম চাকরির অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে তাকে ম্যানচেস্টারের বাড়ি থেকে ১৪ মাইল দূরে সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যেতে হতো।
বদমেজাজী সম্পাদকের সেদিনের ধমক সারাজীবন মনে রাখেন ইভানস। সাহসিকতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সব বিষয়ে সবসময় কৌতূহল থাকা উচিত বলে মনে করতেন তিনি। বিশ্ব, রাজনীতি, লেখালেখিসহ দুনিয়ার তাবৎ বিষয় নিয়ে কৌতূহলী মন ছিল তার।
বয়স যখন আশির কোঠায়, ইভানস লিখলেন অসাধারণ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাই পেপার চেইজ’। সাংবাদিক জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ওই বইটি শুরু হয় সমুদ্র সৈকতে দেখা ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত সেনাদের নিয়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সের ডানকার্কের যুদ্ধে জার্মানির কাছে পরাজিত হয়ে ওই সেনারা ফিরছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে ইভানস বুঝলেন, ডানকার্কের যুদ্ধ নিয়ে জানা তথ্যের সঙ্গে যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়া সেনাদের গল্পের ফারাক অনেক। সেদিন তিনি জানলেন, সরকারি তথ্য সত্যের কাছে যেতে পারে না; ধারণা দিতে পারে হয়তো।
প্রতিরোধের মুখেও সত্য অনুসন্ধান করে যাওয়ার এ মানসিকতা স্যার হ্যারল্ড ইভানসকে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ব্রিটেনের সবচেয়ে নামী সাংবাদিকে পরিণত করে।
সংবাদপত্রের সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য। দ্য নরদার্ন ইকোর সম্পাদক থাকাকালীন একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইভানসের নৈতিক অবস্থান নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়।
১৯৫০ সালে ব্রিটেনে টিমোথি ইভান্স নামের এক তরুণকে ভুলবশত দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয়। সে সময় টিমোথির পক্ষ নিয়ে টানা প্রতিবেদন ছাপেন ইভানস। সর্বোচ্চ শাস্তির বিরুদ্ধেও লেখেন তিনি, যার পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় প্রবল জনমত গড়ে ওঠে।
দ্য সানডে টাইমস, দ্য উইক, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসির মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যমে কাজ করেন ইভানস। দ্য ডেইলি টাইমসে কর্মরত অবস্থায় আমেরিকার মিডিয়া মোঘল রুপার্ট মারডকের সঙ্গে মতবিরোধ হয় তার। পরে মারডক তাকে চাকরিচ্যুত করেন।
চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৯২ বছর বয়সে মৃত্যু হয় নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক ইভানসের।
সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্কার