দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থান করা লঘুচাপটি নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। রোববার রাতের মধ্যে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শনিবার এসব তথ্য জানিয়ে বলেছে, ইতোমধ্যে সমুদ্র বন্দরগুলোকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, “লঘুচাপটি আজ (শনিবার) দুপুর ১২টার দিকে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আগামীকাল (রোববার) রাতের মধ্যে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এটি ঘূর্ণিঝড় ‘আসানিতে’ রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার পরই কেবল বলা যাবে যে এটি কোন পথে এগুবে এবং কেমন মাত্রায় কোথায় আঘাত হানবে।”
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে শনিবার দুপুর ১২টায় একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়।
এটি শনিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪২৫ কিলোমিটার ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিন্মচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সে সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আন্দামান সাগরে লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এটি শনিবার রাতে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। রোববার এটি ঘূর্ণিঝড় আসানিতে পরিণত হতে পারে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা দেশের আবহাওয়া কেমন থাকবে তা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর দু-এক জায়গায় দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সচিবালয়ে ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ নিয়ে কথা বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের ওড়িশা, পশ্চিম বাংলা হয়ে সাতক্ষীরা জেলায় আঘাত হানতে পারে। এটি মোকাবিলায় এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
এবারের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘আসানি’ দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোনসংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণ করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদের জন্য আতঙ্কের নামান্তর। কয়েক বছর পরপরই সামুদ্রিক ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে এখানকার জনজীবন। ২০০৭ সালে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। এটি কেড়ে নেয় হাজার মানুষের প্রাণ।
ওই ধাক্কা সামলে না উঠতেই ২০০৯ সালে আঘাত হানে আইলা। প্রাণহানিসহ মানুষের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষি, মৎস্যসহ অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করে উঠতে না উঠতেই ২০২০ সালে আবার আঘাত হানে আম্ফান।