শ্রাবণ বলছে যাই যাই; শরৎ বলছে আসি আসি। প্রতিবছর এমন সময় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রাম বিল ঢেকে যায় পদ্ম ফুলে। এবার আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় এখনও ফোটেনি শতদল।
প্রতিবছর এমন সময় দক্ষিণগ্রাম বিলজুড়ে পদ্ম হাসে। এই ফুলের কারণে বিলটি পেয়েছে নতুন পরিচয়- পদ্মবিল। পদ্ম ফুটলে যেন পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয় জায়গাটি।
দক্ষিণগ্রামে তাকিয়ে অনেকে। কবে ফুটবে পদ্ম। নৌকায় চড়বে, আনন্দ করবে। ফুলের মাঝে ছবি তুলবে। তবে এবার মনে হয় তা হচ্ছে না। বিল ভরে পদ্ম ফোটার কোনো নমুনা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনাবৃষ্টির কারণে মরে গেছে পদ্মর বীজ। দু-চারটি পদ্ম যেন জানান দিচ্ছে প্রকৃতির বিরূপতা। বিলে পদ্ম কম, দর্শনার্থী কম। তাই মন খারাপ মৌসুমি মাঝিদের।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ গ্রাম পদ্মবিলে ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মবিলের খবরাখবর। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটা শুরু হয়। তবে শরতে বেশি পরিমাণে ফুল ফোটে। আর পদ্মের রূপ উপভোগ্য থাকে হেমন্ত পর্যন্ত।
এখন শ্রাবণের শেষ সময়। শেষ হতে যাচ্ছে বর্ষাকাল। এই সময়েও পর্যাপ্তসংখ্যক পদ্ম ফোটেনি। কেন এমন হলো, এ নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই।
স্থানীয়রা জানান, শতাধিক একরজুড়ে দক্ষিণগ্রামের যে পদ্মবিল রয়েছে, সেখানে বছরের আট মাস পানি থাকে। বৃষ্টির নতুন পানিতে পদ্মগাছের পাতা উঁকি দেয়। আর ভরা বর্ষা ও শ্রাবণে পদ্মের কলি পানি থেকে উঁকি দেয় আকাশে। ধীরে ধীরে বিলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে পদ্মের হাসি। তারপর ফুল থেকে আবার বীজ হয়। পানিতে গড়িয়ে পড়ে সেই বীজ।
চলতি বছর অনেক দেরিতে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে করে পুরো বিল শুকিয়ে মাটি ফেটে চৌঁচির হয়ে গিয়েছিল। শুকনো মাটিতে পদ্মের বীজ মরে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দক্ষিণগ্রামের কৃষক মঞ্জিল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমডা এই জলাত এক ফসল পাই। পুরা বছরই পানি থাকে। নৌকা লইয়া চলি। এবার মেঘ অইছে না। জলা হুগাইয়া গেছে। পানি না থাহনে ফুলডিও হুটছে না।’
পদ্মবিলে ঘুরতে আসা দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল জানান, গত তিন বছর নিয়ম করে বন্ধুদের নিয়ে পদ্মবিলে আসেন। দক্ষিণগ্রাম বিলে হাজার হাজার পদ্মফুল ফুটে। নীল, গোলাপী ও হলুদ পদ্মের হাসি ছড়িয়ে পড়ে। এ বছর বিলে পদ্ম ফোটেনি।
আসিফের আরেক বন্ধু নুসরাত ইভা বলেন, গত বছর প্রচুর পদ্ম ফুটেছিল। পদ্মবিলে ডাহুক, বক সারসের আনাগোনা ছিল। এ বছর অল্প কিছু পদ্ম ফুটেছে। এবার পদ্মবিলে সারস, বক ডাহুকের আনাগোনা নেই। তাই পদ্মবিলটিকে এখন মনে হয় এক বিরানভূমি।
বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন নেছা জানান, উদ্ভিদ বা গুল্মের ফুল ও ফলের পরিপক্বতা নির্ভর করে প্রকৃতির আচরণের ওপর। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা উদ্ভিদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে। এ বছর অনাবৃষ্টির কারণেই সঠিক সময়ে পদ্মের অঙ্কুরোদগম হয়নি। তবে এখনও সময় আছে। কারণ হেমন্ত পর্যন্ত পদ্ম ফুল ফোটে।