বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিলুপ্ত’ মনে করা বানর মিলল র‍্যাবের অভিযানে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৭ আগস্ট, ২০২১ ০৯:০০

বিলুপ্তপ্রায় বানরটির নাম ছোট লেজি বা খাটো লেজি। ইংরেজি নাম স্ট্যাম-টেইলড ম্যাকাকু। বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাকাকা আর্কটোডিস। এ প্রজাতির পূর্ণবয়স্ক বানরের মুখমণ্ডল সিঁদুরে লাল। ছোট লেজি বানরের দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার ও লেজ শূন্য দশমিক ৩ থেকে ৬ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু বন্য প্রাণী উদ্ধার করেছিল র‌্যাব। বুধবারের ওই অভিযানে একটি বানরও উদ্ধার করা হয়। তবে অন্য প্রাণীর সঙ্গে বানরটির ছবি ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসেন গবেষকরা।

তারা জানিয়েছেন, উদ্ধারের আগে ভাবা হতো বানরটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) রেড লিস্টেও বলা হয়েছে, এ প্রজাতির বানর সম্পর্কে তথ্য অপ্রতুল।

শ্রীমঙ্গলের বার্ড ক্লাব অ্যান্ড ব্রিডিং সেন্টার নামের প্রতিষ্ঠানে অভিযানে বানরটি পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, দেশে এদের অবস্থান এখনও আছে। তবে বানরটি ওই প্রতিষ্ঠানে কীভাবে এলো, তা এখনও জানতে পারেনি বন বিভাগ।

বানরটির সঙ্গে ওই দিন দুটি বাঁশ ভল্লুক ও হিমালয়ী গৃধিনী প্রজাতির একটি শকুনও উদ্ধার করা হয়। এসব প্রাণী বর্তমানে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেসকিউ সেন্টারে বন বিভাগের অধীনে রয়েছে।

বিলুপ্তপ্রায় বানরটির নাম ছোট লেজি বা খাটো লেজি। ইংরেজি নাম স্ট্যাম-টেইলড ম্যাকাকু। বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাকাকা আর্কটোডিস।

এ প্রজাতির পূর্ণবয়স্ক বানরের মুখমণ্ডল সিঁদুরে লাল। ছোট লেজি বানরের দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার ও লেজ শূন্য দশমিক ৩ থেকে ৬ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

পুরুষ বানরের ওজন প্রায় ১০ কেজি ও মেয়ে বানর ৭ দশমিক ৫ থেকে ৯ দশমিক ১ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা মিশ্র চিরহরিৎ ও পাহাড়ি বনে থাকে। এদের একটি দলে ১২ থেকে ৬৫টি বানর দেখা যায়। সর্বোচ্চ ১৯৫টি বানরের দলও পাওয়া গেছে।

এ প্রজাতির বানর মূলত ভারত, মিয়ানমার, চীন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সবশেষ ১৯৮৯ সালের পর আর এ বানরের আবাসের দেখা মেলেনি।

২০০৪ সালের দিকে একটি বানর পাওয়া গিয়েছিল বলে জানা গেলেও তা নিশ্চিত নয়।

বাংলাদেশে এ প্রজাতির বানর নিয়ে বিশেষ কোনো তথ্য না থাকায় আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা আইইউসিএন প্রকাশিত লাল তালিকায় ‘তথ্য অপ্রতুল’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বানরজাতীয় প্রাণীর গবেষক তানভীর আহমেদ জানান, ১৯৮৪ সালের একটি গবেষণায় জানা যায়, দেশের কক্সবাজার অঞ্চলে এই প্রজাতির বানর দেখা যেত। তবে ১৯৮৯ সালের পর দেশের কোথাও এ প্রজাতির বানরের স্থায়ী বসবাস জানা যায় না। প্রাণীটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যসংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় অবশ্য এ বানর দেখা গিয়েছিল। তবে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় বানরগুলো বাংলাদেশের না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান গবেষকরা।

তানভীর আহমেদ বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া বানরটির প্রকৃত উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। যদি বাংলাদেশের কোনো বন থেকে ধরা হয়ে থাকে, সেটা আশা জাগানিয়া। পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার হয়ে এসেছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।

‘আমাদের সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি বনে এ প্রজাতির বানরের টিকে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ আছে। তাই প্রাকৃতিকভাবে আমাদের কোনো বনে এ বানর টিকে আছে কি না, সেটা জানতে গবেষণা দরকার।’

শিকার ও বাসস্থান ধ্বংসের ফলে পৃথিবীব্যাপী ছোট লেজি বানর গত ৪০ বছরে প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন বন্য প্রাণী-সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মুনতাসির আকাশ জানান, স্ট্যাম-টেইল্ড ম্যাকাক বা খাটো লেজি বানর দেশের পাঁচ প্রজাতির বানরের মধ্যে দুর্লভ। অন্য বানরদের নিয়ে ছবি বা তথ্য-উপাত্ত কিছুটা থাকলেও এই প্রজাতি নিয়ে কোনো ধরনের সাম্প্রতিক তথ্য নেই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বানর বিশেষজ্ঞ মোস্তফা ফিরুজ জানান, এই বানরটি অন্য বানরের মতো প্রকাশ্যে আসে না। এরা নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে।

তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে যত জায়গায় বানর আছে, সব জায়গায় গবেষণার কাজে গিয়েছি। তবে কখনও ছোট লেজি বানর পাইনি।’

তিনি জানান, মৌলভীবাজারের পাথারিয়া বনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত থাকায় লাঠিটিলাসহ পাথারিয়া বনে এ প্রজাতির বানর থাকতে পারে। শ্রীমঙ্গল থেকে যে বানরটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি ওই এলাকা থেকে ধরা হতে পারে। এ জন্য বানরটি কোথা থেকে এসেছে, তার উৎস জানা বাংলাদেশের বন্য প্রাণী গবেষকদের জন্য খুব জরুরি।

আইইউসিএনের ‘অপ্রতুল ডাটার’ তালিকাভুক্ত প্রতিটি প্রাণী খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে সহজেই বোঝা যায়, এদের অবস্থান এত কম যে তথ্য নেই। তাই নতুন করে পাওয়া গেলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, বানরটি বর্তমানে লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে আছে। সারা দেশ থেকে প্রচুর গবেষক বানরটি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। লকডাউন উঠে গেলে তারা বানরটিকে দেখতে আসবেন বলেও জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা যেখান থেকে উদ্ধার করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক থাকেন বিদেশে। তাই আমরা এখনও জানতে পারিনি, আসলে তারা এই বানরটি কোথায় পেয়েছেন।

‘বানরটি কেমন জায়গায় থাকতে পছন্দ করে, কোথায় অবমুক্ত করলে তার জন্য ভালো, তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সব দিক দিয়ে ভালো একটি জায়গায় এটাকে অবমুক্ত করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর