বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘পবিত্রতা রক্ষায়’ পাখিরা নিরাশ্রয়

  •    
  • ৩ আগস্ট, ২০২১ ২১:৩৪

আখড়ার পুরোহিত গৌরাঙ্গ বৈষ্ণব গোসাই বলেন, ‘আমি মন্দির ও আখড়ার জন্য এসব করেছি। এর জন্য যদি আমাকে পুলিশে দেয়া হয়, তাও আমি মেনে নেব।’

সুনামগঞ্জের শাল্লায় প্রায় চার একর জমির ওপর আছে বৈরাগীবাড়ির নয়ন গোসাই আখড়া। শাল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চল মামুদনগর গ্রামের এই আখড়ার গাছে গাছে বাসা বেঁধেছে বক, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

আখড়ার গাছ কাটা নিয়ে এর গোসাইদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের হয়েছে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি।

গোসাইদের দাবি, পাখির মলমূত্রে তারা আখড়া পরিষ্কার রাখতে পারছেন না। সে কারণে ডালপালা ছেঁটে পাখি তাড়াতে চান। এদিকে স্থানীয় লোকজন চান, পাখিগুলো আশ্রয়হীন হয়ে না পড়ুক।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রতি দুই বছর পরপর আখড়ার গাছের ডালপালা কাটা হয়। এগুলো বিক্রি করা টাকা আখড়ার উন্নয়ন ও মাছ চাষে ব্যয় করা হয়। এবার তিন বছর পর সোমবার গাছের ডালপালা কাটা শুরু হলে পাখির বাসা ভেঙে ছানা ও ডিম মাটিতে পড়ে যায়। ৬০০ পাখি আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।

পাখিদের কিচিরমিচির বেড়ে গেলে স্থানীয়রা এসে বাধা দেন। একপর্যায়ে আখড়ার কর্মীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি শুরু হয়।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে কয়েক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেনকে এটি জানান। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-মুক্তাদির হোসেনকে গাছ কাটা বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।

মামুদনগর গ্রামের রাজ্জাক আহমদ নিউজবাংলাকে জানান, সোমবার আখড়ার কাজটি ভালো হয়নি। পাখির বাচ্চা মাটিতে পড়তে থাকলে কেউ কেউ কুড়িয়ে নিয়ে গেছে, কেউ টাকা দিয়ে কিনেও নিয়েছে। তারা বাধা দিলেও শোনা হয়নি।

কেউ কেউ কুড়িয়ে নিয়ে যায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়া পাখি

স্থানীয় আরেক ব্যক্তি জানান, ৫০০ থেকে ৬০০ পাখির বাসা তারা ভেঙেছে। গাছে বক আর পানকৌড়িই বেশি ছিল।

এ বিষয়ে আখড়ার পুরোহিত গৌরাঙ্গ বৈষ্ণব গোসাই বলেন, ‘আমি ধর্মের কাজ করি এখানে। মিথ্যা কিছু বলব না। আমি নিজেই এখানে পাখিদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। যেহেতু এটি পবিত্র স্থান, আমাদেরও সব সময় পবিত্র থাকতে হয়। পাখিদের বিষ্ঠা, পালক জায়গাটা অপবিত্র করছে।

‘আখড়ার পূর্ব দিকে বাতাস আসার যে জায়গা, সেখান দিয়ে বিষ্ঠা শুকিয়ে আখড়ার ভেতরে চলে আসে। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম পাখিগুলোকে এখান থেকে সরানোর কিন্তু যায়নি। বাধ্য হয়েই এই কাজ করতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মন্দির ও আখড়ার জন্য এসব করেছি। এর জন্য যদি আমাকে পুলিশে দেয়া হয়, তাও আমি মেনে নেব।

‘আমি মাত্র পাঁচটি গাছ কাটছি। তার মধ্যে দুইটায় পাখির বাসা ছিল, এগুলো ভেঙে গেছে। বিষয়টি অনেক বাড়িয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে।’

এ ঘটনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘পাখিরা ধর্মীয় স্থানে শান্তির খোঁজেই হয়তো বাসা বেঁধেছিল। তাদের সঙ্গে যা হয়েছে এটি অন্যায়। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর এলে আমরা গাছপালা কাটা বন্ধ রাখা নির্দেশ দিই। পাখিদের যেন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় সে জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

‘যদিও জায়গাটি ব্যক্তিগত, তবু আমরা নির্দেশনা দিয়েছি যেন আর গাছ না কাটা হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর