সুন্দরবন সুরক্ষায় ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বন বিভাগ। এতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ সমন্বিত বন ব্যবস্থাপনা কার্যকর হবে। তবে বিপন্ন সুন্দরবন বাঁচাতে পরিকল্পিত ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পুরো প্রকল্পের বাস্তবায়ন চায় বৃহত্তর খুলনা সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি।
বন বিভাগ জানায়, প্রকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানুষের আগ্রfসনে সংকটে পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বিষ দিয়ে মাছ শিকার, নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটন, বন্য প্রাণী নিধন, অবাধে গাছ কাটা ও বনের মধ্য দিয়ে ভারী নৌযান চলাচল করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণে সুন্দরবনে বেড়েছে পানি ও মাটির লবণাক্ততা। বাড়ছে পলি পড়ার হার ও নদীভাঙন। এতে কমছে বনের প্রধান সম্পদ সুন্দরী গাছ ও ঘন বনের পরিমাণ।
এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সুন্দরবন সুরক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেয়। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বন বিভাগ।
প্রকল্প সূত্র জানায়, অতি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিবেশ সুরক্ষা, পুনরুদ্ধার, স্থায়িত্ব প্রদান, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, বাঘ-মানুষের বিরোধ হ্রাস এবং বন ও বন্য প্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।
বিদ্যমান অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, উপযুক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি ও টহল জোরদার করা হবে।
সম্পাদের পরিমাণ নিরূপণ, সব বন্য প্রাণীর সংখ্যা, তাদের আবাস্থল, রোগবালাই ও রক্ষিত এলাকার বৈশিষ্ট্য ও জরিপ, জলজ সম্পদের পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাটি ও পানির লবণাক্ততা পরীক্ষাসংক্রান্ত জরিপ কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সম্পদের টেকসই সরবারহ নিশ্চিতকরণ ও পারমিট সিস্টেম ও পরিচয়পত্র অটোমেশনের মাধ্যমে সেবা সহজ করা হবে।এ ছাড়া ৩৬১ দশমিক ৪৫ হেক্টর চর বনায়ন, ২২২ দশমিক ২২ হেক্টর প্ল্যান্টিনেশন, ৫০ হেক্টর ব্লক বাগান সৃজনসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রোপণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের কাঠের চাহিদা পূরণ ও সবুজ বেষ্টনী তৈরির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা হবে।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে জানান, প্রকল্পটি যুগোপযোগী হয়েছে। যা আসলেই প্রয়োজন ছিল। প্রকল্পটির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সমন্বিত বন ব্যবস্থাপনা কার্যকর হবে।
তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক ও কমিউনিটি নেতাদের সম্পৃক্ত করা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক, (সুজন) খুলনার সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘সুন্দরবন সুরক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। এ ছাড়া সুন্দরবনের আশপাশে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা বন্ধ করতে হবে। ইকো-ট্যুরিজমের উন্নয়ন প্রয়োজন। তাহলেই প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবন সুরক্ষা পাবে।’
বৃহত্তর খুলনা সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ উজ্জামান বলেন, ‘আগে সুন্দরবন রক্ষায় বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। সেসব প্রকল্প প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনেনি। বর্তমান প্রকল্প গ্রহণ অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। প্রকল্পটি পরিকল্পিত, বিজ্ঞানভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রকল্প তদারকিতে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন সুরক্ষায় সুফল আনা সম্ভব।’