বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নতুন দুশ্চিন্তা ‘সাকার ফিশ’

  •    
  • ২৯ জুলাই, ২০২১ ২২:২৭

‘সাকার ফিশ উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় জলজ পোকামাকড় ও শেওলার পাশাপাশি ছোট মাছ এবং দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। এটি চিংড়ি, কালবাউশ, মাগুর, শিং মাছসহ ছোট শামুকজাতীয় শক্ত খোলের প্রাণী খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। এটি দ্রুত বংশবিস্তার করায় জলাশয়ের দেশীয় মাছগুলো এখন হুমকির মুখে পড়ছে।’

‘সাকার ফিশ’ অ্যাকুয়ারিয়ামের শোভাবর্ধক মাছ। আগ্রাসী এই বিদেশি মাছ বর্তমানে দেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। ধীরে ধীরে সব মাছ খেয়ে সাবাড় করে ফেলছে।

এ মাছ নিয়ে চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এটির ব্যাপক বিস্তার ঘটলে দেশীয় প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে পড়বে। ফলে দ্রুত এই মাছ নিধন করা জরুরি বলে মনে করছেন মৎস্যবিজ্ঞানীরা।

মাছটির আসল নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। তবে সাকার ফিশ নামেই বেশি পরিচিত।

মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। এর শরীর অনেক খসখসে ও ধারালো। ১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা এই মাছটির রং কালো, শরীরে হলুদ ছোপ।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) সূত্রে জানা যায়, অনেক জেলের জালে ইদানীং ‘সাকার ফিশ’ ধরা পড়ছে। এ ছাড়া উন্মুক্ত জলাশয়ে বাড়ছে এই মাছ।

মিঠাপানির এই মাছটির আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ। বিশেষত ব্রাজিলে অ্যামাজন অববাহিকায় এই মাছ প্রচুর পাওয়া যায়।

সম্প্রতি ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, যশোর, সিলেটের জলাশয়গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। ময়মনসিংহে অবস্থিত মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুকুরেও দেখা গেছে এই সাকার ফিশ।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ হল-সংলগ্ন লেক ও পাশের জলাশয়ে এ মাছের অনেক বেশি দেখা মিলছে। অনেকেই নদী বা জলাশয়ে মাছ ধরতে গিয়ে পাচ্ছেন ভয়ংকর এই সাকার ফিশ।

আরও জানা যায়, এই মাছ প্রচুর খাদ্য গ্রহণের ফলে জলাশয়ের অন্য মাছ খাদ্যসংকটে পড়ে। এ ছাড়া এই মাছের আঘাতে অন্য মাছের শরীরে ঘা ও পচন ধরে ইনফেকশন হয়ে যায়। আক্রান্ত মাছগুলো খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়। এতে মাছগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে সেগুলো মারা যায়। ফলে সাকার ফিশের উপদ্রবে অনেক মৎস্য খামারি পথে বসছেন।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জুলফিকার আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাকার ফিশ উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় জলজ পোকামাকড় ও শেওলার পাশাপাশি ছোট মাছ এবং দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। এটি চিংড়ি, কালবাউশ, মাগুর, শিং মাছসহ ছোট শামুকজাতীয় শক্ত খোলের প্রাণী খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। এটি দ্রুত বংশবিস্তার করায় জলাশয়ের দেশীয় মাছগুলো এখন হুমকির মুখে পড়ছে।’

ড. মো. জুলফিকার আলী আরও বলেন, ‘২০০৬ সালের দিকে এই মাছটির জীবনীশক্তি পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিই। এ জন্য একটি ড্রামে অল্প পরিমাণে পানি ঢেলে সেখানে ছোট একটি “সাকার ফিশ” ছেড়ে দিই। এভাবে খাদ্য না দিয়ে দেড় বছর রেখেছি। কোনো ধরনের খাদ্য ছাড়াই দেড় বছর মাছটি বেঁচে ছিল। এতে প্রমাণিত হয়, মাছটির জীবনীশক্তি অনেক বেশি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শাহা আলী নিউজবাংলাকে বলেন, অনেকেই এই মাছটি শুরুর দিকে অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে পালন করলেও পরবর্তী সময়ে এটি বড় হয়ে গেলে পুকুর বা ডোবায় ছেড়ে দেয়। সেখানে এটি নতুন পরিবেশে খাপ খেয়ে বংশবিস্তার শুরু করে। এ ছাড়া বন্যার সময় বিভিন্ন নদ-নদীর পানির সঙ্গে এই মাছটি বিভিন্ন পুকুরে চলে আসে এবং বংশবিস্তার করে।

এদের মধ্যে লাফানোর প্রবণতা থাকায় এক জলাশয় থেকে আরেক জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি খেতে সুস্বাদু না হওয়ায় সাধারণত কেউ খায় না এবং বাজারেও এর চাহিদা নেই।

এই মাছের বিস্তার রোধ সম্পর্কে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এটি জলাশয়ের একেবারে নিচের স্তরে থাকে। ফলে এটি খুঁজে খুঁজে সরিয়ে ফেলার কাজটি খুবই কঠিন। যে জলাশয়ে মাছটি থাকবে, সেটি একেবারে শুকিয়ে ফেলতে হবে। কোথাও মাছটি পাওয়া গেলেই সঙ্গে সঙ্গেই সেটি ধ্বংস করতে হবে। এ ছাড়া “সাকার ফিশ” ধরার পর শুকিয়ে অন্যান্য মাছ ও পশুপাখির খাবারও তৈরি করা যায়।’

এ বিভাগের আরো খবর