বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশে বিজ্ঞান গবেষণায় বন্য প্রাণীরা সত্যিই ‘গিনিপিগ’

  •    
  • ৬ জুলাই, ২০২১ ১১:৪২

গবেষণার জন্য প্রাণী সংগ্রহপদ্ধতি, এর সংরক্ষণ, নিরাপত্তা ও গবেষণা শেষে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে আইনে কিছুই বলা হয়নি। সংশ্লিষ্টরাও স্বীকার করছেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বন্য প্রাণীর ব্যবহার-সংক্রান্ত বিষয়টি আইনে পরিষ্কার হয়নি।

গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমীতে বানর ধরার অভিযোগে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঞ্ছিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশে প্রাণীর ওপর গবেষণার ক্ষেত্রে নিয়ম মানার সুস্পষ্ট আইনি বিধান থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই। বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-তে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বন্য প্রাণী ব্যবহারের অনুমোদন থাকলেও এসব প্রাণী রক্ষণাবেক্ষণ এবং গবেষণা শেষে অবমুক্ত করার বিষয়ে আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। এ ব্যাপারে পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই সংশ্লিষ্টদের কাছেও।

দেশের জীববৈচিত্র্য, বন ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য প্রণীত বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ১০(খ) ধারায় বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বন্য প্রাণী ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

তবে গবেষণার জন্য প্রাণী সংগ্রহপদ্ধতি, এর সংরক্ষণ, নিরাপত্তা ও গবেষণা শেষে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে এ আইনে কিছুই বলা হয়নি। এমনকি ১০(খ) ধারায় বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে লেখা হয়েছে ‘বৈজ্ঞানিক পবেষণা’।

বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য বন্য প্রাণীর ব্যবহার-সংক্রান্ত আর কোনো আইন বাংলাদেশে নেই।

বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল বিভাগের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ওয়াইল্ড অ্যাক্টে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে বন্য প্রাণী ব্যবহারের সুযোগ আছে। আর সেই আইনের আলোকেই গ্লোব বায়োটেক কোভিড-১৯-এর টিকার ট্রায়ালের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। আমরা ওই আইনের ধারা অনুযায়ী তাদের অনুমতি দিয়েছি।’

গবেষণা বা বৈজ্ঞানিক কাজে ব্যবহার করা প্রাণীর নিরাপত্তা ও তদারকির বিষয়ে প্রশ্ন করলে মিহির কুমার বলেন, আইনে ওইভাবে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা নেই। ওখানে বলা আছে, বৈজ্ঞানিক কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ আছে। তবে ট্রায়ালের পর তাদের একটা কোয়ারেন্টিনের সুযোগ রেখে আবার ছেড়ে দেয়া হয়।

গবেষণার জন্য নেয়া প্রাণীর ক্ষেত্রে বন বিভাগের কোনো নজরদারি থাকে কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো জবাব নেই মিহির কুমারের কাছে। তিনি বলেন, ‘আইনে যেটা আছে শুধু সেটাই। আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

আইনে এ বিষয়ে কিছু নেই, এমন তথ্য তুলে ধরলে মিহির কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সে ক্ষেত্রে তাদের (গবেষক) সঙ্গে যোগাযোগ করি। কমিউনিকেট করে থাকি। এবং প্রয়োজনে যোগাযোগ রাখব। এমন না তো যে এটা আর শেষ হবে না। বানরগুলো যখন রিলিজের সময় আসবে তখন তো সরাসরি তাদের ওখান থেকে রিলিজ করা হবে না। কোয়ারেন্টিনে রাখব এবং পরে সমন্বয় সাধন করে অবমুক্ত করব।’

পরীক্ষামূলক টিকা পাওয়ার পর অবমুক্ত বানরগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়েও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই বন বিভাগের।

মিহির কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বনে ছেড়ে দিলে তো বানর বা যেকোনো বন্য প্রাণী কোথায় থাকবে, সেটা তো বলা যাচ্ছে না। কারণ, তাদের গায়ে তো আমরা চিপ বা কোনো যন্ত্র বসাচ্ছি না। এটার সুযোগ নেই। তবে ছাড়ার আগে আমরা ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখি। সেখানে পরীক্ষা করা হয় যে, তারা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে কি না বা অবমুক্ত করার উপযুক্ত কি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের এক কর্মকর্তা অবশ্য স্বীকার করেন, গবেষণার জন্য সংগ্রহ করা প্রাণীর নিরাপত্তা ও তদারকির বিষয়ে এই প্রথম তারা কোনো সংবাদকর্মীর প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। এ ধরনের বিষয় এতদিন কর্তৃপক্ষের বিবেচনাতেই আসেনি।

গবেষণার কথা বলে সংগ্রহ করা প্রাণী পরে গবেষণায় ব্যবহার না করলে অথবা অনুমতি ছাড়া গবেষণার জন্য কেউ প্রাণী সংগ্রহ করলে, কী শাস্তি হতে পরে জানতে চাইলে মিহির কুমার বলেন, ‘অনুমতি না থাকলে সে ওয়াইল্ড লাইফ অ্যাক্টে যে শাস্তি থাকবে, সেটা পাবে।’

বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-তে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের দণ্ডের বিধান বিশ্লেষণ করেছে নিউজবাংলা। তবে এতে গবেষণার জন্য সংগ্রহ করার প্রাণীর স্বাভাবিক নিরাপত্তাহানির ক্ষেত্রে কোনো শাস্তির বিধান পাওয়া যায়নি।

তবে ৩৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি ধারা ৬, ১০, ১১ বা ১২ এর বিধান লংঘন করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

প্রাণীর ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণার নৈতিক অনুমতি (ইথিক্যাল পারমিশন) দিয়ে থাকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্স কাউন্সিল (বিএমআরসি)। তবে প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার বিষয়ে বিএমআরসিরও পরিষ্কার কোনো নির্দেশনা নেই।

সংস্থার পরিচালক ডা. রুহুল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যে গাইডলাইন রয়েছে, সেখানে এ বিষয়ে তেমন কিছুই উল্লেখ নেই। তবে এ বিষয়ে একটি নতুন নীতিমালা তৈরিতে আমরা কাজ করছি। আগামী বছর বিএমআরসির নীতিমালায় এই বিষয়টি যুক্ত করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর