সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এবার তিন জেলায় পাঁচ থেকে সাত হাজার তালগাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন থেকেই পর্যায়ক্রমে মানিকগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তালের চারা রোপণ করবেন তারা।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বজ্রপাত প্রতিরোধে বড় গাছ দরকার, এর মধ্যে একটা হলো তালগাছ। এতে অপেক্ষাকৃত বেশি বজ্র আঘাত করে। পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ গাছগুলো যদি আমরা রোপণ করি, তাহলে ১০-১৫ বছর পর সুফল পাব। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বজ্রপাতের প্রভাব কমাতে অন্য উঁচু গাছের সাথে এবার তালগাছ যুক্ত করলাম।
‘আমরা ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বন ও পরিবেশ উপকমিটির পক্ষ থেকে দেশের দু-তিনটি জেলা চিহ্নিত করেছি, যেখানে বজ্রপাত বেশি। সেই জেলাগুলোতে মানুষকে সচেতন করতে এবং উদ্বুদ্ধ করতে তালগাছ রোপণ করব।’
দেলোয়ার হোসেন জানান, দেশে সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত বছর ও এ বছর মিলিয়ে সারা দেশে ৩ কোটি গাছের চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে গত বছর প্রায় ১ কোটি চারা রোপণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ।
তালের চারা সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘তালের চারা পাওয়াটা কঠিন। কোনো নার্সারি বা বন বিভাগে কেউই এই চারা করে না। এ কারণে চারার প্রকট অভাব রয়েছে। আঁটি পাওয়া যায়। আমরা পাঁচ থেকে সাত হাজার তালের চারা সংগ্রহ করেছি।’
বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক প্রাণহানি বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে বজ্রপাতে প্রায় তিন হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
২০১১ সালের পর থেকে বজ্রপাতের পরিমাণও বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। বজ্রপাতে ২০১৫ সালে ৯৯ জন, ২০১৬ সালে ৩৫১ জন ও ২০১৭ সালে ২৬২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু ও চার শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার বলেন, ‘আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা, এটি যে নতুন কোনো সমস্যা তা নয়, তবে এটি এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সেটি হলো বজ্রপাত। এটি আগেও ছিল এখনও আছে। তবে আগে প্রাণহানি কম ছিল এখন বেশি।
‘বনভূমি আগে বেশি থাকায় সেখানেই বজ্র পড়ত, লোকালয়ে তেমন একটা পড়ত না। আবহাওয়া ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে আমাদের দেশে আরও বেশি। এগুলো বেশির ভাগ সময় উঁচু বৃক্ষে আঘাত হানে। ক্ষয়ক্ষতি গাছের ওপর দিয়েই যেত। আমরা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করেছি যার ফলে এটি ভূমিতে পড়ছে। এতে মানুষ বা প্রাণী ক্ষতির মুখে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ আমরা নির্ধারণ করেছি। আপাতত এই তিন জেলা দিয়ে শুরু করছি। পরবর্তীতে তালের চারা পাওয়া সাপেক্ষে আমরা অন্য জেলাগুলোতেও রোপণ করব। আমরা অন্যদেরও আহ্বান করব, সম্ভব হলে তালগাছ আর না হলে অন্য বড় যে গাছগুলো রয়েছে, সেগুলো রোপণ করুন।’
চারা রোপণের পর এগুলোর পরিচর্যার দায়িত্ব স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দেয়া হবে বলেও জানান দেলোয়ার। বলেন, ‘গাছ রোপণ করলেই হবে না, এগুলোকে পরিচর্যার ব্যাপার আছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যেহেতু একটি বড় দল। অনেক নেতা-কর্মী রয়েছেন। আমরা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে এগুলো রোপণ করব।
‘পাশপাশি সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করব। এগুলো আমরা বিনা মূল্যে মানুষকে বিতরণ করব। উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সচেতন করা।’