মোজাম্মেল আলম একজন ঠিকাদার। পেশাগত ব্যস্ততার মাঝে সুযোগ পেলেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাছের চারা বিতরণ করেন তিনি।
যেখানেই খালি জায়গা পান, সেখানেই গাছের চারা রোপণ করেন। এ জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে কুমিল্লা সদরের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় ঘোরেন তিনি। সঙ্গে রাখেন চারা, কোদাল-খন্তা।
এই ঠিকাদার এভাবে রোপণ করেছেন অন্তত ১০ হাজার গাছের চারা। বিতরণও করেছেন অন্তত ১০ হাজার চারা। বর্তমানে কুমিল্লা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কাঠবাদাম, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, খেজুর, মেহগনিসহ যেসব গাছ চোখে পড়ে তার বেশির ভাগই তার হাতে লাগানো।
ঠিকাদার মোজাম্মেল নিউজবাংলাকে জানান, ২০০৯-১০ সালে বৃক্ষরোপণ আন্দোলন শুরু করেন। প্রথমে তিনি বাসার ছাদে গড়ে তোলেন ছাদবাগান। ছাদে তিনি সবজি, ফুল ও ফলের অনেক গাছ লাগান। পরিবারের জন্য বিষমুক্ত ফল-সবজির জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বৃক্ষ নিয়ে কাজ করার সুবাদে গার্ডেন লাভার্স অব বাংলাদেশ, ভেজিটেবল জোন ও গ্রিন গার্ডেন সোসাইটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোজাম্মেল আলম জানান, কুমিল্লা ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে যে কাঠবাদামগাছগুলো আছে, সেগুলো তার লাগানো। পুলিশ লাইন প্রাইমারি স্কুলের সামনে কাঠবাদাম; নগরীর পার্কে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ও খেজুরগাছ এবং ঈদগাহের ভেতরে খোরমাখেজুরগাছ তিনি লাগান। রেলস্টেশনে স্টিলের ব্যারিকেডের মধ্যেও খোরমাখেজুর, সোনালু, লিচু, রাধাচূড়া এবং কৃষ্ণচূড়াগাছ লাগিয়েছেন তিনি।
নগরীর টমছম ব্রিজ মাজার রোড ও কলেজ রোডের কাঠবাদামগাছ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেতরের এবং আরবান হেলথের সামনের গাছগুলোও তার রোপণ করা।
মোজাম্মেল আরও জানান, তিনি শুধু জেলা সদরে নয়, বিভিন্ন উপজেলায়ও বৃক্ষের চারা নিয়ে ছুটে যান প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে, যারা গাছ ভালোবাসেন তাদের কাছে। এভাবে জেলার লাকসাম উপজেলার খিলা, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগর, দেবিদ্বার উপজেলার ফখরুল ইসলাম মুন্সী কলেজ, দেবিদ্বার সূর্যপুর গ্রামের কবরস্থানে বৃক্ষরোপণ করেছেন। বৃক্ষরোপণ করেছেন সদর উপজেলার বিবির বাজার ইমিগ্রেশনের সামনে, সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী কানন রেস্টহাউসের সামনেসহ সব ইউনিয়নেই।
মোজাম্মেল আলম প্রকৃতি ভালোবাসেন।
তিনি মনে করেন, প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর রূপ বৃক্ষ, যা থেকে সব সময় মানুষ উপকৃত হয়। সবাই মিলে গাছ লাগালে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাজাদা এমরান বলেন, মোজাম্মেল আলমের বৃক্ষরোপণ আন্দোলন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাস উপযোগী সুন্দর দেশ গড়তে তার মতো সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।