গরমের দাপট কমিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি ঝরছে দেশজুড়ে। তবে বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসাবে সেটি গ্রীষ্মের অনিয়মিত বর্ষণ, আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষাকালের বৃষ্টি ঝরল মঙ্গলবার। কারণ, এই দিনটিতেই শুরু আষাঢ়ের।
বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাজধানীতে বৃষ্টি ঝরেছে মৃদুমন্দ। তবে কালো মেঘের দাপট আকাশজুড়ে। কখনও কখনও সেই মেঘ সরিয়ে উঁকি দেয়া সূর্যে ঝলমলিয়ে উঠেছে নগরী। আগের কয়েক দিনের তুলনায় তফাত খুব একটা দেখা না গেলেও, আষাঢ়ের মন ভাসিয়ে দেয়া অনুভূতি দোলা দিয়েছে অনেককে। প্রকৃতিতে বেড়েছে সজীবতা, ফুটেছে বর্ষার ফুল কদম।
বর্ষার প্রথম দিনে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়। তবে এর দাপট ছিল কম। ফলে গুমোট ভাব দূর হয়নি নগরে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাগজে-কলমে আর বাংলার দিনপঞ্জিতে আষাঢ়-শ্রাবণ অর্থাৎ জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্ষাকাল বলা হয়। তবে আমাদের কাছে তা ভিন্ন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জুনের শুরুকেই বর্ষাকাল ধরে থাকি। এ সময় দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বিরাজ করে। আমাদের কাছে বর্ষাকাল মানে জুন থেকে সেই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দেশে তিন মাস শীতকাল থাকে, বাকি ৯ মাস বৃষ্টি আর গরম।’
আষাঢ়ের প্রথম দিনের সকালে কতটুকু বৃষ্টি হয়েছে জানতে চাইলে শাহীনুল বলেন, ‘ঢাকায় ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তারপর আরও কিছু সময় বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির পরিমাণ এখনও রেকর্ড হয়নি।’
বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ়ের প্রথম দিনের সকালে রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে।
এবার কেমন যাবে নগরের বর্ষা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোথাও কখনও নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টি হবে না। মেঘে ঢাকা থাকবে আকাশ। তবে মাঝে মাঝে একটু সোনালি রোদের দেখা পাওয়া যাবে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থেকে মাঝে মাঝে হালকা বা মাঝারি বর্ষণ হতে পারে।’
‘মৌসুমি বায়ু আসার আগে দেশে মে মাসে গড়ে ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও এবার হয়েছে ২০৩ মিলিমিটার। জুন মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রায় ৪৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে।’
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মতো এবারও কোথাও বর্ষাবরণ উৎসব ছিল না। ফলে অনেকটা নীরবেই ঋতু পরিবর্তন ঘটেছে বাংলা দিনপঞ্জিতে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম ঝাড়খন্ড ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।
ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।