বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বনাঞ্চলে সড়ক-সেতু, ঝুঁকিতে টেংরাগিরি

  •    
  • ১২ জুন, ২০২১ ১৪:১৭

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘পরিকল্পনায় গলদ’ থাকায় এ উদ্যোগ বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংরক্ষিত টেংরাগিরি ইকোপার্কের ভেতরে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে এলজিইডি। এ সড়ক নির্মাণ করতে বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছ কাটা পড়বে।

বরগুনা তালতলীর সোনাকাটা ইউনিয়নে সুন্দরবনের একাংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল বনভূমি। বন্য প্রাণীর এ অভয়ারণ্য টেংরাগিরি ইকোপার্ক নামে বেশি পরিচিত।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল টেংরাগিরিতে পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক ও সেতু।

তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘পরিকল্পনায় গলদ’ থাকায় এ উদ্যোগ বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারা জানান, সংরক্ষিত টেংরাগিরি ইকোপার্কের ভেতরে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে এলজিইডি। এ সড়ক নির্মাণ করতে বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছ কাটা পড়বে। এ ছাড়া বনের ভেতর যানবাহন ও মানুষের চলাচল অবাধ হলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

তালতলী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফকিরহাট ও টেংরাগিরির মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি সরু খাল পার হতে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। দর্শনার্থীরা যেন সহজে বনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন সে জন্য সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।

টেংরাগিরি বন বিভাগের কার্যালয়ের পাশ থেকে সেতু নির্মাণ ও সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বনের ভেতর ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পও হাতে নিয়েছে এলজিইডি। ৭৭ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি টাকারও বেশি।

২০২০ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ২০২১ সালের শুরুতে নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জুন মাস নাগাদ সেতুর ৬০ ভাগ কাজ হয়েছে।

বন বিভাগ তালতলী রেঞ্জের বন কর্মকতা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতু নির্মাণের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেনি এলজিইডি। এমনকি সেতুর ডিজাইন প্ল্যানও আমাদের সমন্বয়ে করা হয়নি। বনকে সুরক্ষিত রেখে চলাচলের জন্য সেতু প্রয়োজন। কিন্তু এলজিইডির ডিজাইন বনের ক্ষেত্রে জুতসই নয়।

‘নতুন নির্মাণ করা সেতুর জন্য অ্যাপ্রোচ সড়ক করতে হবে। আর সে সড়ক নির্মাণের জন্য বনের অনেক গাছ কাটা পড়বে। একইভাবে সেতু নির্মাণের ফলে বনের ভেতর যান চলাচল বাড়বে। এতে বনের জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করলে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সহজ হতো, আবার বনের কোনো ক্ষতি হতো না।’

উপকূলীয় পরিবেশ গবেষক এম জসীম উদ্দীন বলেন, ‘টেংরাগিরি বনটি বিচিত্র প্রাণীর অভয়ারণ্য। বনের ভেতর এমন অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ আমাদের অবাক করেছে। সেতুটির দক্ষিণ প্রান্তে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করতে প্রায় শতাধিক গাছ কেটে ফেলতে হবে, ভাঙতে হবে হরিণ ও বানরের বেষ্টনী।’

‘সেতুটি নির্মাণ হলে বনের ভেতর পাচারকারী চক্র অবাধে প্রবেশ করতে পারবে। গাছ কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যেতে পারবে। এমনিতেই বনটি নানা কারণে হুমকিতে, এর মধ্যে এরকম অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করে বনের ক্ষতিই করা হবে।’

স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘জীববৈচিত্র্যের বিশাল ভান্ডারের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার রক্ষাকবচ হিসেবেও ভূমিকা পালন করে টেংরাগিরি জঙ্গল। গত কয়েক বছরে দক্ষিণ উপকূলে যতগুলো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে, তার সবই বুক দিয়ে ঠেকিয়ে সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা করেছে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

‘এ ধরনের অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ করে টেংরাগিরি বনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া ছাড়া আর কিছু হবে না।’

তালতলী এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী আহম্মেদ আলী বলেন, ‘বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় আমরা এখানে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ থেকে ডিজাইন তৈরি, এমনকি অর্ধেকের বেশি কাজ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সবকিছুতেই আমাদের সঙ্গে ছিলেন বন বিভাগের লোকজন। এখন যদি তারা বলেন যে কিছুই জানেন না, তবে সেটি মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’

পটুয়াখালী-বরগুনা অঞ্চলের উপ-বন সংরক্ষক ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এলজিইডি আমাদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা কিংবা সমন্বয় করেনি। এ রকম কোনো দাবি যদি তারা করে থাকে তা সত্য নয়। জঙ্গলের ভেতরে কোনো অ্যাপ্রোচ সড়ক আমরা করতে দেব না।’

তালতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান রেজভি উল কবির বলেন, ‘আমরা সেতুর বিপক্ষে নই। তবে সংরক্ষিত বনের বৈশিষ্ট্যও ঠিক রাখতে হবে।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেতুর পরিকল্পনার সময় আমি বরগুনায় কর্মরত ছিলাম না। যেহেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, এখন আসলে তেমন কিছু করার নেই। তবে আমি বিষয়টি নিয়ে এলজিইডি ও বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করব। যাতে বনের ক্ষতি না হয়, আবার সেতুটিও যেন ঠিক থাকে।’

এ বিভাগের আরো খবর