পাঁচ বছর আগে নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে গাইবান্ধা সদরের পোড়ার চরের গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নেন আমিরন বেওয়া। বছর দুয়েক পর সেটিও বিলীন হয় ব্রহ্মপুত্রে। পরে তার আশ্রয় হয় শ্রীপুর ওয়াপদা বাঁধে।
তবে এবার বর্ষার আগেই ভাঙন শুরু হলে আতঙ্কে ঘর ভেঙে ওয়াপদা বাঁধের পশ্চিমে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে জেলার তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে।
প্রকট ভাঙনে এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে গাইবান্ধার তিন উপজেলার পাঁচ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও গাছপালা। হুমকিতে রয়েছে দোকানপাট, স্কুলসহ বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
তবে কয়েকটি এলাকায় ভাঙন ঠেকানোর কোনো পদক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
বিধবা আমিরন বেওয়া বলেন, ‘হামার তো সব শেষ। নদী ভাঙতি ভাঙতি ঘরত আসচি; কখন বেন ঘর নিয়ে যায়। নাই টেকা; নাই পয়সা। এখন পেটে বাঁচি, না জমিন কিনি।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর তাদের সব হারিয়ে ঠিকানা বদলাতে হয়। স্থায়ী পদক্ষেপ না নেয়ায় পাউবোর গাফিলতিতেই বাড়ছে নদীভাঙন।
স্থানীয়রা জানান, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নদীভাঙনে সদরের কামারজানি ইউনিয়নের কামারজানি বন্দর, শ্রীপুর, গোঘাট এলাকাসহ কুন্দেরপাড়া ও খারজানি চরের দেড় শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।
এ ছাড়া গৃহহীন হয়ে পড়েছে মোল্লার চর ইউনিয়নের মোল্লার চর, সাপের চর, হাতিমারা, বাতুলিয়া, চিতুলিয়ার ও দিগার গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার। ভাঙন-আতঙ্কে রয়েছেন কামারজানির পুঁটিমারি, হরিপুর এবং দত্তের খামার এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন চরের হাজারো মানুষ।
ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে ফুলছড়ির উড়িয়া ইউনিয়নের মধ্য উড়িয়া, গুণভরি ও কাতলামারি গ্রামের শত শত পরিবার।
জেলায় সবচেয়ে বেশি নদীভাঙন দেখা দিয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার এলাকায়। সেখানে তিন শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, আবাদি জমিসহ গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে পড়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বাজারের দোকানপাট।
ভিটেমাটি হারিয়ে এসব অসহায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ ওয়াপদা বাঁধসহ বিভিন্ন জায়গায়। আয়-রোজগারের পথ হারিয়ে তাদের দিন কাটছে চরম কষ্টে।
দিনমজুর কাওছার আলী বলেন, ‘আছনো গুচ্চ গ্রামত। সেটাও চলি গেছে নদীত। এখন বান্দত আশ্রয় নিছি। সেটিও ভাঙন, এবার বান্দও যাবি নদীত। তাইলে কোটে যায়া দাঁড়ামো?’
শ্রীপুরের মাদ্রাসা এলাকার হায়দার আলী বলেন, ‘বাঁধ ভাঙতিছি। কতগুলে ঘর চলি গেল। এক দিন বস্তা মারে, সাত দিন নাই। এংকা করি ভাঙন থামবে কও তোমরা। হামরা তো একন নিরূপায়, পেটত ভাত নাই, থাকার জাগাও নাই। ঘরবাড়ি নিয়া দৌড়ঝাপত পড়চি।’
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘বর্ষার আগে থেকেই নদীর পূর্বদিকের ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তবে পশ্চিম পাশের ভাঙন রোধে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই।’
কাশিমবাজার এলাকার ভাঙন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধার মানচিত্রে থাকলেও এলাকাটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড।’
জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, ‘ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়াসহ তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।’