প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি রোধ নিয়ে তেমন কিছু বরাদ্দ দেয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সবুজায়নের কথা বললেও পরিবেশ রক্ষায় বাজেট বরাদ্দ উপেক্ষা করা হয়েছে বলে করছে পরিবেশবাদীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে ‘জাতীয় বাজেট: স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ’-শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সভায় এ সব কথা উঠে আসে।
সভায় সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন আইইডিসিআর-এর সাবেক পরিচালক ড. এ এম জাকির হোসেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সংগঠটির পরিবেশ স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচি কমিটির সদস্য-সচিব গবেষক বিধান চন্দ্র পাল এমন তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পরিবশে-বান্ধব বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও আর্থিক বরাদ্দই যথেষ্ট নয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার কঠোর বাস্তবায়নের জন্য দরকার প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠীর পরিবেশবিরোধী অন্যায় কার্যকলাপ বন্ধ করা। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করতে হবে।
সবার জন্য টিকা নিশ্চিতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেটে ৮০ শতাংশ মানুষের টিকা নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে। এটা কত সময় মধ্যে দেয়া হবে, তা উল্লেখ্য নেই। যেহারে টিকা প্রয়োগ করছে, এইভাবে টিকাদান কর্মসূচি চলতে থাকলে আগামী ৫ বছর সময় লাগবে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে। টিকার সংগ্রহ বরাদ্দ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিশ্চিতে সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ‘করোনাকালে আমরা বঝুতে পেরেছি প্রকৃতিতে বিনিয়োগ হলো সঠিক বিনিয়োগ। এখন দেখার বিষয় আমার সঠিক বিনিয়োগ করছি কি না। এখন প্রকৃতিকে বিনিয়োগ করলে আমার সন্তানরা এর সুফল পাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া সেটা সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে খরচ করতে হবে।’
সীমান্তে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে প্রবেশ করায় সীমান্ত এলাকায় সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। তবে আরও ভয়ের বিষয় সীমান্ত এলাকায় যেভাবে সংক্রমণ বেড়েছে, সেভাবেই স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।’
তিনি আরও বলেন, গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোবারক হোসেন সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন, সেখানে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় ১০০ শতাংশ মাস্ক ব্যবহার করেছে, সেই সব এলাকায় করোনা সংক্রমণ অনেক কম গেছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।
অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ বলেন, পানি, নদী ও সুন্দরবন নিয়ে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে, এ উন্নয়ন প্রকল্পের কারণেই পরিবেশ ও জলুবায়ু ক্ষতি হচ্ছে। যে উন্নয়ন প্রকল্প পরিবেশ ক্ষতি করে, এসব প্রকল্প বন্ধ কারার দাবি তোলেন তিনি।
পানি ও বায়ুদূষণ বন্ধ এবং বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারকে তেমন কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে দেখছি না।’
তিনি বলেন, এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার থাকলেও এই খাতে সরকারের অবহেলার কারণে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের সার্বিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের জন্য ক্ষতিকর এমন প্রকল্পে যদি বাজেটে বরাদ্দ বাড়ে, তাহলে জনগণের এই বরাদ্দ জনগণের কাজে আসে না। দেশে কিছুসংখ্যাক মানুষের সুবিধার্থে বাজেট বরাদ্দ বাড়ছে। দেশে প্রতিবছর বায়ুদূষণের কারণে দুই লাখের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। বায়ুদুষণ প্রতিরোধে সরকারকে কাজ করতে হবে।