একের পর এক শোবিজ সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তাদের পৃষ্ঠপোষক ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে গুঞ্জন চলছে। গুঞ্জন চলছে তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার বিলাসবহুল গাড়িগুলোর মালিকানা নিয়ে। এসব গাড়ির প্রকৃত মালিক কারা, সে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
অভিযানে কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার কাছ থেকে দুটি, অভিনেত্রী পরীমনির কাছ থেকে একটি, নাট্য প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের কাছ থেকে দুটি এবং শরফুল হাসান বা মিশু হাসানের কাছ থেকে একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।
নিউজবাংলার অনুসন্ধান বলছে, পিয়াসার কাছ থেকে বিলাসবহুল দুটি গাড়ি জব্দ করা হলেও একটির মালিক তিনি। পরীমনির কাছ থেকে জব্দ করা গাড়িটি তার নামেই কেনা। তবে পরীমনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রাজের কাছ থেকে দুটি গাড়ি জব্দ করা হলেও একটির মালিক তিনি নন। আর মিশুর কাছ থেকে যে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে সেটির নম্বরপ্লেটই ভুয়া। এ-সংক্রান্ত নথি পেয়েছে নিউজবাংলা।
পিয়াসার মাজদা ও বিএমডব্লিউ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে পিয়াসার বাসা থেকে বিএমডব্লিউ এস ২০৯ মডেলের সিলভার রঙের এবং মাজদা এক্সেলা ব্র্যান্ডের নীল রঙের গাড়ি জব্দ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পিয়াসা বিলাসবহুল এই গাড়ি দুটি নিয়মিত ব্যবহার করতেন। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপ করতেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, মাজদা এক্সেলা ব্র্যান্ডের নীল রঙের গাড়িটির (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৪-৫০০৯) মালিক পিয়াসা নিজেই। তার নামেই গাড়িটির নিবন্ধন। বিআরটিএ থেকে এই নম্বরপ্লেট ইস্যু করা হয় ২০১৮ সালের ১৭ মে। গাড়িটির মালিকের নামের জায়গায় লেখা ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। ১৫০০ সিসির গাড়িটির নিবন্ধন ফরমে পিতা/স্বামীর ঘরে লেখা মাহবুব আলম। গাড়ির ধরনের স্থানে লেখা কার (স্যালুন)। গাড়িটি তৈরি ২০১৩ সালে।
বিএমডব্লিউ গাড়িটির মালিক নন পিয়াসা
ওই কর্মকর্তা জানান, তবে পিয়াসার কাছ থেকে বিএমডব্লিউ এস ২০৯ মডেলের সিলভার রঙের যে গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪) জব্দ করা হয়েছে, তার মালিক নন তিনি। গাড়িটির মালিকের জায়গায় ‘দি রিলায়েবল বিল্ডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। বিআরটিএ থেকে এই গাড়ির নম্বরপ্লেট ইস্যু করা হয় ২০১৫ সালের ১২ জুলাই। ১৯৯৫ সিসির এই গাড়ির কাগজে ভেহিক্যাল টাইপের জায়গায় লেখা কার (স্যালুন) আর ভেহিক্যাল ক্লাসের জায়গায় লেখা মোটর কার (লার্জ)।
দি রিলায়েবল বিল্ডার্সের মালিক কে?
পিয়াসার ব্যবহৃত বিএমডব্লিউ এস ২০৯ মডেলের সিলভার রঙের গাড়িটির নিবন্ধন দি রিলায়েবল বিল্ডার্সের নামে পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে নিউজবাংলা।
দি রিলায়েবল বিল্ডার্সের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দি রিলায়েবল বিল্ডার্স। এর মালিক শফিকুল আলম মিথুন। দি রিলায়েবল বিল্ডার্সের মতো আরও তিনটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আছে ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের। এগুলো হচ্ছে রিলায়েবল মেশিনারিজ, কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেড ও লিরিক গ্রুপ।
পরীমনির হ্যারিয়ার পরীমনির নামেই
র্যাবের অভিযানে পরীমনির কাছ থেকে জব্দ করা হয় সাদা রঙের একটি হ্যারিয়ার গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৯৬৫৩)।
হ্যারিয়ার গাড়িটির মালিক পরীমনি নিজেই
বিআরটিএ নথি বলছে, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৯৬৫৩ নম্বর প্লেটটি ইস্যু করা হয় ২০১৮ সালের ১৪ জুন। গাড়িটির মালিকের জায়গায় লেখা পরীমনি, এসি ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। গাড়িটি ২০০০ সিসির। তবে গাড়ির মালিকের বাবা বা স্বামীর জায়গায় কোনো তথ্য নেই। গাড়িটি ২০১৪ সালে তৈরি।
রাজের কাছে কার গাড়ি?
নজরুল ইসলাম রাজের বাসা থেকে দুটি গাড়ি জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর একটি হ্যারিয়ার (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৬৪০১); আরেকটি র্যাভ-৪ (ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-৪৬১৭)।
বিআরটিএর নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, হ্যারিয়ার গাড়িটির মালিক মো. নজরুল ইসলাম। গাড়িটি একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেনা। বিআরটিএ গাড়িটির নম্বরপ্লেট (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৬৪০১) ইস্যু করে ২০১৭ সালের ১৮ জুন। গাড়িটির সিসির জায়গায় লেখা ২০০০। ভেহিক্যাল টাইপ হার্ড জিপ। তবে মালিকের বাবা বা স্ত্রীর জায়গায় কোনো তথ্য নেই।
তবে রাজের বাসা থেকে জব্দকৃত ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-৪৬১৭ নম্বর গাড়িটির বিআরটিএর কাগজে মালিকের নামের জায়গায় রাজের নাম নেই। আছে মো. রাশিদুজ্জামান রাজু নামের এক ব্যক্তির নাম। এই রাজুকে শনাক্ত করতে পারেনি নিউজবাংলা।
এই গাড়ির মালিক নন রাজ
বিআরটিএর নথি অনুসারে, গাড়িটির নম্বর ইস্যু করা হয় ২০০০ সালের ১৫ মে। মালিকের বাবা বা স্ত্রীর নামের জায়গায় লেখা মো. জামাল উদ্দিন। গাড়িটি ১৫০০ সিসির। ভেহিক্যাল টাইপ কার (স্যালুন), ভেহিক্যাল ক্লাস মোটর কার (লার্জ)।
কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের ‘মাদক ও অনৈতিক কাজের’ সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার শরফুল হাসান বা মিশু হাসানের যে বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে, তার নম্বরপ্লেটটি ভুয়া। মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
আরও পড়ুন:মিশুর জব্দ ফেরারি গাড়ির নম্বর ভুয়া
গাড়িগুলোর মালিকানা সম্পর্কে জানতে চাইলে সিআইডির জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসামিদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা ছয়টি গাড়ির প্রকৃত মালিক কারা, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে কোন গাড়ির মালিক কে।’