অ্যাপটির নামই বাজি। অ্যাপটি স্মার্টফোনে নামিয়ে জিমেইল আইডি ও ফোন নম্বর দিয়ে আইডি খুললেই ঢোকা যায় অনলাইন ক্যাসিনো দুনিয়ায়। যে অ্যাকাউন্ট খোলা হলো, তাতে বিকাশ, নগদ বা রকেটের মাধ্যমে টাকা ঢুকিয়ে শুরু করা যায় বাজি খেলা বা জুয়া খেলা। বাজি ধরা যায় সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ‘যত ইচ্ছা’ তত টাকা।
অ্যাপটিতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই চলে জুয়া খেলা। অংশগ্রহণকারীরা যে যার মতো বিভিন্ন দানের ঘর বা আইকন বাজি ধরার পর ঘুরতে শুরু করে ক্যাসিনোর চাকা বা হুইল। হুইলের কাঁটা যে ঘরে থামে, সেই ঘরে যারা বাজি ধরেছিলেন তারা জিতে যান দান। টাকা পান ১০ গুণ, ২০ গুণ, ৪০ গুণ, ৪০০ গুণ, এমনকি ৪০০০ গুণ পর্যন্ত।
বাজির অনলাইন ক্যাসিনোয় জুয়া খেলতে খেলতে নিউজবাংলাকে এসব কথা বলছিলেন তিন কলেজছাত্র ইমরান, লাবিব ও হাসিবুর (ছদ্মনাম)। তারা বাড়ি থেকে সকালের খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করেই স্থানীয় বাজারের বিকাশের দোকান থেকে যে যার ‘সাধ্যমতো’ টাকা ভরেছেন। তারপর সেলুনের দোকানের বেঞ্চে মোবাইল হাতে বসে তাদের জুয়ার আসর।
অনলাইন এই ক্যাসিনোয় তাদের জুলা খেলা এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগোতে থাকে কথা। নিউজবাংলাকে তারা জানান, মোবাইলেই খেলা হচ্ছে। এখানে কোনো বাধা নেই, ধরা পড়ারও ভয় নেই। ইচ্ছামতো বাজি ধরা যায়। লাভ পাওয়া যায় ১০ থেকে ৪০০০ গুণ পর্যন্ত।
যেমন- ১০ টাকা বাজি ধরার পর ওই দানে যদি নির্দিষ্ট আইকনে ১০ গুণ বাঁধে, তাহলে নিজের ধরা ১০ টাকাসহ পাওয়া যাবে ১১০ টাকা। আবার ওই ১০ টাকায় যদি ৪০০০ গুণ বেঁধে যায়, তাহলে ১০ টাকায় পাওয়া যাবে ৪০ হাজার টাকা।
এই তিন কলেজছাত্রের ভাষ্য, বাজির এই অনলাইন জুয়া খুবই লোভনীয় আর আকর্ষণের খেলা। মোবাইল গেম, খেলাধুলা, পড়াশোনা, কাজকর্ম বাদ দিয়ে সব সময় এর মধ্যে পড়ে থাকছে অনেক শিক্ষার্থী। জুয়া খেলে কারও টাকা ফুরিয়ে গেলেও ঘরে ফেরার টান থাকে না।
জুয়ার নেশার ঘোরে বন্ধুবান্ধব বা অন্য কেউ খেললে তাদের দানের দিকে চেয়ে বসে থাকে। এতে সে কখনও মজা পায়, কখনও আফসোস করে। যার খেলা দেখছে, সে যখন হারে তখন হয়তো মজা পায়। কারণ সেও তো হারছে।
আবার পাশের জন বড় ‘দান মারলে’ আফসোস করে। তখন এদিক-ওদিক থেকে টাকা জোগাড় করে আবার খেলতে বসে, যদি বড় দান পাওয়া যায় সে আশায়।
অন্ধকারে বাজি ধরা: বাধলে বাজিমাত, না বাধলে কুপোকাত
বাজি অ্যাপে যুক্ত এই তিন বন্ধু মনে করেন, অনলাইন ক্যাসিনোর এই জুয়া খেলাটা অন্ধকারে খেলার মতো। বাঁধলে বাজিমাত, না বাঁধলে কুপোকাত। তারপরও অনেকেই সহজেই বড়লোক হওয়ার আশায় বাজি ধরে। যারা খেলে তারাও জানে না যে, কারা অ্যাপটা নিয়ন্ত্রণ করছে। টাকা কখনও আসছে, কখনও যাচ্ছে। হারলে মনে হচ্ছে, পরের দানেই পাব। জিতলে মনে হয়, আরেকবার ধরে দেখি, বাঁধতেও তো পারে। সব মিলিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে সময় চলে যায়।
বিকাশ, নগদ, রকেটের মাধ্যমে টাকা লোড
এ অনলাইন ক্যাসিনোয় অংশ নেয়া দুই স্কুলশিক্ষার্থীর সঙ্গেও কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তারা বলছে, এ বাজি খেলতে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা ভরতে হয়। সর্বোচ্চ যত ইচ্ছা টাকা ভরা যায়। যাদের অল্প পুঁজি, তারা দুয়েক হাজার টাকা ভরে ২০, ৫০ বা ১০০ টাকা করে একেক দানে বাজি ধরে। যার টাকার সমস্যা নেই সে ২০০-৫০০ করে একেক দানে বাজি ধরে।
একসময় দেখা যায়, কেউ লাভে আছে। দুই দিন পরই শোনা যাচ্ছে, তার সব শেষ। তখনই টাকা জোগাড় করে বিকাশের দোকানে হাজির হয় সে। টাকা ভরেই আবার খেলা শুরু করে। যারা পড়াশোনা করে, তারা বাড়ি থেকে বা আত্মীয়দের কাছ থেকে নানা ছুতোয় টাকা জোগাড় করে। আর যারা আয়-রোজগার করে বা বাবার দোকানে বসে, তারা সেখান থেকে টাকা ‘ম্যানেজ করে’ জুয়া খেলে।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও তরুণরাই বেশি বুঁদ বাজিতে
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারা দেশের প্রায় সব জেলা-উপজেলা শহরেই ছড়িয়েছে অনলাইন এই ক্যাসিনো। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামের যেসব শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে পড়ে, তারাও আসক্ত হয়ে পড়ছে বাজি অ্যাপে। কারণ করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ। কোনো কোনো এলাকায় অল্প শিক্ষিত তরুণ-যুবকরাও সময় পেলেই এ জুয়ায় মজছে। এ ক্ষেত্রে ভালো-খারাপ ছাত্র বা শ্রমিক-বেকার বলে কোনো কথা নেই। রাজমিস্ত্রি, চায়ের দোকানদার, মুদি দোকানদার, সেলুনকর্মীরাও খেলছে। আর যারা একবার বাজির এই জুয়া খেলেছে তারা খেলেই যাচ্ছে। যারা খেলা দেখছে, তারাও লোভে পড়ে কোনো না কোনো সময়ে খেলা শুরু করছে।
তবে বাজি অ্যাপটির মালিক কারা, বাংলাদেশ থেকে চালানো হচ্ছে, নাকি দেশের বাইরে থেকে দেশের ভেতরের এজেন্টদের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে, নিউজবাংলাকে সংশ্লিষ্ট কেউ তা নিশ্চিত করতে পারেননি। তারা বলেছেন, অন্যান্য ক্ষতিকর অ্যাপের মতো এই অ্যাপটির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল গেম ছেড়ে বাজির জুয়ায় মত্ত
ওই তিন কলেজছাত্র ও দুই স্কুলছাত্রের ভাষ্য, কয়েক মাস আগেও বাজির এই অনলাইন জুয়ার ব্যাপারে তাদের মতো ছাত্রদের ধারণা ছিল না। আগে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের গেম খেলত তারা। এখন আর মোবাইলে গেম খেলে না, বাজিতে টাকা ভরে জুয়া খেলে।
তাদের একজন বলে, ‘মোবাইলে গেম খেলার ছলে অনেক শিক্ষার্থীই এখন বাজিতে জুয়া খেলছে। কেউ দেখলে মনে করবে মোবাইলে গেম খেলছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন, যাদের হাতে মোবাইল আছে, হোক নদীর ধারে, বাঁশবাগানে, আমবাগানে, বাসায়, রাস্তার ধারের দোকানের বেঞ্চে, স্কুলের পুরোনো ভবনে কিংবা সেলুনের দোকানে- অধিকাংশই এই বাজি অ্যাপে জুয়া খেলছে।’
‘মোবাইলে খেলা যায় বলে সন্দেহের বাইরে থাকা যায়’
এ অনলাইন ক্যাসিনো খেলায় যুক্ত একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেখা গেল বাসায় কোনো একটা কাজ করছি বা বাবার দোকানে বসছি, তখন এটা খুলে রাখলেও কেউ বুঝতে পারে না। কারণ দেখতে গেমের মতোই। সবাই মনে করে, গেমই খেলছে।
‘কাজের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, মাঝেমধ্যে ক্যাসিনোর দানে টাকা ধরছি। বাঁধলে খুশি লাগছে, না বাঁধলে মন খারাপ লাগছে। কারণ কার টাকা বাঁধছে, কত টাকা বাঁধল, সব দেখা যায় দানের নিচের দিকে।’
‘বাজির স্পনসরশিপ বাড়াচ্ছে বিশ্বাস’
এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বলেন, ‘বাজির এই অনলাইন জুয়ার কথা শুনে প্রথমে কেমন যেন লাগত। ভয়ও লাগত, লোভও হতো। কিন্তু যখন দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় বাজি স্পনসরশিপ করছে, তখন মনে হলো সমস্যা নেই। খেলা যায়। মনে হতো, দুয়েক হাজার না হয় যাবে। আবার অনেক টাকারও তো মালিক হয়ে যেতে পারি, হাজার গুণ বাঁধলে।
‘এভাবে খেলা শুরু করে দিলাম। এখনও খেলছি। প্রথম দিকে ৮৬ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ ছিল। দুই হাজার টাকা ভরে ৮৬ হাজার বানাইছিলাম। কিন্তু সেগুলো হেরে গেছি। দুই দিন হলো আরও ৫ হাজার টাকা ভরেছি। এখন অল্প অল্প করে টাকা ধরি দানে। দেখি কত দূর যাওয়া যায়।’
টাকা তুলতে গেলেই আইডি ‘সাসপেন্ড’
বাজিতে জুয়া খেলা এক সেলুনকর্মী নিউজবাংলাকে জানান, জুয়ায় জেতার পর টাকা তুলতে গেলেই বাজির আইডি ‘সাসপেন্ড’ হয়ে যায়। এই আইডি উদ্ধার করে টাকা তুলতেও টাকা লাগে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ধরেন, এক দানে ২০ হাজার টাকা বাঁধল। বাঁধার পর টাকা তুলতে গেলেই আইডি সাসপেন্ড করে দিচ্ছে। তবে যারা ভালো বোঝে, তাদের কেউ কেউ আবার সাসপেন্ড আইডি ঠিক করে দেয়ার জন্য দোকান খুলেছে।
‘২০ হাজার টাকা তুলতে তাদেরই ৩-৪ হাজার টাকা দিতে হয়। এই টাকা দেয়ার পর তারা সমস্যার কথা শোনেন। তারপর তারা জিমেইল ভেরিফিকেশন আর কী কী করে যেন আইডি ফেরত আনতে পারছেন এবং পরে টাকা তোলা যাচ্ছে।’
জুয়ার গ্রাম সাফদারপুর!
সম্প্রতি ঝিনাইদহ জেলার সাফদারপুর গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, এখানকার অনেক পুরুষ, বিশেষ করে ছেলে শিক্ষার্থীরা এখন স্মার্টফোনে বাজি অ্যাপের মাধমে অনলাইনে ক্যাসিনো খেলছে। তা ছাড়া কারও আইডি সাসপেন্ড হলেও দূর-দূরান্ত থেকে এই গ্রামের যারা ‘ভালো জানেন’, তাদের কাছে আসে আইডি ফিরে পেতে। এসব কারণে সাফদারপুর পরিচিত হয়ে গেছে জুয়ার গ্রাম হিসেবে।
স্থানীয় লোকজন জানান, এই গ্রামে এমনও ঘটনা আছে, জুয়া খেলে হারতে হারতে বউয়ের পোষা ছাগল বিক্রি করেও জুয়া খেলেছে। সেই টাকাও খুইয়েছে জুয়ায়। কারণ যারা এই বাজি অ্যাপে জুয়া খেলছে, তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা শেষ হয়ে গেলে ‘মাথা কাজ করে না’। তাই অনেক সময় অনেকেই হাতের কাছে যা পায় তাই বিক্রি করে বাজিতে জুয়া খেলে।
‘থামানো যাচ্ছে না অনলাইন জুয়া’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, বর্তমানে যে অবস্থা তাতে কোনোভাবেই জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধরেন, অভিযান করে যারা জুয়া খেলে তাদের ধরলাম। এটা কিন্তু সমাধান না। আবার নতুন করে কোনো না কোনো মাধ্যমে জুয়া খেলা শুরু হবে। এখন যেমন শিক্ষার্থীরাও অনলাইন জুয়ায় জড়িয়েছে। কিন্তু যে অ্যাপ বা যে মাধ্যমগুলোতে জুয়া খেলছে, সেগুলো বন্ধ করার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। তাই জুয়া থামানো যাচ্ছে না।
‘জুয়ার এসব মাধ্যম বন্ধ করতে আইন সংশোধন প্রয়োজন। সেটা সংশোধনের প্রস্তাব করার পর এখন খসড়া পর্যায়ে আছে। সংশোধিত আইনটা পাস না হলে অ্যাপগুলো বা অনলাইন মাধ্যমগুলো বন্ধ করা সম্ভব না। সেটা না করা গেলে জুয়াও বন্ধ করা যাবে না।’
এ প্রসঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিগো, লাইকিতেও জুয়ার অপশন ছিল। আমরা সেগুলোতে অপারেশন করেছি। অবশেষে হাইকোর্ট সেগুলো বাংলাদেশে বন্ধের নিদেশ দিয়েছে।’
নতুন অ্যাপ বাজিতে জুয়া খেলা বন্ধ হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা জুয়ার ব্যাপারে হার্ডলাইনে আছি। এরই মধ্যে তো ভিগো, লাইকি, স্ট্রিমকার এগুলোর ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। তা ছাড়া নতুন যেসব অনলাইন জুয়া বা ক্যাসিনোর প্ল্যাটফর্ম আসছে, সেগুলোতে যারা জুয়া খেলা শুরু করেছে, আমরা সেসবের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাব।
‘নতুন যেসব জুয়ার অ্যাপ আসছে, সেগুলো তো সরাসরি আমরা বন্ধ করতে পারি না। তবে এসব ক্ষেত্রে অপারেশন করে আমরা দেখব এটার গ্রাভিটি কী? এটার পেছনে কারা? কারা এটা পরিচালনা করছে। কোন মাধ্যমে পরিচালনা করছে এবং এসব জুয়ায় যে ডিজিটাল মুদ্রা ঢোকানো হচ্ছে, সেসব টাকা কোন কোন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঢোকাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইন জুয়ায় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সরাসরি যোগসাজশ আছে কি না, সেগুলো তদন্তের মাধ্যমে তুলে আনা হবে। পরবর্তী সময়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম বাজির সঙ্গে মোবাইল ব্যংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো চুক্তি বা সম্পর্ক আছে কি না, সে ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিকাশের সঙ্গে।
বিকাশের হেড অব পিআর শামসুল হায়দার ডালিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিকাশের সঙ্গে বাজির কোনো চুক্তি নেই। কারণ বিকাশের যেসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জুয়া খেলার জন্য বাজিতে টাকা ঢোকানো হচ্ছে, সেগুলো বিকাশের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট না। যারা বাজি অ্যাপে জুয়া খেলছে, সবাই ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা ভরছে। এখন কোনো ব্যক্তি যদি তার অ্যাকাউন্ট কোনো অবৈধ কাজে ইনভলভ করে, তাহলে সেটার দায় তার নিজের।’
তিনি বলেন, ‘বিকাশের সঙ্গে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট করতে গেলে সব ধরনের তথ্য দিতে হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী তার টিন সার্টিফিকেট, ব্যবসার লাইসেন্স, ব্যাংক সলভেন্সিসহ নানা ধরনের তথ্য জমা দিতে হয়। তারপরে গিয়ে বিকাশের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে বৈধভাবে লেনলেন করতে পারে।
‘বিকাশ যখন কারও সঙ্গে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলে, সে ক্ষেত্রে প্রথমে দেখি যে তারা বৈধ ব্যবসায়ী কি না। তারপর এগোয়। কিন্তু এই যে বাজি, এটা তো অবৈধ। নিশ্চিতভাবে তাদের কোনো বৈধ লাইসেন্স থাকবে না। সুতরাং তাদের সঙ্গে বিকাশের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। এ ক্ষেত্রে যারা জুয়া খেলে, তারা তাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ভরে, সেটাতে বিকাশের কোনো দায় নেই। যে বা যারা করছে তাদের দায়।’
বিকাশের হেড অব পিআর ডালিম বলেন, ‘তবে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। সেটা হলো, কেউ যদি আমাদের জানায় বা রিপোর্ট করে, সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এবং এই বাজিতে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ভরার ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
বাজির অনলাইন ক্যাসিনোর কারবার সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অবশ্যই অ্যাকশন নেব। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও জানানো হবে। সে বিষয়ে তারা আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।
‘এ ধরনের ক্ষতিকর অ্যাপগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। সেগুলো যদি দেশি অ্যাপ হয়, তাহলে আমরাই বন্ধ করব। বিদেশ থেকে পরিচালিত হলে সেগুলো বন্ধে আমাদের টেকনিক্যাল সক্ষমতা থাকলে আমরাই বন্ধ করব। আর যদি তা না থাকে, তাহলে বিটিআরসির পক্ষ থেকে তাদের বন্ধ করার জন্য লিখব।’
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টা দেখার আহ্বান জানানো হবে বলে জানান বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র।