বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ই-অরেঞ্জ গ্রাহকদের ৪৫০ কোটি টাকার হদিস নেই

  •    
  • ২৪ আগস্ট, ২০২১ ১৩:৫৩

ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া টাকার একটি অংশ পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে গেলেও প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। দুই অ্যাকাউন্টে এখন সব মিলিয়ে জমা আছে ৩ কোটি ১২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৫ টাকা।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক হিসাবের লেনদেন পর্যালোচনা করে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার হদিস পাচ্ছেন না মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকে ই-অরেঞ্জের দুটি অ্যাকাউন্টের লেনদেন পর্যালোচনা করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের তেজগাঁও বিভাগ। গত এক বছরে সব মিলিয়ে ওই দুটি অ্যাকাউন্টে প্রায় এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকা জমা হয়েছে, তবে এর প্রায় পুরোটাই তুলে নেয়া হয়েছে।

তুলে নেয়া টাকার একটি অংশ পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে গেলেও প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। দুই অ্যাকাউন্টে এখন সব মিলিয়ে জমা আছে ৩ কোটি ১২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৫ টাকা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ই-অরেঞ্জের সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে ৬২০ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার ৭২৯ টাকা। আর এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি হিসাবে জমা পড়ে ৩৯১ কোটি ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৯ টাকা।

এই টাকার পুরোটাই গ্রাহকদের বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। অ্যাকাউন্ট দুটির স্টেটমেন্ট বলছে, জমা হওয়ার টাকা থেকে উত্তোলন করা ৬৫৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা গেছে চারটি বাইক বিক্রির প্রতিষ্ঠানে। এরা ই-অরেঞ্জের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ভেন্ডর। বাকি টাকা ই-অরেঞ্জের মালিকসহ নানান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন সময়ে তোলা হয়েছে।

ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক গ্রাহকের করা মামলার তদন্ত করছেন গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, গ্রাহকদের ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা তিনজন আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছি। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে আমরা শিগগিরই মামলাটির একটি সুরাহা করতে পাবর। সেই সঙ্গে কে কীভাবে কত টাকা আত্মসাৎ করল, সেটাও বের করতে পারব।’

টাকা আত্মসাৎ আড়াল করতেই ই-অরেঞ্জের পক্ষ থেকে মামলা

গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৭ আগস্ট গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জের সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান, চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ মালিক-পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তাহেরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।

ওই দিনই সোনিয়া মেহজাবিন ও মাসুকুর রহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বিচারক তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠান। এর পরদিন গুলশান এলাকা থেকে আমানউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের একটি দল। এই তিনজনই এখন রিমান্ডে আছেন।

তবে এই মামলার আগে ১১ আগস্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন আমানউল্লাহ চৌধুরী। সেই মামলায় ই-অরেঞ্জের সাবেক সিওও নাজমুল আলম রাসেল ও তার পরিবারের সদস্যসহ চারটি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আসামি করা হয়।

মামলায় আমানউল্লাহ অভিযোগ করেন, আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশ করে ই-অরেঞ্জের ৬৬৩ কোটি ৪৯ লাখ ৩৩১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্রাহকের ক্ষোভ অনুমান করেই নিজেদের দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন আমানউল্লাহ চৌধুরী।

ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট যাচাই করেছে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগ। এ ছাড়া সাবেক সিওও নাজমুল ইসলাম রাসেল ও মোটরসাইকেল বিক্রির চারটি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে দেখলাম, যে অঙ্কের টাকা আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে তা আসলে ঠিক নয়। কারণ ই-অরেঞ্জের অর্ডারের বিপরীতে গ্রাহকদের যে মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ভেন্ডরদের কাছ থেকে সেসব প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। শিগগিরই আমরা এ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেব।’

ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক স্টেটমেন্টের বরাত দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমানউল্লাহর করা মামলায় ৬৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভেন্ডরকে ৩৬ হাজার ২৮১টি মোটরসাইকেলের দাম বাবদ ৬৫৮ কোটি ৯১ লাখ ৯ হাজার ৩২ টাকা পরিশোধ করে ই-অরেঞ্জ। ভেন্ডররা এসব মোটরসাইকেল গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিয়েছে। আর বাকি চার কোটি টাকার মধ্যে সাবেক সিওও নাজমুল আলম রাসেলের স্ত্রী ফারিয়া সুবহার একটি কম্পিউটার এক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সাপ্লাইয়ার হিসেবে ই-অরেঞ্জের চুক্তি ছিল। ওই প্রতিষ্ঠানে ই-অরেঞ্জের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। এর মধ্যে রাসেল ও তার স্ত্রী এক কোটি ৪২ লাখ টাকার মতো প্রোডাক্ট সাপ্লাইয়ের বিল-ভাউচার আমাদের দেখাতে পেরেছেন।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই ১১ আগস্ট ই-অরেঞ্জ মামলাটি করেছিল। এতে ৬৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়, যাতে গ্রাহকরা মনে করেন, ভেন্ডররা টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে না।

এ বিভাগের আরো খবর