কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের ‘মাদক ও অনৈতিক কাজের’ সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার শরফুল হাসান বা মিশু হাসানের যে বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে তার নম্বরপ্লেটটি ভুয়া।
নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মিশুর জব্দ করা ফেরারি গাড়িতে যে নম্বরপ্লেট আছে, সেটির তথ্য তাদের সার্ভারেই নেই।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারা ও মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে কথিত মডেল পিয়াসা ও মৌকে আটক করে। এরপর ৩ আগস্ট রাতে র্যাবের অভিযানে আটক হন মিশু ও উজ্জ্বল জিসান। তাদের চারজনের বাসা থেকেই মাদক উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান মাহবুবুর রহমান জানান, জব্দ গাড়িগুলোর প্রকৃত মালিক কারা, তা বিআরটিএর কাছে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
মাদকের মামলা হলেও শুধু মাদক নিয়েই তদন্ত হচ্ছে না জানিয়ে সিআইডির প্রধান বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে যেসব অসঙ্গতি পাচ্ছি, সেগুলো ধরেও কাজ করছি। অবৈধ কোনো বিষয় পেলে সেটা কারা আনল, কীভাবে আনল, কে পয়সা দিল, সোর্স কোথায়- সবকিছুই তদন্তে চলে আসছে। আসামিদের সম্পদ ও আয়ের উৎসও যাচাই করা হচ্ছে।’
বিআরটিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘র্যাব যে বিলাসবহুল লাল রঙের একটি ফেরারি গাড়ি জব্দ করেছে, তার নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-১২-৯১৮০। কিন্তু আমাদের সার্ভারে এই নম্বরের অস্তিত্বই নেই।
‘আমাদের সার্ভারে যেকোনো নম্বর দিয়ে সার্চ দিলে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু ঢাকা মেট্রো-চ-১২-৯১৮০ এই নম্বর সার্চ দিয়ে কিছু পাওয়া যায়নি। শুধু ১২-৯১৮০ নম্বর সার্চ দিলে পাঁচটি নম্বর আসে। সেগুলো হলো কুমিল্লা মেট্রো-ল-১২-৯১৮০, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১২-৯১৮০, ঢাকা মেট্রো-হ-১২-৯১৮০, ঢাকা মেট্রো-খ-১২-৯১৮০, দিনাজপুর-হ-১২-৯১৮০।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, ঢাকা মেট্রো-চ-১২-৯১৮০ এই নম্বরটি একটি ভুয়া নম্বর। এই নম্বরের কোনো ডিজিটাল নম্বরপ্লেট আমাদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।’
র্যাবের দাবি, মিশু ও জিসান নারী মডেল ও টিভি কর্মীদের টাকার বিনিময়ে ‘অনৈতিক কাজে’ ব্যবহার করতেন। দেশের বাইরে দুবাই বা ইউরোপ-আমেরিকার প্রবাসীদের জন্য পার্টির আয়োজনও করতেন তারা।
মাদক মামলার এজাহারে বলা হয়, মিশুকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন মাদক পরিবহনের কাজে তার লাল রঙের ফেরারি গাড়িটি রাজধানীর গুলশান ২-এর ১১১ নম্বর রোডের অটোমিউজিয়াম লিমিটেড নামে একটি গাড়ির দোকান আছে। পরে সেখান থেকে একটি লাল রঙের ফেরারি গাড়ি জব্দ করে র্যাব, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-১২-৯১৮০।
অভিযোগ আছে, পিয়াসা ও মৌ চোরাইপথে গাড়ি আমদানি করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। এ কাজে তাদের মূল সহযোগী ছিলেন মিশু।