বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বয়ফ্রেন্ড’ নিয়ে বিবাদের জেরে ধরা পিয়াসা-মৌ!

  •    
  • ৯ আগস্ট, ২০২১ ২২:৩০

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নিউজবাংলাকে জানান, একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে একটি ফ্যাশন হাউসের এমডির স্ত্রীর ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক রয়েছে। এই দুজনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কথিত মডেল পিয়াসা-মৌসহ তাদের মতো অনেকেরই। গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে কিছুদিন আগে প্রভাবশালী এক নারীর সঙ্গে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা হয় পিয়াসার।

কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেপ্তারের নেপথ্যে রাজধানীর অভিজাত এলাকার ‘প্রভাবশালী’ নারীদের ‘বয়ফ্রেন্ডদের’ নিয়ে ব্ল্যাকমেইল ও তর্কাতর্কির তথ্য পেয়েছে নিউজবাংলা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অভিযানে পিয়াসা-মৌ গ্রেপ্তার হওয়ার অল্প কয়েক দিন আগে পার্টির জন্য সংরক্ষিত গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে তাদের সঙ্গে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা হয় ওই প্রভাবশালী নারীদের। এরই একপর্যায়ে তারা একে অপরের চুল ধরে টানাটানিও করেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, মৌ ও এক প্রভাবশালী নারীর কথোপকথনের অডিও রেকর্ড এবং একটি ফ্যাশন হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) স্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারা ও মোহাম্মদপুরে ডিবির অভিযানে আটক হন কথিত মডেল পিয়াসা ও মৌ। তাদের বিরুদ্ধে মামলায় বাসা থেকে ইয়াবা ও মদ উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। তাদের আটকের পরই ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, এই দুজনের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন ধনাঢ্য অনেক ব্যক্তি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তাদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন অনেক বড় ব্যবসায়ী, ঊর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যক্তি ও তাদের সন্তানেরা। তবে এখনও ভুক্তভোগীদের কেউ মামলা করেননি। কারণ হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই সমাজে সম্মানিত অবস্থানে আছেন। তাদের অনেকে মৌখিক অভিযোগ করলেও ‘সম্মানহানির আশঙ্কায়’ মামলা করছেন না। জনসমক্ষে পরিচয় প্রকাশ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন তারা।

কথিত মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ। গত ১ আগস্ট মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মৌয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে মদ, ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা এবং ওই প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নিউজবাংলাকে জানান, একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে একটি ফ্যাশন হাউসের এমডির স্ত্রীর ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক রয়েছে। এই দুজনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কথিত মডেল পিয়াসা-মৌসহ তাদের মতো অনেকেরই।

বিভিন্ন উপলক্ষে তারা বিভিন্ন বাসায় ও ক্লাবে পার্টি করতেন। সেখানে মদপানের পাশাপাশি মডেলদের দিয়ে নাচের আয়োজন থাকত। এসব পার্টিতে দেশের বড় বড় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা থাকতেন। পিয়াসা-মৌ সিন্ডিকেট এসব পার্টিতে বড় বড় ব্যবসায়ীকে টার্গেট করতেন। একান্তে সময় কাটাতেন এবং গোপনে সেই একান্ত সময়ের ছবি মোবাইলে বা অন্য কোনো মাধ্যমে ধারণ করতেন। পরে ওই ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্য বা স্ত্রীদের কাছে ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে অর্থসহ নানা ধরনের অনৈতিক সুবিধা আদায় করতেন।

এসব পার্টিতে অংশগ্রহণকারী এক নারীর দুটি অডিও রেকর্ড পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়ার ৪-৫ দিন আগে এক শিল্পপতির ছেলের গুলশানের পার্টির জন্য একটি ফ্ল্যাটে জড়ো হন পিয়াসা-মৌসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর স্ত্রী।

সেখানে উপস্থিত নারীরা তাদের ‘বয়ফ্রেন্ডদের’ প্রভাব-ক্ষমতা নিয়ে গল্প করছিলেন। গল্পের একপর্যায়ে পিয়াসার সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয় ফ্যাশন হাউসটির এমডির স্ত্রীর। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চুলাচুলিও হয়।

ফ্যাশন হাউসটির ওই কর্মকর্তার স্ত্রী এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করেন বেসরকারি ওই ব্যাংকের এমডির কাছে। তিনি বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে প্রতিকার চান। এরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজরদারিতে পড়েন পিয়াসা ও মৌ। তাদের বিভিন্ন কৃতকর্মের তথ্য পাওয়ার পরপরই অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ১ আগস্ট ডিবি পুলিশের অভিযানের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মৌ দাবি করেন, একটি ফ্যাশন হাউসের এমডির স্ত্রীর সঙ্গে পিয়াসার ঝগড়ার জের ধরেই এ অভিযান। অভিযানের সময়ের একটি ভিডিও ক্লিপ পেয়েছে নিউজবাংলা। সেখানেও মৌ একই দাবি করেছেন।

মৌয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউসটির এমডির স্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার ১৩-১৪ বছর আগে বিয়ে হয়। তার সঙ্গে ভালোই আছি। আমরা গুলশান-বনানীর অনেক সোসাইটি মেইনটেইন করি। আমাদের নামে আজ পর্যন্ত কোনো বাজে রেকর্ড ছড়ায়নি। কোনো স্ক্যান্ডাল বের হয়নি।

‘পিয়াসা কে? ওকে নিয়ে আমার নতুন করে কিছু বলার নাই। আর মৌ হচ্ছে সেই মেয়ে, যার চারটা বিয়ে হয়েছে, সবাই জানে। আর পিয়াসার বিষয়টা আপনারাই জানেন। আপন জুয়েলার্স বলেন, এশিয়ান টিভি বলেন।’

গ্রেপ্তারের পর একাধিক মামলায় রিমান্ডে আছেন মডেল পিয়াসা। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা

এই নারী আরও বলেন, ‘মৌ অনেক মানুষের সঙ্গে ফাইজলামি করে কারও কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিছে, কারও কাছ থেকে নিয়েছে এক কোটি টাকা। তাদের কাছ থেকেই এটা জেনেছি। এ জন্যই ওরা ভয় পেয়েছিল। যে কারণে আমার নামটা অভিযানের সময় বলেছে। ওরা ভাবছে কাজটা আমি করেছি।

‘কিন্তু বিষয়টা তো এত সোজা না। ওদের ব্ল্যাকমেইলগুলো যখন আমি বুঝতে পেরেছি, তখন ওনাদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। হয়তো এটা ঠিক যে, আমরা খারাপ পারসনদের চুজ করে কিছুটা ফ্রেন্ড রেখেছি, এটা আমরা স্বীকার করি।’

তিনি বলেন, ‘আমি তো ওদের অনেক কিছুই জেনে গেছি। ওদের বাসায় মাঝেমধ্যেই প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে কিছু মডেল নিয়ে নাচগান করানো হতো। মদটদও থাকত। এগুলো তো কমপালসরি। এসব ঘটনায় আমি ওদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলাম। কারণ এগুলো কেন করবে? তাই না?’

পিয়াসার সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখেন, তার বাসায় (শিল্পপতির ছেলে) অনেকেই যাই। তাই আমার নাম মেনশন না করাই বেটার। দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে যাই। সেখানে পিয়াসা আমার সঙ্গে অনেক বাড়াবাড়ি করেছে।

‘এ ছাড়া তাকে তো আমার স্বামী পছন্দই করে না। ওপেনলি ও যখন, ওই যে... ভাইয়ারা ... পিয়াসাকে বনানী ক্লাবে আনত, তখন তো আমার স্বামী ডিরেক্টলি বলেছে, এসব মেয়ে ক্লাবে কী করে আসে? কারণ ওরা তো মেম্বার না। মেম্বারশিপ ছাড়া ওখানে ঢুকত। রং-তামাশা করত। আর পিয়াসার তো এই রকম একটা ছবিও আছে। আমি জানি না, আপনাদের কাছে আছে নাকি। ....ভাইয়ার সঙ্গে কিস করছে- এ রকম একটা ছবি আছে।’

এই নারী আরও বলেন, ‘এমনিতেই এগুলো বলতাম না। কারণ... ভাইয়াদের সঙ্গে, কী বলব আর? এগুলো বললে, আকাশের দিকে থুতু মারলে নিজের গায়ে পড়ে। মানে আমার জামাইরা তো তাদের ফ্রেন্ডস। সত্যি কথা বলতে একটু দ্বিধাই লাগে। তো আমি যখন এগুলা বুঝতে পেরেছি, ওর (পিয়াসা) এগুলার কারবার। মৌরা বিভিন্ন পার্টিটার্টিতে মডেলদের নাচতে দিত, আর বড় বড় যেগুলা বিগশট আছে, বড় বড় ব্যবসায়ী আছে, ওদের সঙ্গে এই রকম করত।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এইগুলার প্রতিবাদ করছি। ...ভাইয়ার বউয়ের সঙ্গে আমার ভালো খাতির। ....ভাইয়ার বউয়ের সঙ্গে আমাদের সবার ভালো খাতির। যখন দেখছে বউদেরকে, সবগুলাকে আমিই বলতাম গিয়ে, তো ক্ষেপবে না! আর তার মধ্যে পিয়াসা তো একজনের রক্ষিতা হিসেবেই আছে, তাকে সবাই চেনেন।

‘যার (পিয়াসা) নিজের বেতন ৫০ হাজার টাকা তিনি রাখেন বডিগার্ড! গত তিন-চার মাস ধরে রীতিমতো ওদের সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছে। আজকে একটা সত্যি কথা বলি, দুই দিন আগেও পিয়াসার বাসায় একটা প্রোগ্রাম হয়েছে, সেখানে কারা কারা ছিলেন তাদের একটা ছবি আছে। শুধু আমরাই যাই নাই। কারণ আমরা সবাই জানি ওদের ঘরে কী হয়। এসব নিয়ে কেউ তো বলে না। সবাই চুপ থাকে। এ জন্যই ওরা সবাই আমাদের বিরুদ্ধে লেগেছে। এমডির সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে এসব কথা বলছে।’

পিয়াসা-মৌয়ের মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিআইডির জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারা, কীভাবে পিয়াসা-মৌ চক্রের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন- সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোন, ছবি ও অডিও-ভিডিও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর