কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও অভিনেত্রী পরীমনিসহ শো বিজসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন গত কয়েক দিনে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তাদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছে অনেক বড় ব্যবসায়ী, ঊর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যক্তি ও তাদের সন্তানেরা। তবে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের কেউ আনুষ্ঠানিক মামলা করেননি।
এর কারণ হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই সমাজে সম্মানিত অবস্থানে আছেন। তাদের অনেকে মৌখিক অভিযোগ করলেও ‘সম্মানহানির আশংকায়’ মামলা করছেন না। জনসমক্ষে পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন তারা।
গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারা ও মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় কথিত মডেল পিয়াসা ও মৌকে। তাদের আটকের পরই ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, এই দুজনের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন ধনাঢ্য অনেক ব্যক্তি।
এরপর ৩ আগস্ট রাতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় শরফুল হাসান বা মিশু হাসান ও উজ্জ্বল জিসানকে। র্যাবের দাবি, এই দুজন নারী মডেল ও টিভি কর্মীদের টাকার বিনিময়ে ‘অনৈতিক কাজে’ ব্যবহার করতেন। দেশের বাইরে দুবাই বা ইউরোপ-আমেরিকার প্রবাসীদের জন্য পার্টির আয়োজনও করতেন তারা।
মিশুর দেয়া তথ্যেই ৪ আগস্ট বিকেলে র্যাব অভিযান চালায় চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায়। সেখান থেকে বিদেশি মদ, আইস ও এলএসডিসহ আটক হন পরীমনি ও কথিত মামা আশরাফুল ইসলাম দিপু। এ ছাড়া, একই দিন রাত ৮টার দিকে চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাসায় র্যাবের আরেকটি অভিযানে মাদক ও পর্নোগ্রাফির সরঞ্জামসহ আটক হন রাজ ও তার সহযোগী সবুজ আলী।
সবশেষ ৬ আগস্ট গুলশান এলাকা থেকে ইয়াবাসহ আটক হন পরীমনির সহযোগী জোনায়েদ করিম জিমি।
১ আগস্ট শুরু হওয়া অভিযানের পর একের পর এক শো-বিজ সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তাদের পৃষ্ঠপোষক ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার ব্যক্তিদের নিয়েও গুঞ্জন চলছে।
কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি মামলা হয়েছে, পাঠানো হয়েছে রিমান্ডে। ছবি: নিউজবাংলাগোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া কয়েক জনের কাছ থেকে তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কিছু নাম পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতেই শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।’
তবে ভুক্তভোগীদের পরিচয়ের বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলছেন না গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ভুক্তভোগীরা মানসম্মানের ভয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ করছেন না। তবে কারা এসব মডেলদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন এবং অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন সেসব তদন্তে উঠে আসছে।
ইতোমধ্যে পিয়াসা, পরীমনি কাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়েছে তাদের নাম বেরিয়ে আসছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী একাধিক সদস্যেরও নামও আছে এ তালিকায়।
গ্রেপ্তারের পর পরীমনিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চার দিনের পুলিশি রিমান্ডে পাঠায় আদালত। ছবি: নিউজবাংলাবোট ক্লাবের ঘটনায় পরীমনির করা মামলা তদারকি করতে গিয়ে সম্পর্কে জড়ান ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার গোলাম সাকলায়েন শিথিল। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর শনিবার তাকে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে সরিয়ে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক জন ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে পিয়াসাসহ কয়েক মডেলের ঘনিষ্ঠতার তথ্য পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন এবং বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণে যাওয়ার তথ্যও রয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকের একজন এমডির অভিযোগের ভিত্তিতেই মডেল পিয়াসাকে আটক করার খবর বেরিয়েছে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে। তবে এ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলছে, পিয়াসা-পরীমনির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তদন্তের স্বার্থে জড়িত যে কাউকেই ডাকতে পারি। তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এসব অপরাধে পেছনে যাদেরকে পাওয়া যাবে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’