বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মগবাজার বিস্ফোরণ: উৎস চোরাই গ্যাসলাইন?

  •    
  • ৩০ জুন, ২০২১ ২১:০১

তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, মগবাজারে বিস্ফোরণের মূল উৎস মিথেন গ্যাস। কিন্তু এই মিথেন গ্যাস সেখানে জমা হলো কীভাবে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেছেন, তারা ঘটনাস্থলে চোরাই গ্যাসলাইনের অস্তিত্ব পেয়েছেন।

গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে মগবাজারের তিনতলা ভবনের নিচতলার কোনো কক্ষে মিথেন গ্যাস জমা হয়েছিল। সেই গ্যাস কোনো দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এসে মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই মনে করছেন একাধিক কর্মকর্তা।

বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টা পরও ভবনটির নিচতলায় ১২ শতাংশ মিথেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর এত বিপুল পরিমাণের মিথেন শুধু গ্যাসের পাইপলাইন থেকেই পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে তিতাস গ্যাসের তদন্ত দল বলছে, ওই ভবনে বৈধ-অবৈধ কোনো গ্যাসের সংযোগই পাওয়া যায়নি। তাহলে এত মিথেনের উৎস কী?

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেছেন, তারা ঘটনাস্থলে একটি চোরাই গ্যাসলাইনের অস্তিত্ব পেয়েছেন।

১২ শতাংশ মিথেন

ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর কারণ উদঘাটনে একাধিক সংস্থার তদন্তকারীরা আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করেন মগবাজারের তিনতলা ভবনটির নিচতলায়।

মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা নিচতলার কক্ষে ১২ শতাংশ মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছেন, যা পাইপলাইনের প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি সেপটিক ট্যাংকেও জমা হয়।

সমপরিমাণ মিথেন পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটিও। তবে মিথেনের সঙ্গে আরও দুটি গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা নিউজবাংলাকে জানান তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী পরিচালক ছালেহ উদ্দিন। এ দুটি গ্যাস হলো হাইড্রোজেন সালফাইড ও ফসজিন।

সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে যেসব গ্যাস জমা হয়, তার একটি হাইড্রোজেন সালফাইড। আর ফ্রিজ ও এসির কম্প্রেশারে ফসজিন গ্যাস পাওয়া যায়।

ওই ভবনের সেপটিক ট্যাংক দোকানের ভেতরে থাকায় আর বিস্ফোরণের কারণে এসি ফ্রিজ ধ্বংস হওয়ায় এই দুই ধরনের গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করছেন তদন্তকারী একাধিক কর্মকর্তা।

মিথেনের ভয়াবহতা

মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও এ ঘটনা তদন্তে গঠিত পুলিশের কমিটির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, মিথেন গ্যাসের কারণেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। তিনি বলেন, কোনো বদ্ধ জায়গার বাতাসে ১৫ শতাংশ মিথেন গ্যাস জমা হলে তা এমন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

একই তথ্য দিলেন বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সুলতানা রাজিয়া।

তিনি বলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর ১২ শতাংশ মিথেন পাওয়া মানে ঘটনার সময় তার পরিমাণ আরো বেশি ছিল। কারণ বিস্ফোরণের পর সব দেয়াল ভেঙে গ্যাস বেরিয়ে যাওয়ার অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছে।

যে মাত্রায় মিথেন পাওয়া গেছে, তাতে এর চেয়েও বড় বিস্ফোরণ ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে জানান সুলতানা রাজিয়া। ১০ শতাংশ মিথেনের প্রভাবে বিশ্বের অনেক দেশেই আরও বড় বিস্ফোরণের নজির রয়েছে।

কোথা থেকে এলো মিথেন

কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সুলতানা রাজিয়া জানান, মিথেন হলো প্রাকৃতিক গ্যাস, যার অস্তিত্ব পাওয়া যায় বাসাবাড়ির রান্নার গ্যাসে। সেপটিক ট্যাংকের আবর্জনা থেকেও এই গ্যাস পাওয়া যায়। তবে এত বিপুল পরিমাণ মিথেন সেপটিক ট্যাংক থেকে জমা হবে না বলে মনে করেন তিনি।

সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘পাইপলাইনে ধারাবাহিক সরবরাহ ছাড়া এত মিথেনের উপস্থিতি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেখানে গ্যাসের লাইন থাকতে পারে। যেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে গ্যাস লিক করে ভবনের কোনো কক্ষে অল্প সময়ে জমা হয়ে থাকতে পারে। তা ছাড়া ভবনের সেপটিক ট্যাংকও অক্ষত আছে। তাই সেপটিক ট্যাংক এই গ্যাসের উৎস হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।’

চোরাই গ্যাসলাইন?

ঘটনার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কয়েক দফা ভবনটিতে গ্যাসলাইন-সংযোগ খোঁজার চেষ্টা করেছে তিতাস গ্যাসের তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তাদের কাছে ভবনের গ্যাসলাইন সম্পর্কে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যান তারা।

ঘটনার পরদিন তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে কয়েকটি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করা হয়, ওই ভবেনে বৈধ বা অবৈধ কোনো গ্যাসের লাইনের সংযোগ নেই।

ভবনের গ্যাস-সংযোগের বিষয়ে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আসাদুজ্জামানকেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, তদন্তে শেষ না হলে কিছু জানা যাবে না।

অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়ার মতো একই কথা জানালেন ফায়ার সার্ভিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সুয়ারেজ লাইন ও সেপটিক ট্যাংক থেকে এত মিথেন গ্যাস আসা সম্ভব না। এটা অবশ্যই গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে হয়েছে।

কিন্তু গ্যাসের লাইন কোথায়, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্রথমে ধ্বংসস্তূপের কারণে চোখের আড়ালে থাকলেও অনুসন্ধানে ভবনে একটি চোরাই গ্যাসের লাইন আবিষ্কার করা গেছে। তবে সেটি দিয়ে গ্যাসের প্রবাহ ছিল কি না, তা তারা যাচাই করে দেখছেন।

ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা জানান, ভবনটি প্রথমে আবাসিক ছিল। তখন মালিক হয়তো কারসাজি করে ভবনের পেছন থেকে মাটির নিচে দিয়ে এই চোরাই গ্যাসলাইন টেনেছিলেন। তারপর এটি যখন বাণিজ্যিক ভবন করে ফেলা হয়, তখন থেকে আর গ্যাস-সংযোগের প্রয়োজন পড়েনি। এমনও হতে পারে, লাইনটি তারা ম্যানুয়ালি বন্ধ করলেও এই চোরাই লাইন দিয়ে লিকেজ হয়ে গ্যাস নিচতলার কোথাও জমা হয়েছিল।

ওই কর্মকর্তার কথার সূত্র ধরে ভবনের নিচতলার মূল ফটকের ভেতরে একটি গ্যাসলাইন খুঁজে পাওয়া যায়। যার একটি অংশ প্রক্রিয়াজাত মাংসের চেইনশপ বেঙ্গল মিটের দেয়াল ঘেঁষে ভবনটির ওপরে চলে গেছে আর অপর অংশ ভবনের মাটির নিচে চলে গেছে। বিস্ফোরণের আঘাতে লাইনটি দুই ভাগ হয়ে আছে। তবে সেটি থেকে কোনো ধরনের গ্যাস লিকেজ হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় ভবনের দ্বিতীয় তলার ইলেকট্রনিকস পণ্যের গোডাউনের এক কর্মচারীর সঙ্গে। তার নাম মো. তামজীদ। তিনি গোডাউনের মালামাল আনা-নেয়ার কাজ করেন।

তামজীদ বলেন, ‘আমি রেগুলার এখানে মাল আনা-নেয়া করি। ঘটনার দিন দুপুর থেকে এই লাইন দিয়ে গ্যাসের গন্ধ পাইছি। অনেক গন্ধ ছিল।’

এ বিভাগের আরো খবর